ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হরতাল-অবরোধে বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল-অবরোধে বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ঝুঁকি

এম শাহজাহান ॥ হরতাল-অবরোধের কারণে বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রভাব। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হওয়ায় আমদানি-রফতানি খাতেও সুখবর নেই। বরং বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম। অর্থনীতিতে নেতিবাচক যা কিছু তৈরি হচ্ছে তার মূলে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী। এই বাস্তবতায় চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও বাজেট বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে জোর দিয়েছে সরকার। বছর শেষে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ফলে এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম আদায় বা ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। বিএনপি-জামায়াতের এই কর্মর্সূচী অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা; যার ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাবে। হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে শিল্প-কারখানার জন্য মূলধনী পণ্য আমদানি কমে যাবে। এর ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি এ খাতের ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করে অন্য দেশে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ফলে রফতানিতে শীর্ষে থাকা পোশাক শিল্প খাতও রাজনৈতিক সঙ্কটে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। শিল্পের পাশাপাশি কৃষি ও সেবা খাতে উৎপাদন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। পরিবহন সঙ্কটের কারণে উত্তরাঞ্চলে সার ও ডিজেল সরবরাহ হচ্ছে না চাহিদামতো। চলতি মৌসুমে সেচ ও সার ঠিকমতো কৃষকের হাতে পৌঁছাতে না পারলে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে কৃষি থেকেও কাক্সিক্ষত উৎপাদন আসবে না। এছাড়া পর্যটন, চিকিৎসা, যানবাহনসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনেও নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে অর্থনীতিও যে আক্রান্ত তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, হরতাল-অবরোধ অর্থনীতির জন্য নারকীয় ঘটনা। এটা বন্ধ করতেই হবে। জানা গেছে, চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নেও চাপ সৃষ্টি করবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকে কার্যকর হবে পে-কমিশনের সুপারিশ। তাতে প্রায় বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া পদ্মা সেতুসহ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোতেও বরাদ্দ বাড়বে আগামী বাজেটে। ফলে সরকারের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় দুটোই বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত রাজস্ব না পাওয়া গেলে সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে বড় প্রভাব ফেলছে। এটা অব্যাহত থাকলে আগামীতে রাজস্ব আহরণের সব খাত থেকেই আদায় কমে যাবে। যেমন আমদানি-রফতানি কমলে আমদানি শুল্ক বাবদ রাজস্ব আহরণ কম হবে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে মূল্য সংযোজন করও (ভ্যাট) কমে যাবে। এই বাস্তবতায় বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এজন্য চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট দূর হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, অর্থনীতির স্বার্থেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। এদিকে, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নের ওপর তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ তাগাদা দিয়েছিল সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৫ সালে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক ঋণের বেশিমাত্রার সুদের হার, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে ভ্যাট আইন দ্রুত পাস করানো। সেই সঙ্গে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোসহ এডিপির গুণগত বাস্তবায়ন বাড়ানো একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
×