ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিন

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিন

রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষাঙ্গনেও প্রভাব ফেলেছে। বলা যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হরতাল-অবরোধের কবলে দেশের ৪ কোটি শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক এই কর্মসূচীর কারণে দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়েও স্বস্তিতে ক্লাস করতে পারছে না স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান না হওয়ার কারণে পরিস্থিতি যে চরম ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনি এক বাস্তবতায় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষা। নানা শঙ্কার মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে এই মাধ্যমের প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীকে। স্কুল-কোচিংয়ে যেতে পারছেন না অনেকেই। নাশকতার ভয়ে নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেল পরীক্ষাও। তাই ঠিক সময়ে এসএসসি পরীক্ষা হবে কি-না সেটাই এখন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উৎকণ্ঠার বিষয়। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এ ব্যাপারে অভয়বাণী দিয়ে বলেছেন, পরীক্ষা নেয়ার জন্য যা যা করার তাই করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন ২০ দলীয় জোট পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদের কর্মসূচী বন্ধ করবে। মন্ত্রীর এই প্রস্তুতি এবং প্রত্যাশা কতটা নির্ভর করার মতো তার লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। কারণ সামনের দিনগুলোও অত্যন্ত সংঘাতময় হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাই পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা স্বস্তিতে নেই, সবাই উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে পিকেটারের ছোড়া বোমায় প্রাণ হারিয়েছে কবি নজরুল কলেজের ছাত্র অভি। ফেনীর কিশোর শাহরিয়ার হৃদয় এবং মিনহাজুল ইসলাম অনিক ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার প্রস্তুতির বদলে তারা এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। অনিকের পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত। হরতাল-অবরোধের কারণে কেবল স্কুল পর্যায়ে নয়, সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা এবং পরীক্ষার কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে সেশনজটের আশঙ্কা। দেশে সরকার থাকবে, বিরোধী দল থাকবে, প্রতিটি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীও থাকবে যা গণতান্ত্রিক দেশে রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নজির নেই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহু মতের রাজনৈতিক দল থাকবে, রাজনৈতিক দলাদলি ও দ্বন্দ্ব থাকবে, বিরোধীপক্ষ কর্মসূচী নিয়ে রাস্তায় নামবে। আমাদের আশপাশের অনেক দেশেও তা ঘটে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পরীক্ষা বন্ধের মতো ঘটনা বিরল। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যে কোন দেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে যে কোন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। ঘরে ঘরে এখন শিক্ষার্থী। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্যও সর্বজনস্বীকৃত। শিক্ষার এই ধারাকে দেশের স্বার্থে যে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন তাতে দ্বিমত থাকতে পারে না। তাই যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণের ‘সর্বাগ্রে’ ভাবতে হবে দেশের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, শিক্ষার স্বার্থ। দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর স্বার্থের প্রশ্নটি বিবেচনায় নিতে হবে রাজনীতিবিদদের।
×