ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে পশ্চিমা উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত

রাশিয়ার প্রতি গ্রীসের সমর্থন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

রাশিয়ার প্রতি গ্রীসের সমর্থন

গ্রীসের কড়া বামপন্থী দল সিরিজা রাশিয়ার প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করে ইউরোপের বৈদেশিক বিষয়ক মূল নীতিকেই চ্যালেঞ্জ করছে। এর মাত্র দিন কয়েক আগে গ্রীসের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলটি ইউরোপের অর্থনৈতিক নীতির ভিত্তিই কাঁপিয়ে তোলে। মস্কোর প্রতি সিরিজার সমর্থন রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পশ্চিমা প্রয়াসকে জটিল করে তুলছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। চলতি সপ্তাহে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সিরিজা দলের নেতারা ক্রেমলিনের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতার কথা গোপন করেননি। গত বসন্তকালে পশ্চিমারা রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের নিন্দা করার পর তারা সংহতি প্রকাশ করতে মস্কো সফর করেন। নয়া গ্রীক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপরাস সোমবার দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর প্রথম বিদেশী সাক্ষাতপ্রার্থী হিসেবে রুশ রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান। এখন সিরিজা দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহী তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে মস্কোর বিরুদ্ধে কোন কঠোর অবস্থান নিতে পশ্চিমা প্রয়াসকে কঠিন করে তুলছে। বৃহস্পতিবার এ নতুন ঘটনার বহির্প্রকাশ হয়। মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয় বিবেচনা করতে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওইদিন ব্রাসেলসে এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন। এর মাত্র দিন কয়েক আগেদ গোলাবর্ষণে ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিয়াপোলে ৩০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। কিন্তু গ্রীসের ভিন্নমতের কারণে মন্ত্রীরা কেবল বর্তমান নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়াতেই একমত হতে পেরেছিল। তাঁরা কয়েক ঘণ্টার আবেগপূর্ণ বিতর্কের পর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখেন। ওই বৈঠকে নয়া গ্রীক সরকারের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। মস্কোর মিত্র হিসেবে ওই সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ এড়াতে চায় বলে জানায়। গ্রীস ইইউ ও ন্যাটো উভয়েরই ২৮ সদস্যের অন্যতম। উভয় সংগঠনই সর্বসম্মতির নীতির ভিত্তিতে কাজ করে। এর অর্থ হলো যে কোন সদস্য সহজেই ভেটো দিয়ে কোন নীতি গ্রহণের পথ রোধ করতে পারে। গ্রীসের নির্বাচনে সিরিজা দল জয়ী হওয়ায় মস্কো পশ্চিমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রস্থলে এক সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ মিত্র পেল। এর ফলে ইউরোপে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে গ্রীসের নয়া সরকার রুশপন্থী ধারা কতদূর অনুসরণ করবে তা স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনাস লিঙ্কেভিসিয়াস বলেন, মস্কোর বিরুদ্ধে বর্তমানে বলবত নিষেধাজ্ঞার ওপর কোন ভেটো না পড়ায় তিনি খুশি হয়েছেন। নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকলেও তা ইইউ বৈঠকে পাস করিয়ে নেয়া সহজ হবে না বলে তিনি স্বীকার করেন। কোন কোন কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপের রাশিয়া নীতিতে বিঘœ সৃষ্টি করার হুমকি গ্রীসের বিশাল ঋণ নিয়ে আগামীতে আরও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে দেশটির এক কৌশল হতে পারে। সিরিজা দেশটির ২৮ হাজার ৪শ’ কোটি ডলারের বেইল আউট চুক্তি নিয়ে আবার আলোচনা করা, মোট ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ মওকুফ করা এবং কৃচ্ছ্রনীতি সম্পর্কিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। পোল্যান্ডের ইইউ প্রতিনিধির মুখপাত্র আরতার হাবান্ত বলেন, এটি ভবিষ্যতে প্রভাব বিস্তারের সামর্থ্য অর্জনের একটি উপায়। ইইউর সঙ্গে গ্রীকদের আলোচনা করার মতো অনেক ইস্যু রয়েছে। খোলাখুলি বলতে গেলে, তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নটি ইউক্রেন প্রশ্নের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রবিবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে সিরিজার নেতারা স্পষ্টভাষায় পশ্চিমা সমালোচনার হাত থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। গত বসন্তকালে সিপরাস মস্কো সফর করে ক্রেমলিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে ক্ষতিকারক বলে অভিহিত করেন। সিপরাস বলেন, আমি নিশ্চিত, ইইউর উচিত মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করে সঙ্ঘাত থেকে বেরিয়ে আসার শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা। তিনি রাষ্ট্রীয় দৈনিক রোশিস্কায়া গেজেটা পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন।
×