ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অল্পস্বল্প বিক্রি শুরু - নতুন বইয়ের খোঁজখবর, আড্ডাবাজি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অল্পস্বল্প বিক্রি শুরু - নতুন বইয়ের খোঁজখবর, আড্ডাবাজি

মোরসালিন মিজান ॥ বরাবরের মতোই হয়েছে শুরুটা। অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম ক’দিন মূলত প্রকাশকদের। সোমবারও তাই দেখা গেল। এদিন অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিজেদের বইয়ের চমৎকার প্রদর্শনী করেছে। স্টলে পুরনো বইয়ের পাশাপাশি এসেছে চকচকে মলাটের নতুন বই। উপন্যাস গল্প কবিতা গবেষণা গ্রন্থ সবই পাওয়া যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ নতুন প্রকাশনা আলোর মুখ দেখেনি এখনও। পাঠক তাই আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক স্টলের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়াচ্ছেন, কিছু সময় কাটাচ্ছেন অন্য স্টলের সামনে। আর বই দেখা মানে তো আর কেনাকাটা নয়। বিকেলে মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বেশ জমজমাট। প্রায় সব কটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল চালু হয়েছে। বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে বাংলা একাডেমির স্টল। এই স্টলের সামনে অধিকাংশ সময় ছোট বড় ভিড় লেগেছিল। যার যা পছন্দ, কিনছিলেন। অন্য স্টলগুলোতেও অল্পস্বল্প বিক্রি চোখে পড়েছে। লিটলম্যাগ কর্ণারে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি স্টল প্রস্তুত। সৃজনশীল প্রকাশনা নিয়ে হাজির হয়েছেন সম্ভাবনাময় লেখক ও কবিরা। সাহিত্যের ছোট কাগজ হাতে নিয়ে দেখছিলেন কেউ কেউ। বাকিরা ব্যস্ত ছিলেন আড্ডায়। চত্বরের মাঝখানটা দখলে নিয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। এখান থেকে চলছে লাইভ সম্প্রচার। ফলে জায়গাটায় বাড়তি ভিড়। নজরুল মঞ্চেও শুরু হয়ে গেছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা। দ্বিতীয় দিন বেশ কিছু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এখানে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মূল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানেও বিকেল হতেই আসতে শুরু করেন কৌতূহলী পাঠক। বই দেখার পাশাপাশি চলেছে বিক্রিও। অল্পস্বল্প বিক্রি দিয়ে শুরু করেছেন প্রকাশকরা। তবে নাম ধাম আছে- এমন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে যথারীতি দেখা গেল ভিড়। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশের স্টলে পুরোদমে ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। বইয়ের ক্রেতাদের চাহিদা মতো বই সরবরাহ করছিলেন তাঁরা। বলাবাহুল্য, এসব বইয়ের প্রায় সবই নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের। লেখক প্রয়াত হলেও, তাঁর বইয়ের চাহিদা কমেনি। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী পাঠক এখনও হুমায়ূনে অন্ধ। তাঁদেরই একজন শেফা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী জানালেন, হুমায়ূন আহমেদের অনেক বই তাঁর পড়া। আর যেগুলো পড়া হয়নি সেগুলো কিনতে মেলায় আসা। সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইকবালের ভাষ্য- হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাঁর প্রতি আগ্রহ আরও বেড়েছে। হুমায়ূনকে জানতেই তাঁর বইয়ের দিকে বিশেষ ঝুঁকে গেছি। সেবা প্রকাশনীর সামনেও চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল। এখানেই ভীষণ প্রিয় মাসুদ রানা সিরিজ। ছোট্ট আকার ও আকৃতির সাধারণ মলাটের বই। পাঠক সব সময়ের মতোই দেখছিলেন। যত দেখছিলেন, কিনছিলেন তারও বেশি! ইউপিএল, মাওলা, সময় প্রকাশন, অবসর, আগামীসহ আরও কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হয়েছে, একটু একটু করে ফুটে উঠছে মেলা। নতুন বই ॥ মেলার দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু নতুন বই এসেছে। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ ২’। আগামী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তসলিমা নাসরিনের ‘গদ্যপদ্য’। বিভাস থেকে প্রকাশিত হয়েছে নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থ ‘রক্ষা করো হে ভৈরব’। ঐতিহ্য থেকে এসেছে রঞ্জন সেনের ‘মার্কিন জিএসপি অর্থনীতি না রাজনীতি’। আদিগন্ত প্রকাশন থেকে এসেছে মোস্তফা কামালের শিশু কিশোর কাব্য গ্রন্থ ‘রংধনু’। তবে প্রকাশিত সব বইয়ের তথ্য দিতে পারেনি বাংলা একাডেমি। প্রকাশকদের পক্ষে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদিন জুয়েল জানান, প্রতি বছরই কিছু নতুন বই দিয়ে শুরু করতে হয়। সে অনুযায়ী, বেশ কিছু নতুন বই ইতোমধ্যে মেলায় চলে এসেছে। যত দিন যাবে, ততই আসতে থাকবে নতুন বই। আর বাধা বলতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। অবস্থার অবনতি হলে প্রকাশনা কমে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। মেলা মঞ্চে একুশের আলোচনা ॥ বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রমিত বাংলা ভাষা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফিরোজা ইয়াসমীন, ড. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ এবং অধ্যাপক জিনাত ইমতিয়াজ আলী। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ষাট বছরে বাংলা একাডেমি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, ভূইয়া ইকবাল, ড. করুণাময় গোস্বামী এবং ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সমস্যা সীমাবদ্ধতা ॥ মেলার দ্বিতীয় দিনেও কিছু সমস্যা সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল ভেন্যুর বেশ কিছু স্থান এত অমসৃন যে, হাঁটার সময় হেুাঁচট খেতে হয়। অনেক স্টলের সামনে দেখা গেছে মাটির ডিবি। এবার স্টল সাজানোর জন্য সময় বেশি পেলেও, দ্বিতীয় দিনে চালু হয়নি বেশ কয়েকটি স্টল। তথ্যকেন্দ্রটিও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করছি না। মেলা সুন্দর ও সফল করতে যা যা দরকার, আমরা করব। নীতিমালা যারা অনুসরণ করছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
×