ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতির লাইফলাইন হওয়ায় দ্রুত শেষ করা জরুরী ॥ বিশ্বব্যাংক

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলতি বছর শেষ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)। গত নবেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫২ শতাংশ। দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তবে কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অর্জিত ধারা বজায় রাখতে এবং দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনসহ বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, যেভাবে বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলছে এতে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যদি সামান্য কিছু কাজও বাকি থাকে তাহলেও ধরে নেয়া যাবে শতভাগ অগ্রগতি হয়েছে। অর্থ বরাদ্দে কোন সমস্যা না হলে এবং বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় পুরোদমে কাজ চালিয়ে যেতে পারলে আশা করছি যথাসময়ে শেষ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. আলম বলেন, শুরুর দিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যেমন প্রকল্প এলাকার পাশে কবরস্থান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনা ছিল, সেই সাথে ছিল মামলাও। এগুলো এখন সমাধান করা গেছে। তাই বলা যায়, বাস্তবায়ন শেষ করতে কোন সমস্যা হবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সময় ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ হিসাবে দু’দফায় ব্যয় বেড়েছে ১০২২ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও ৩টি সেতু নির্মাণ প্যাকেজে ১৯২ দশমিক ৩০ কি.মি দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রকল্পের দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় বাড়ানো হয়। যুক্তি হিসাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম ও নকশায় কিছুটা পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২০১০ সালে প্রকল্প ব্যয় আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ২১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ঠিক করা ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। ঢকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষের শরীরের যেমন লাইফলাইন থাকে তেমনি ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। এদেশের অর্থনীতি বাণিজ্যভিত্তিক, অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরের জন্য বা বিদেশে জন্য পণ্য উৎপাদনে দু’ক্ষেত্রেই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বন্দরের সঙ্গে ঢাকার ও দেশের বাইরের যোগাযোগ অপরিহার্য। তিনি বলেন, ট্রেড ভলিউম যেভাবে বেড়েছে এটা এতদিন কোন রকমে সামাল দেয়া গেছে। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করা উচিত। তা না হলে এটি গলা চিপে ধরার মতো হবে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ২০ দশমিক ৪৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ২ লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, ৩২ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রিএ্যালাইনমেন্ট সড়ক নির্মাণ, এক হাজার ৫০ মিটার সেতু নির্মাণ, ২৪৪টি কালভার্ট নির্মাণ, ৯৩০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৩৪ মিটার আন্ডারপাস নির্মাণ, যানবাহন ক্রয়, ইউটিলিটি অপসারণ, অফিস যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক কাজ করা হচ্ছে। সওজের তথ্যমতে, ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার প্রকল্পটির মধ্যে কয়েক মাস আগেই প্রায় ৭৫ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৪৩ কিলোমিটারের অগ্রগতি কাক্সিক্ষত হয়নি । ২ ও ৫নং প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ওই অংশের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২নং প্যাকেজের আওতায় কুটুম্বপুর থেকে কুমিল্লা বাইপাসের শুরু পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার অংশের কাজ হয়েছে ২০ শতাংশেরও কম। আর ৫নং প্যাকেজের বাতিশা থেকে মহিপাল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের অগ্রগতি প্রায় ২২ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সেতু নির্মাণে ১নং প্যাকেজের আওতায় ইলিয়টগঞ্জ সেতু ছাড়াও কুমিল্লা ও ফেনী রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই অংশের ৪২ শতাংশ কাজ হয়েছে। ওই অংশের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান শিখা-পিবিএল জেভি। সওজের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ ২০১২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সরকারের এখনই করণীয় বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প, পদ্মা সেতু, ঢাকা- ময়মনসিংহ হাইওয়ে, ডাবল ট্রাক অব ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে, মেট্রোরেল, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
×