ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমানের লোকরাই চোরাচালানে জড়িত ॥ এনবিআর চেয়ারম্যান

শাহজালালে ৭০ কোটি টাকার ৬১ কেজি সোনা উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শাহজালালে ৭০ কোটি টাকার ৬১ কেজি সোনা উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিন দশেক আগেই শুল্ক গোয়েন্দা দফতরে খবর আসে- সোনার একটি বড় চালান আসছে। যে কোনদিন সেই চালান আনা হবে দুবাই থেকে বিমানের ফ্লাইটে। বিষয়টি জানানো হয় রাজস্ব বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে। তারপর থেকেই শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান প্রতিদিনের দুবাইয়ের ফ্লাইটের গতিবিধি নজরদারিতে রাখেন। সোমবার ভোরে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। খবর পেয়ে রাজস্ববোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে নিয়ে শাহজালালে ছুটে যান ডক্টর মইনুল। তারপর চালানো হয় অভিযান। তাতেই বিমানের ফ্লাইট রাঙ্গা প্রভাতের টয়লেট থেকে বের করে আনা হয় সোনার বিশাল চালান। এক দু’কেজি নয়। একেবারে ৬১ কেজি। যার বাজার মূল্য ত্রিশ কোটি টাকা। প্রায় তিন ঘণ্টার এ তল্লাশি অভিযানে দেখা মেলে এ সোনার। শাহজালালের কাস্টমস হলে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের সামনে সোনার চালানের সবগুলো সোনার বার কাপড়ের কাঁথা থেকে বের করা হয়। রাজস্ববোর্ডের চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই সোনার বড় চালান-যা শুল্ক গোয়েন্দারা অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাগত নিষ্ঠার বদৌলতে আটক করতে সক্ষম হন। চাঞ্চল্যকর এ অভিযান সম্পর্কে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় সোর্স ফোন করে ডক্টর মইনুল খানকে খবর দেয়, ফ্লাইটটা ল্যান্ড করে গেছে। তাতেই সোনার চালানটা নিশ্চিত আছে। টয়লেটের ভেতরে লুকানো রয়েছে আশি কেজি অর্থাৎ দুই মণ সোনা। ঘুম থেকে ওঠে হন্তদন্ত হয়ে তিনি গোয়েন্দা টিম নিয়ে ছুটে যান শাহজালালে। গিয়ে দেখেন বিজি ০৪৮ ফ্লাইটটি (রাঙ্গাপ্রভাত) বোর্ডিং ব্রিজে না লাগিয়ে দূরের বে-স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো। সেখানে রেখেই যাত্রীদের বের করে আনা হয়। যাত্রীরা সব নেমে যাবার পর শুল্ক গোয়েন্দার টিম ফ্লাইটে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে। ফ্লাইটের পেছনের অংশের টয়লেটের মিররের পেছনের অংশ উন্মুক্ত করে দেখা যায় তাতে কালো সুতো নিচের দিকে নেমে রয়েছে। তাতেই তারা চমকে ওঠেন। ইউরেকা বলে চিৎকার করে ওঠেন এক সদস্য। তারপর টান দিতেই হাতে অনুভূত হয় খুব ভারি। যা নিশ্চিত স্বর্ণের চালান বলে তারা উল্লসিত। কারণ এর আগে বহুবার একই কায়দায় সোনার চালান আনা হয়। অভিযানে অংশ নেয়া এক সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, সুতোয় ধরে টান দেয়ার পর খুব সতর্কে নিচে চোখ রাখা হয়। তাতে দেখা মেলে কালো কাপড়ের মাঝে সেলাই করা সোনার বার বিস্কুটগুলো। কাল বিলম্ব না করে- দুটো কাপড়ের প্যাকেট টেনে আনা হয়। এ ছাড়া আরও একটি কাপড়ে মোড়ানো থলেতে ছিল সোনার চেইন। টয়লেট থেকে যখন সব সোনা বের করে আনা হয় তখনও সোর্স আবারও ফোন করে জানায়, আরও সোনা রয়ে গেছে ফ্লাইটের ভেতরেই। তারপর ফের চলে অভিযান। ঘণ্টাখানেক চলার পরও মেলেনি কোন সোনা। তাতে হাঁপিয়ে ওঠেন অভিযানকারীরা। আবারও সোর্স জানায়, সোনা রয়ে গেছে আরও। কিন্তু আবারও খোঁজা হয় গোটা ফ্লাইটে তন্ন তন্ন করে। কিন্তু বৃথা। সোনা না পেয়ে তল্লাশি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। নজিবুর রহমান বলেন, ওই সোনা খালাস করা হতো হ্যাঙ্গারে। সেখান থেকে সুযোগবুঝে বের করা হতো। যাত্রীরা সব নেমে যাবার পর ওই ফ্লাইট নিয়ে যাওয়া হতো হ্যাঙ্গারে। এমন পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।
×