ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাজারীবাগে একটি ট্যানারিও রাখা হবে না ॥ শিল্পমন্ত্রী

গার্মেন্টসের পর চামড়া শিল্প নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

গার্মেন্টসের পর চামড়া শিল্প নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশের বিকাশমান চামড়া শিল্পের রফতানি ব্যাহত করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য : তৈরি পোশাকের পরবর্তী সম্ভাবনাময় শিল্প’ দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। বিনিয়োগ বোর্ড এ কর্মশালার আয়োজন করে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়ন বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার পূরণে সরকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের লক্ষ্যে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারসহ চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার পাশাপাশি ট্যানারি স্থানান্তরে মালিকদের আড়াইশ’ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সহায়তা দিচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে নির্ধারিত সময়ের পর হাজারীবাগে একটি ট্যানারি রাখারও সুযোগ দেবে না সরকার বলে আবারও মালিকদের সতর্ক করে দেন তিনি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের কারণে দিন দিন বুড়িগঙ্গা নদী দূষিত হচ্ছে, এসব বর্জ্যে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে এ নদী। তাই ট্যানারি স্থানান্তরের পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা নদীকেও খনন করা উচিত বলে মত দেন তিনি। কামরুল ইসলাম বলেন, শুধু ট্যানারির কারণে হাজারীবাগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমনটা নয়। এছাড়াও রয়েছে নানাবিধ কারণ। তাই চামড়া শিল্পকে যেহেতু মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে এই জন্য খুব দ্রুত এই শিল্পকে স্থানান্তর করতে হবে। হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তরের জন্য কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, খুব দ্রুত ট্যানারি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যত প্রকার সুবিধা দেয়া সম্ভব তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরই চামড়া শিল্পের অবস্থান। বিগত পাঁচ বছরে চামড়া রফতানি আয় বেড়েছে তিনগুণ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। তারা বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে হলে, রফতানিমুখী পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি রফতানি গন্তব্যও বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাঁরা বলেন, চামড়া শিল্প শতভাগ দেশীয় কাঁচামালনির্ভর রফতানিমুখী শিল্পখাত। এ শিল্পের সঙ্গে ২২০টিরও বেশি ট্যানারি, সাড়ে ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ১১০ বৃহৎ শিল্প জড়িত। এসব কারখানায় বছরে ২৫ কোটি বর্গফুটেরও বেশি চামড়া উৎপাদিত হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পখাতে প্রায় ৭০ লাখ দক্ষ ও অদক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ শিল্পে শতকরা ৯০ ভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ এ. সামাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র ম-ল, বাংলাদেশ ফিনিশড্ লেদার, লেদার গুড্স এ্যান্ড ফুটওয়্যার এ্যাক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের প্রমুখ। উল্লেখ্য, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ২০০ বিঘা জমির ওপর চামড়া শিল্প স্থানান্তরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ শেষের পর্যায়ে। এ শিল্পনগরীতে বরাদ্দ দেয়া ১৫৫ ট্যানারির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুন নাগাদ এসব প্রতিষ্ঠান পুরোদমে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি খাত থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ১২ শতাংশ, যা ছিল ওই বছর দেশের মোট রফতানির ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে এ খাতের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ২৩০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব মাত্র শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৯৮ কোটি ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ছিল আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ৭৭ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে এর আগের অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ।
×