ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত-বিএনপির ক্রাইম জোন শিবগঞ্জ

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীদের অনেকেই এখন মুর্শিদাবাদে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

চাঁপাইয়ের সন্ত্রাসীদের অনেকেই এখন মুর্শিদাবাদে

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ (কানসাট শিবগঞ্জ থেকে ফিরে) বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লাগাতার সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নাশকতা প্রচ-ভাবে গ্রাস করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরো জেলাকে। তবে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জের পুরোটা এখন সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের পুরোটাই জিম্মি হয়ে পড়েছে সহিংস সন্ত্রাসীদের হাতে। সব মিলিয়ে একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ পরিবার এখন দিন রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় রয়েছে আতঙ্কের মধ্যে। এটি অনেক আগেই রূপান্তরিত হয়েছে ক্রাইম জোনে। নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিচ্ছে যারা তারা পরিচালিত হচ্ছে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। এদের রয়েছে অঢেল অর্থ। এক কথায় এরাই হচ্ছে সন্ত্রাস সৃষ্টির পেছনে অর্থের প্রধান যোগানদাতা। এদের শত শত কোটি টাকা রাতারাতি দ্বিগুণ হয়ে যায় ম্যাজিকের মতো। কারণ এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে উভয় দেশে। ইচ্ছে করলেই চোখের নিমিষে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যেতে পারে। বর্তমানে ভারতের ৪১ পয়েন্টে বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় তারা অবস্থান নিয়েছে। এরা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে বড় বড় চোরাকারবারি সিন্ডিকেট সদস্য হবার সুবাদে সারা বছর ধরে অস্ত্র, মাদকসহ নানান ধরনের চোরাচালান করে থাকে। পাশাপাশি এরা এ দেশের চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অথবা তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী সেজে অর্থের প্রধান যোগানদাতার ভূমিকায় থাকে। এদের মধ্যে বড় বড় জোতদার ও আম বাগানের মালিকও রয়েছে। পাশাপাশি সোনামসজিদ বন্দরের অছিলায় আমদানি-রফতানি অথবা সিএন্ডএফ এজেন্ট সেজে একেবারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে শিবগঞ্জের সব ধরনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গন। স্থানীয় অথবা জাতীয় যে কোন ধরনের নির্বাচনে প্রধান মুখ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকে এসব ব্যক্তি। শিবগঞ্জ উপজেলায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন একেবারে কোণঠাসা। বিধায় ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকা-ে নেমে পড়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। পেছনে মদদদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে বিএনপির নেতারা। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্ষান্ত থাকেনি। পুরো শিবগঞ্জকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথমেই গান পাউডার ব্যবহার করে কানসাট পল্লী বিদ্যুতের পুরো অবকাঠামো নিমিষের মধ্যে পুড়িয়ে দেয়। চত্বের স্টাফদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মারপিট ও লুটপাট করে নেয় লাখ লাখ টাকার সামগ্রী। এমনকি সোনামসজিদ সংলগ্ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা পর্যটন মোটেলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি পর্যটনের এক প্রকৌশলীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পুড়িয়ে দেয় বিআরটিসি বাস ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। পুরো শিবগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠে। সেই সময়ের এসপি, ডিসি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব সন্ত্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে কৌশলে সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে এদের সকলকেই জেলা ও উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করা হলেও কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কানসাট পল্লী বিদ্যুত সমিতির সদর দফতরে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৪১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাসহ চার্জশীট হওয়ার পরও তিন বছরে আর কোন অগ্রগতি নেই। