ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেছেন, বাংলাদেশে সরকারবিরোধী পক্ষের চলমান আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকায় বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত টিকে থাকবে। চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরের মধ্যদিয়ে তিস্তা চুক্তির জট খুলতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ড. সঞ্জয়। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ। ঢাকায় অবস্থানকালে রবিবার জনকণ্ঠকে এই বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এ সময় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেন, ঢাকায় এসে এখানকার রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার মনে হয়েছে, বিরোধীপক্ষের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত টিকে থাকবে। কারণ, সাধারণ মানুষ উন্নয়ন চান। স্থিতিশীলতা চান। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে চান। সে কারণেই তারা আন্দোলনের নামে কোনভাবেই সহিংসতা চান না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবেই নির্বাচিত হয়েছে। তবে এটা এখন খুবই পরিষ্কার, সংবিধানের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ডেকে আনতে চান। পশ্চিমা শক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, পশ্চিমারা বলেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে সংবিধানের বিরুদ্ধে যাওয়াটাই কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা? সংবিধান মেনে চলাই তো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করছেন ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নারীর ক্ষমতায়ন এমন অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। আর এসব হয়েছে বর্তমান সরকারের জন্যই। কেননা বর্তমান সরকারই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছে। বিএনপি আমলের চেয়ে এখন বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক বেশি। বর্তমান সরকারের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রধান নেত্রীর বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে এই এশিয়ান ফেলো ড. সঞ্জয় বলেন, শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া- দুই নেত্রীই দেশের জন্য কাজ করেছেন। তবে নিরপেক্ষভাবে দেখতে হবে কে বেশি কাজ করেছেন। শেখ হাসিনা এই জাতির জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন। তার বাবা শেখ মুজিব ও তাঁদের পরিবারেরও ত্যাগ রয়েছে। এখন শেখ হাসিনা নিজের জীবনবাজি রেখেই দেশকে রক্ষা করে চলেছেন। অগণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তিনি লড়ছেন। এসব কারণে চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার প্রতিবাদ করা উচিত। বতর্মান মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কেমন সম্পর্ক হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সঞ্জয় বলেন, মোদি ভারতে যে উন্নয়নের মডেল গ্রহণ করেছেন, সেটা খুবই ইতিবাচক। প্রচার ছিল যে, মোদি ধর্মবাদী মানুষ, হিন্দুবাদে বিশ্বাসী। আর ভারতের বিরোধী দলগুলো সব সময়েই বলে আসছে, মোদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ভাল নন। এবার এমন সমালোচনা ছিলই। তবে নির্বাচনের আগে বিজেপি এবার ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল। ধর্ম, আঞ্চলিকতা, জাতিভেদের উর্ধে থেকেই তারা এবার নির্বাচন করেছে। মোদি ভারতে এবার উন্নয়নের এজেন্ডা গ্রহণ করেছেন। সে কারণে মোদিকে তরুণরা সমর্থন করেছেন। তিনি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই ভুটান যান। তারপর যান নেপাল। এর মধ্যদিয়েই তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সিগন্যাল দিয়েছেন। প্রতিবেশীদের উন্নয়ন ছাড়া ভারতেও উন্নয়ন হবে না। এটা মোদি বুঝতে পেরেছেন। এ কারণে মোদি সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. সঞ্জয় বলেন, ভারতের আগের কংগ্রেস সরকার তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যার কারণে কংগ্রেস সরকার সেটা করতে পারেনি। আর তখন সীমান্ত বিলের বিষয়ে বিজেপিই বিরোধিতা করেছিল। উল্টর-পূর্ব রাজ্য থেকেও ওই বিলের বিরোধিতা করা হয়েছিল। এখন বিজেপিই সেই বিলটি সংসদে ওঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিজেপির মধ্যেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, মোদি বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে যাবেন না বলেই আমার মনে হয়। আসাম ও পশ্চিমবাংলা থেকে বাংলাদেশী অভিবাসীদের বিষয়ে বিজেপি এক সময় সোচ্চার ছিল। তবে এ নিয়ে বিজেপি এখন নিশ্চুপ। এই নিশ্চুপ থাকাটা খুবই ইতিবাচক। ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সফরে তিস্তা চুক্তি জট খুলতে পারে কি-না জানতে চাইলে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ফেলো ড. সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি মমতা ঢাকায় আসছেন। সে সময় তিস্তা জট খুলতে পারে। মমতা রাজি থাকলে সহজেই তিস্তা চুক্তি সম্ভব হবে। পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে তিস্তা চুক্তি করাটা মোদি সরকারের জন্য কঠিন। অবশ্য তিস্তার ক্ষেত্রে ভোটব্যাংকের কথা চিন্তা করে বিজেপি-তৃণমূল কংগ্রেস পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি মনে করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে ড. সঞ্জয় বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত কখনই হস্তক্ষেপ করবে না। স্বাধীন একটি দেশে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে তারা জানে। তবে ভারত চায় তার নিরাপত্তা। এই অঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গীগোষ্ঠী যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সেটাই চায় ভারত। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কায় যেন কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী না থাকে এটাই তাদের চাওয়া। মোদি সরকার বর্ধমানে জঙ্গীগোষ্ঠীর তৎপরতায় উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে দমন করেছেন, এখন সেখানকার জঙ্গী তৎপরতা দমনে মমতাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. সঞ্জয় বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার বড় একটি ইস্যু। এটা এখানকার দীর্ঘদিনের একটি ইস্যু। তবে বিচারের বিষয়টি এখন সমাধান হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতা করেছিল, তাদের কেন বিচার হবে না? যুদ্ধাপরাধের বিচার বর্তমান সরকারের অনেক একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশের শহীদদের সম্মানের জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজন রয়েছে।
×