ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক মহাসড়কে দ্রুত নিরাপত্তা দাবি যান মালিক-শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

সড়ক মহাসড়কে দ্রুত নিরাপত্তা দাবি যান মালিক-শ্রমিকদের

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সড়ক মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও নাশকতা থামছে না। যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা, ককটেল নিক্ষেপসহ ভাংচুর চালাচ্ছে জামায়াত শিবিরসহ অবরোধকারীরা। পরিবহন নেতৃবৃন্দ বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য নিয়ে সারাদেশ থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পিতভাবে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনে হামলা চালানো হচ্ছে। আতঙ্কে কমছে বাস যাত্রী। জীবনের ভয়ে চালক ও শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে পণ্যবাহী পরিবহন চলছে প্রায় ৪০ ভাগের কম। যাত্রীবাহী বাস চলছে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ। এর মধ্যে নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে বাস চলাচল সবচেয়ে কম। এ পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে সড়কে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ক্ষতিগ্রস্ত মালিক-শ্রমিকসহ যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। যাত্রীবেশে ওঠে জ্বালিয়ে দেয়া হলো বাস। অগ্নিদগ্ধ হলেন ২৯ যাত্রী। তাঁদের মধ্যে সাত জনের বেশি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বাসে চারবার পেট্রোল বোমা হামলার দায় শিকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এক শিবিরকর্মী! এছাড়াও বেশকিছু এলাকায় পরিবহনে হামলার ঘটনার কথা স্বীকার করে এ নরঘাতক। শুক্রবার রাজশাহীতে আবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় যাওয়া গাড়িবহরের পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়েছে অবরোধকারীরা। এতে যাত্রীবাহী একটি বাস ও দুটি ট্রাক আগুনে পুড়ে যায়। আহত হয় কয়েকজন। এ কেমন বর্বরতা? দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে এরকম নাশকতার ঘটনা, পুড়িয়ে হত্যা চলছেই। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। বর্বর হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। এদিকে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দিনে সড়ক পরিবহনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ থেকে ৩৬০ কোটি টাকা। রাজনৈতিক সহিংসতা ২৫ মাসে নিহত হয়েছেন ৩২৪। আহত হয়েছেন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৫। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা, পেট্রোল বোমায় আগুনে পুড়ে ২২২ জন যাত্রী ও ৭৩ জন চালক ও পরিবহন শ্রমিক নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ সময় ২৬ হাজার ৩৭৪টি যানবাহন ভাংচুর ১ হাজার ১৬২টি যানবাহনে আংশিক অগ্নিসংযোগ ও ৭৮১টি যানবাহন সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। এছাড়া ফিসপ্লেট খুলে ও রেললাইন উপড়ে ২১ দফা রেলে নাশকতা চালানো হয়। নৌ-পথে নাশকতা চালানো হয় তিনটি। এ সব ঘটনায় প্রায় ১৩ হাজার ২২৩ যাত্রী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। অবরোধের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ চালিয়ে নিতে পারলেও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জনস্বার্থে বাণিজ্য সচল রাখা, পরিবহন চলাচল ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল না থাকলে মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মালিক-শ্রমিকরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও তাঁরা এখন পর্যন্ত গাড়ি চালাতে বদ্ধপরিকর। মানুষের যাতায়াত, সবজি পরিবহনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকরাও আতঙ্কগ্রস্ত। সামনে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এজতেমাতর জন্যও অবরোধ তোলা হয়নি। ইডেন কলেজ ছাত্রীকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকেও চেষ্টা চলছে। বিচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে অবরোধকারীরা রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করতে চায়। তিনি বলেন, বারবার হামলার পরও নর্থ বেঙ্গলে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যান ছাড়া সারাদেশে যানবাহন কমবেশি চলছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক নাশকতায় আহত হয়ে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪২৫ যাত্রী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথাকথিত হরতাল অবরোধের রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০ যাত্রী ১৫ পরিবহন চালক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একই সময় সারাদেশে ৫৭২ যানবাহনে আংশিক অগ্নিসংযোগ ৬৫ যানবাহন সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে দূষ্কৃতকারীরা। জানতে চাইলে বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, টানা অবরোধ আর হরতালের কারণে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা শক্তি হারাতে বসেছেন। আমাদের দুবস্থার কথা কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যে ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে সবকিছুই ঠিকঠাক। কিন্তু পরিবহন সেক্টরকে টার্গেট করে ধ্বংস করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। আতঙ্কে বাসে যাত্রী ওঠেন না। বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান জনকণ্ঠকে বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা, ভাংচুর, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ চালকসহ শ্রমিকদের হত্যার কারণে চালকরা গাড়ি চালাতে সাহস পাচ্ছেন না। সড়ক মহাসড়কে প্রশাসন নিরাপত্তা দিলেও এর মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে সবাই আতঙ্কিত। তিনি বলেন, এখন আমাদের হাতে করণীয় কিছু নেই। আল্লাহর রহমত ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে হয়ত উত্তরণ সম্ভব হবে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে হত্যাÑ তা হতে পারে না। এ সব বন্ধ করুন। আমরা গাড়ি চালিয়ে কোন অন্যায় করিনি। তিনি বলেন, সারাদেশে সমিতির নিবন্ধিত বাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ গাড়ি পণ্য পরিবহন করছে। নাশকতায় এ পর্যন্ত ১৫ জন চালক ও হেলপার মারা গেছেন।
×