ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অলআউট এ্যাকশনে নাশকতা কমেছে ॥ আতঙ্ক কাটছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

অলআউট এ্যাকশনে নাশকতা কমেছে ॥ আতঙ্ক কাটছে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতালের নামে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আগুনে পুড়ে মরছে খেটেখাওয়া নিরীহ মানুষ। রেহাই পাচ্ছে না নিষ্পাপ শিশুও। গত ২৪ দিনের অবরোধ-হরতালে দুর্বৃত্তের পেট্রোলবোমা কেড়ে নিয়েছে ৩৮টি তরতাজা প্রাণ। আন্দোলনের নামে এমন ভয়াল সহিংসতা-নৃশংসতার শেষ কোথায়? কতটা ধ্বংস হলে পরিস্থিতি শান্ত হবে? আর কত লাশ পড়লে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ হবে? দেশবাসীর এমন নানা প্রশ্নের উত্তর নেই কোন পক্ষের কাছেই। সরকারের বড় বড় নেতা-মন্ত্রী কেউ সাতদিন, কেউবা ১০ দিন আবার অনেকেই ‘খুব শীঘ্রই’ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করলেও তা মোটেও যে সম্ভব হয়নি, তা দেশের বিভিন্নস্থানে নানা নাশকতার ঘটনায় প্রমাণ মিলছে। সরকার থেকে সন্ত্রাস-সহিংসতা দমনে ‘অলআউট এ্যাকশনে’ নেমে মৃত্যুর মিছিল ও নাশকতা কিছুটা কমাতে পারলেও তাতে জনমনে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এতটুকুও কমেনি। ইস্যুবিহীন বিএনপি-জামায়াত জোট টানা হরতাল-অবরোধে ন্যূনতম জনসমর্থন আদায় করতে না পারলেও চোরাগোপ্তা পেট্্েরালবোমার আগুনে সারাদেশেই ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দগ্ধ- ঝলসানো শরীর নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অসংখ্য নারী-পুরুষ-শিশু। থমকে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতির চাকা। প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা। মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকও উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। কেন এই হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা? এর স্পষ্ট বা সঠিক ব্যাখ্যা নেই খোদ বিএনপি নেতাদের কাছেও। কবে নাগাদ শেষ হবে তাদের এই সহিংসতা-নাশকতা, তাও জানেন না দলটির নীতিনির্ধারক নেতারাও। এতে লাশের মিছিল সত্ত্বেও বরফ গলছে না কোন পক্ষের। সরকারও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ঠিক কবে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। ভয় আর আতঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে দেশের মানুষ। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, আন্দোলনকে ছাড় দেয়া যায়, তবে নাশকতাকে ছাড় দেয়া যায় না। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-সহিংসতা দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে চোরাগোপ্তা হামলা বা নাশকতা অনেক কমে গেছে। রাজনীতির নামে বোমাবাজ-সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের কোনভাবেই রেহাই দেয়া হবে না। এভাবে চলতেও দেয়া হবে না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার খুব শীঘ্রই সফল হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নৃশংসতায় যখন দেশের মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠিত তখন হঠাৎ করেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যেই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে শাসক দলের অনেক নীতিনির্ধারক নেতাও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, সাতদিনের মধ্যে না হলেও খুব শীঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। নেতা-মন্ত্রীদের এ ঘোষণায় দেশের মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও আশা জাগিয়ে তুলে। সর্বত্রই মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয় যে, আগামী সাতদিনের মধ্যে হয়ত কিছু একটা ঘটবে, রাজনৈতিক সন্ত্রাস-সহিংসতার হাত থেকে মুক্তি পাবে তারা। কিন্তু সাতদিন পেরিয়ে গেলেও অর্থমন্ত্রীসহ অন্য নেতাদের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় চৌদ্দ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। দূরপাল্লার কিছু যানবাহন চলছে না আতঙ্কের কারণে। এছাড়া দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে দেশের জনগণ সাড়া দেয়নি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। আমরা দৃঢ় আশাবাদী, খুব দ্রুতই সবকিছু স্বাভাবিক হবে, রক্তের নেশায় উন্মত্ত খালেদা জিয়ার আবারও রাজনৈতিক পরাজয় ঘটবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক জয়-পরাজয়ের জটিল অঙ্ক থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে। এভাবে পুড়িয়ে মানুষ মেরে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এবং দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রাজনৈতিক দাবি আদায় করা যায় না। হয়ত বিএনপি ও জামায়াত মনে করছে, জনসমর্থন না পেলেও টানা অবরোধ-হরতালের মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে। মৃত্যুর মিছিল যত দীর্ঘ হবে, সমঝোতার জন্য সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়বে। এমনটা হলে সরকার হার্ডলাইনের অবস্থান থেকে সরে এসে তাদের সঙ্গে সংলাপের টেবিলে বসতে বাধ্য হবে। এমন চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি তাদের কর্মসূচী থেকে পিছু হটছে না। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের এমন পরিকল্পনার ছক জেনেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে- আন্দোলনের নামে নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকার থেকে কোনকিছু আদায় করা যাবে না। নির্বাচন নিয়েও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনই সম্ভাবনা নেই। বরং সন্ত্রাসনির্ভর বিএনপি-জামায়াতের অপতৎরতা দমনে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মাঠে নেমেছে। সরকার যে কঠোর অবস্থানে, তা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারের পক্ষে যা করা সম্ভব তাই করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান আর জনতার প্রতিরোধের মুখে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকা- গত কয়েকদিনে অনেকটাই কমেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান আর রাজপথে জনগণের গণপিটুনির আতঙ্কে ভাড়াটে বোমাবাজ, সন্ত্রাসী ও দলীয় ক্যাডার আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় সরকার। বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতা দমনে সাতদিনের চূড়ান্ত ছক নিয়ে মাঠে তৎপর হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে এ অভিযান শুরুও হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যে কোন মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা যা করণীয় তার সব কিছুই করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আর এটি হবে সরকারের কঠোরতার প্রাথমিক ধাপ। এরপরও নাশকতা না থামালে পর্যায়ক্রমে কঠোরতার মাত্রা আরও বাড়বে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের বড় বড় নেতাকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলেই সূত্রটি আভাস দিয়েছে।
×