ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবছর ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি

মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প

জসিম উদ্দিন ॥ ২০২১ সালে বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প খাত। তৈরি পোশাকের পর অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে এই শিল্প। দেশীয় চাহিদার প্রায় শতভাগ যোগান দিচ্ছে স্থানীয় প্লাস্টিক শিল্প। তবে, এখনও খেলনা শিল্প আমদানিনির্ভর শিল্প হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) তথ্য মতে, বিশ্ববাজারের চাহিদা প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৭ শতাংশ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর রফতানি হচ্ছে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য। প্লাস্টিক শিল্পে বাংলাদেশে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্বে প্লাস্টিক সামগ্রী রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব হিসেবে পাচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। বিপিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য উন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী আরও নতুন বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। বিপিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, আমেরিকায় রয়েছে প্লাস্টিক পণ্যের বড় একটি বাজার। সেখানেই এখন আমাদের লক্ষ্য। তবে, অদূর ভবিষ্যতে আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনে বিশাল বাজার তৈরি করে নিতে পারব। এখানেও আমাদের বিশেষ ফোকাস রয়েছে। তিনি বলেন, এখন পোশাক কেনা বিভিন্ন বিদেশী ব্র্যান্ড কিছু কিছু প্লাস্টিক পণ্যও কিনছেন। তারা যখন পুরোদমে প্লাস্টিক পণ্য ক্রয় করবে তখন পোশাক কারখানার মতো এ খাতেরও কমপ্লায়েন্স ইস্যু বড় হয়ে দেখা দেবে। তাই দ্রুত প্লাস্টিক শিল্প নগরী বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। এতে করে এ খাতের যে শিল্পগুলো বর্তমানে অসংগঠিতভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার লালবাগ, ইসলামবাগ, চকবাজার, পোস্তা, কামরাঙ্গীরচর, নলগোলা, মিটফোর্ড ইত্যাদি এলাকায় অপরিকল্পিত, অপরিসর এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রয়েছে। সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নত পরিবেশে স্থানান্তর করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিপিজিএমইএ’র সভাপতির মতে, দক্ষ জনবল তৈরি করতে কারিগরি শিক্ষা পাঠ্যক্রমে প্লাস্টিক শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) তথ্য মতে, রফতানির দিক দিয়ে বর্তমানে পোশাক ও খাদ্যপণ্যের পরেই এ শিল্পের অবস্থান। অন্যদিকে ওষুধ ও সিরামিকস শিল্পের ওপরে প্লাস্টিক রয়েছে প্লাস্টিক শিল্পের অবস্থান। তাই বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্পের পরপরই প্লাস্টিক পণ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার ছিল ৫৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যেটা প্রতি বছর ১৭ শতাংশ করে বাড়ছে। অন্যদিকে বিশ্বে পোশাক শিল্পের রফতানি বাজার ৭৭২ বিলিয়ন ডলার। ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্ব বাজারে প্লাস্টিক পণ্যে বাংলাদেশের অবদান ছিল দশমিক ০০৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে এসে তা দশমিক শূন্য ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য অন্যান্য পণ্যের সহজাত পণ্য হিসেবে রফতানি হচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালে সামগ্রিক রফতানি ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও সরাসরি রফতানি হয়েছে ৮৫ মিলিয়ন ডলার। বিপিজিএমইএ’র তথ্য মতে, প্লাস্টিক শিল্প খাতের ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণভাবে আমদানিনির্ভর। বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য রি-সাইক্লিং করা হয়। এতে সামান্য কিছু কাঁচামালের যোগান হয়। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে নগণ্য। ইপিবির তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ সালে বিদেশ থেকে প্লাস্টিক শিল্প কাঁচামাল আমদানি করেছে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ২০০১ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ২৪০ মিলিয়ন ডলার।
×