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই ইব্রাহিম খাঁন। তৎকালীন পল্লী বিদ্যুতের এজিএস রেজাউল করিম বাদী হয়ে ১৯০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ হাজার জনকে আসামি করে ২০১৩ সালের ৪ মার্চ মামলা করলেও শিবগঞ্জ পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ১৭ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরপর আর কোন অগ্রগতি না থাকায় দুষ্কৃতকারী সমাজবিরোধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে চলমান অবরোধে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকে একাধিক স্থানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পেট্রোল বোমার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে তৈরি হাত বোমার ব্যবহারও বেড়ে যায়। ১২টি ট্রাকে আগুন এবং ১০ জন চালক হেলপার দগ্ধসহ আহত হয়। এ ছাড়াও কানসাট এলাকায় পুলিশ সুপারের গাড়ির ওপর চালানো হয় বোমা হামলা। পুলিশ সুপার প্রাণে রক্ষা পেলেও ড্রাইভার গুরুতরভাবে আহত হয়। অপরদিকে জেলা শহরে চলে আসে ককটেল ও বোমা। জেলা জজ ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের বাসভবন লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রশাসন চরম উদ্বিগ্ন ও সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ঘটনার এখানেই শেষ নয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সিঁড়ি বারান্দা থেকে একাধিক বোমা উদ্ধারে প্রশাসন দিশেহারা হয়ে পড়ে। অবরোধকারী জঙ্গী সস্ত্রাসীরা শিবগঞ্জ সোনামসজিদ সড়কের একাধিক স্থানে বড় বড় বিভিন্ন ধরনের ফলদ ও বনজ বৃক্ষ কেটে মহাসড়ক বন্ধ করে ফেলে। এই অবস্থায় সোনামসজিদ স্থলবন্দর সচল ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। বিভাগীয় কমিশনারের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব যৌথভাবে শিবগঞ্জের শ্যামপুর, কানসাট, রসুলপুর, শাহবাজপুর, মহদীপুর এলাকায় মিনি অভিযান পরিচালিত করে। একাধিক বাড়িতে হানা দিয়ে নানান ধরনের জিজ্ঞাসাবাদসহ ২৫ জনকে আটক করে। অভিযোগ উঠে অভিযানকালে আইন প্রয়োগকারীরা নাকি একাধিক বাড়ির মালামাল ভাংচুরসহ নানান ধরনের অনৈতিক কাজ করে। যার কারণেই নাকি বহু পরিবার নিরাপত্তার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এটাকে অনেক মিডিয়া নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ত্যাগ করা অভিহিত করে। এই অভিযান প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বশির আহম্মদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন ‘অভিযানকালে কোন বেআইনি কাজ করা হয়নি। তবে চিহ্নিত সন্ত্রসাসীদের আটকের জন্য কয়েকটি বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে যৌথ এই অভিযানের পর অশান্ত শিবগঞ্জের চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে যৌথবাহিনীর মিনি অভিযান পরিচালনার পর পরই অবরোধকারীদের একটি অংশ প্রতিশোধ নিতে শিবগঞ্জ পৌরসভার শেখটোলা এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের ছেলে ও রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র একেবারে নিরপরাধ রকিকে পিটিয়ে হত্যা করে। এলাকাবাসী জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মিনি যৌথ অভিযান শেষে তারা ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। এই সময় রকি তিন বন্ধুর সঙ্গে স্কুলের বাইরে আসে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন সন্ত্রাসী রকিকে চিনতে পারে। কিশোর রকি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের ছেলে হওয়ায় তারা তাকে ধরে লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। অচেতন রকিকে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সন্ত্রাসের এ ঘটনা শিবগঞ্জের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের আতঙ্কের মধ্যে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজন। বিশেষ করে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বড় ধরনের মহা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে। যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ফিরিয়ে আনতে বা স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আনতে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে প্রশাসন প্রস্তুতি নিলেও বড় ধরনের ভয়ের মধ্যে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাদের আশঙ্কা