ফুটবল বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খেলা। সেই সব অতীত দিনের কথা আজকাল যেন বিশ্বাসই হতে চায় না। গ্রামবাংলার এমন কোন পল্লী অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যেত না যেখানে বছরে অন্তত একবার ফুটবলকেন্দ্রিক কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো না। এক গ্রামের সঙ্গে ভিন্ন গ্রাম, গ্রামের একটি স্কুলের সঙ্গে পাশের গ্রামের কোন স্কুলের ছেলেদের জমজমাট ফুটবল খেলা হতো। সে এক হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। উৎসাহ, উদ্যম, উদ্দীপনায় ভরপুর এক লড়াই। খেলা সে তো খেলা নয়, রীতিমতো যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ভেতর কী বিপুল আনন্দ আর বিনোদন পোরা থাকত, হাসি থাকত রাশি রাশি। কাছা বেঁধে বর্ষাকালে পানি-কাদাতে হুটোপুটি, লুটোপুটি করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট এলাকায় ঢুকে পড়ার কী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা! নগরও তার বাইরে ছিল না। ছিল বড় বড় খেলার মাঠ। এখন কী শহর, কী গ্রাম সর্বত্রই খেলার মাঠের সংখ্যা কমে এসেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল, তথা এশীয় ফুটবলে বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়া এবং তার বিপরীতে ক্রিকেটে অভাবনীয় উন্নতিÑ এই দুই কারণ ছাড়াও কিছু কারণে বহু ফুটবলপ্রেমী মানুষ আর আগের মতো ফুটবল বলতে অজ্ঞান হন না।
তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা আলাদা। সেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ না থাকলেও এ দেশের কোটি দর্শক মাসব্যাপী ওই খেলার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে থাকেন। রাত জেগে খেলা উপভোগ করেন। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলÑ প্রধানত এ দুটি দলের সমর্থনে ভাগ হয়ে যায় দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ। অবস্থা অনেকটা যেন আবাহনী- মোহামেডানের মতো। এই উত্তেজনা, আবেগ আর বিনোদন ভালভাবেই খোলাসা করে দেয় ফুটবল নামক ক্রীড়াটির প্রতি বাংলার মানুষের গভীর আকর্ষণের কথাটি। এমন একটি ফুটবলপ্রিয় দেশে জাতির পিতার নামের সঙ্গে যুক্ত একটি টুর্নামেন্টের ধারাবাহিকতা কেন বজায় থাকে নাÑ সেটাই প্রশ্ন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু তাঁর এক স্মৃতিচারণে দেশের ফুটবলে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ প্রেরণা ও অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় স্টেডিয়ামে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে সেøাগান দিচ্ছিল, ‘শেখ মুজিব, বাংলাদেশ।’
দেশের ফুটবলামোদী মানুষের জন্য আশা ও আনন্দের কথা দেড় দশক পরে হলেও আবার শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। এ টুর্নামেন্ট সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সেটি ছিল দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ। এর সূচনা ১৯৯৬ সালে। এবারের উৎসব উদ্বোধনী ভেন্যু হিসেবে সিলেট স্টেডিয়াম বর্ণাঢ্য সাজে সেজেছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে সিলেট নগরে এখন সাজ সাজ রব। ছয়টি দলের ১১ দিনের টুর্নামেন্টের খরচ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় দল খেলছে। বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-২৩ দল পাঠিয়েছে। টুর্নামেন্টটি পেয়েছে ফিফার প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্টের মর্যাদা। সব মিলিয়ে এবার ফুটবলে দারুণ এক যুবযুদ্ধ উপভোগ করবেন খেলাপাগল মানুষÑ এটা নিঃসংশয়ে বলা যায়। ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চায় বাফুফে। সেজন্য কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। এবারের বঙ্গবন্ধু কাপ তাই নানা দিক থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
শীর্ষ সংবাদ: