ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের পরিণতি হবে বর্তমান অবৈধ সরকারের জন্য রাজনৈতিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। ভোটারবিহীন সরকার মনে করছে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করলেই বোধ হয় ২০ দলের আন্দোলনে ভাটা পড়বে। এ কারণেই বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতার ও বিচার করার জন্য ক্ষমতসীনরা তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকার গত ছয় বছরে বিএনপিকে ধ্বংস করতে এমন কোন নিষ্ঠুর কাজ নেই যা করছে না। বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি আঁটা থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কে কত নিম্ন রুচির ভাষা প্রয়োগ করতে পারে সেটারই প্রতিযোগিতা করছে তাঁরা। জাতীয় সংসদকে যেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কার্যালয়, মহাজোট সরকারের ক্লাবঘরে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে গানবাজনা থেকে শুরু করে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজসহ চলমান আন্দোলন দমানোর হুমকি-ধমকির প্রতিযোগিতা চলছে। রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতার ও বিচার করার জন্য সরকার তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ সেলিম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নাকি প্রকাশ্যে রাস্তায় ধরে এনে বিচার করা হবে। শেখ সেলিমের এ ধরনের বক্তব্য কেবল শেখ হাসিনাকে খুশি করা। কারণ এই শেখ সেলিমই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছিলেন। নিজের অপরাধ ঢাকা দেয়ার জন্যই বোনকে খুশি করতে এখন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গলা ছেড়ে গালিগালাজ করছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিএনপির অস্তিত্ব প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র জ্বালা। সেটি বুঝতে পেরেই শেখ সেলিম দিনরাত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য চিৎকার করে যাচ্ছেন। তবে বড় কোন বিপদ ঘটে গেলে শেখ সেলিম যে শেখ হাসিনারও বিচার চাইবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করতে আইনী প্রক্রিয়া দেখা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এখন দেশে চলছে একদলীয় রাষ্ট্র, একদলীয় জাতীয় সংসদ, একদলীয় নির্বাচন, একদলীয় জনপ্রশাসন এবং একদলীয় বিচার ব্যবস্থা বিরাজমান। সারাদেশকেই আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় আইনী প্রক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে-প্রধানমন্ত্রীর জারিকৃত ফরমানের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন। গ্রেফতার থেকে শুরু করে বিচারের রায় পর্যন্ত। কিন্তু জনগণও যে বিচারক আওয়ামী লীগ যেন সেটা ভুলে না যায়। আওয়ামী নেতারা ভুলে গেছেন দেশের মালিক জনগণ, কোন ভোটারবিহীন সরকার বা সংসদ নয়। অসভ্য আস্ফালনকারীরা নিশ্চয়ই জনগণের স্মৃৃতি থেকে মুছে যাবে না। তিনি আরও বলেন, ছয় বছর ধরে বিএনপিকে ধ্বংস করতে এমন কোন বেপরোয়া নিষ্ঠুরতা নেই যা এই অবৈধ সরকার করেনি। আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কর্মসূচী ছিল বিএনপিসহ আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করা। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে ক্ষতবিক্ষত লাশ অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়া। আওয়ামী শাসন আর মরণের বার্তা সমার্থক। জনগণের কণ্ঠনালী কেটে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করার ঐতিহ্য এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই। সেজন্য নতুন রূপে নয়, আসল রূপেই বাকশালকে চূড়ান্ত রূপে দাঁড় করানো হয়েছে। আর এজন্যই বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি আঁটা থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকস্বাধীনতার আইনগত অধিকারকে তো আগেই শূলে চড়ানো হয়েছে। বিএনপির এই মুখপাত্র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরা আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের বুকে গুলি করতে বলেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের গল্প বানিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাহবা পাচ্ছেন। আন্দোলন ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটির নামে বেসামাল সশস্ত্র ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতকিছুর পরও গণতন্ত্র ও স্বাধীন জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা অবরোধ-হরতালে অংশগ্রহণ করছে। ভোটারবিহীন সরকার মনে করছে, বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করলেই বোধ হয় ২০ দলের আন্দোলনে ভাটা পড়বে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের পরও আন্দোলনকারীরা যখন হরতাল-অবরোধে অগ্রগামী তখন বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের পরিণতি হবে বর্তমান অবৈধ সরকারের জন্য রাজনৈতিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। সিএমএইচে ভর্তি হান্নান শাহ ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতলে ভর্তি হয়েছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, হান্নান শাহ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লে সম্মিলিত সামিরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গ্রেফতারের দাবিতে প্রজন্ম লীগের বিক্ষোভ ॥ এদিকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিতে গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী প্রজন্ম লীগ। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিছিল ও সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে অংশ নেয়া প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী এ সময় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁরা সেখানে দাঁড়িয়েই জামায়াত-বিএনপি ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সেøাগান দেন। এ সময় তাঁরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচী দেয়ারও হুমকি দেন।
×