আইন প্রয়োগকারীরা অভিযান শেষে ফিরে যাওয়া মাত্র তারাকে হয়তবা রাজন আলী রকির (১৫) ভাগ্য বরণ করতে হবে। কিন্তু তারপরও যৌথবাহিনী কোনভাবেই ছাড় দেবে না নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের। তাই এসব আওয়ামী ঘরানার লোকজন ইতোমধ্যেই খুবই গোপনে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এসব পরিবার কোনভাবেই তাদের নাম ঠিকানা বলতে চাচ্ছে না। এমনকি খুবই গোপনে এলাকা ছাড়ছেন। ছাত্রাজিতপুর গ্রামের জনৈক কিবরিয়া ব্যবসার সুবাদে শিবগঞ্জ সদরে বসবাস করলেও নিজে আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ার কারণে পরিবার সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়েছেন। শ্যামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভোদন, আজগবির রোজবুল, ওমরপুরের আব্দুস সাত্তার, বাজিতপুর নতুন গ্রামের ইসলাম গান্ধী এলাকা ত্যাগ করে পরিবার পরিজন নিয়ে রাজশাহী শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি নিরাপত্তার কারণে এলাকা ছেড়েছেন, না বলে ছেলে মেয়ের পড়াশোনার অজুহাত খাঁড়া করে বলেছেন রাজশাহীতে আছি। এ ধরনের অনেকেই অনুরোধ করেছেন তার নাম না লেখার। সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ভয়ে এ ধরনের পরিবার প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে রয়েছে। যাদের সরে যাওয়ার নিরাপদ আশ্রয় নেই, তারা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ও আতঙ্ক ভয়ে বাড়ির বাইরে ভুলেও আসে না। কিন্তু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক এসব পরিবারের ভয়াবহ চিত্র কোন মিডিয়াতে না আসায় শিবগঞ্জ এলাকার কত হাজার পরিবার অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে তা দেশবাসীর অজানা। এসব পরিবারের আকুল আবেদন তাদের নাম ঠিকানা বা এ ধরনের অবস্থানের কথা যেন ফাঁস না হয়। ফাঁস হলেই তারা সন্ত্রাসী জঙ্গী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির টার্গেট হবেন। শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান (০১৭১২২৫০১৭৩) জনকণ্ঠকে জানান, তারা অতীতে ফিরে যেতে চান না। সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করার পরিবেশ কামনা করেন। তার এই বক্তব্য আতঙ্ক হতে কিনা তা বোঝা যায়নি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন ম-ল সন্ত্রাসীদের নির্মূলের মাধ্যমেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে এই মুহূর্তে ১৫ জানুয়ারির মিনি যৌথ অভিযান ও পরবর্তীতে বড় ধরনের যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি গ্রহণের খবর শিবগঞ্জে চাউর হওয়ার পর শিবগঞ্জ পৌরসভাসহ ১৫ ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাই বিএনপির ডাকা ১৮ ও ১৯ জানুয়ারির ৩৬ ঘণ্টার হরতালে এসব দুষ্কৃতকারী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। একই কারণে হরতালের শেষ দিন ১৯ জানুয়ারি ১১ দিন বন্ধ থাকার পর সোনামসজিদ স্থলবন্দর আবার চালু করা হয়েছে। ভারতীয় মহদীপুর স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ভূপতি ম-লসহ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পর স্থলবন্দর কার্যক্রম চালু হয়। ভারত থেকে কয়েকটি ট্রাক সিমেন্ট ছাই ও পাথর নিয়ে সোনামসজিদ বন্দরে প্রবেশ করে। এদিকে বিনোদপুর, চককীর্তি, দাই পুকুরিয়া, ধাইনগর, দুর্লভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, কানসাট, মোবারকপুর, মনাকষা, নয়ালাভাঙ্গা, পাকা, সত্রাইজপুর ও শাহবাজপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে এক শ্রেণীর বিএনপি-জামায়াত-শিবির কর্মীরা বলে বেড়াচ্ছে যৌথবাহিনী কি চিরদিন থাকবে? তারা চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগকে কে রক্ষা করবে। এদিকে শাহবাজপুর, মনাকষা, দুর্লভপুর, শ্যামপুর, বিনোদপুর ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা বাখের আলী, জুহুরপুর, ওয়াহেদপুর, হায়াতপুর, ফতেপুর, মনোহরপুর, সোনামসজিদ, চকপাড়া, আজমতপুর, তেলুকপি, কিরনগঞ্জ, চৌকা ও সিংনগর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাসী, জঙ্গীদের সহযোগিতা দিয়ে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবস্থা করে দিচ্ছে আশ্রয়ের। সীমান্তের এসব অস্ত্র, মাদক ব্যবসায়ীরা ঐসব দলের কর্মী ও নেতা। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে এরা ভারতের চান্দনিচক, কাকড়ামারী, কালপুর, গিয়াসমোড়, ষষ্ঠিতলা, কুতুবপুর, বাহুড়া, সাঈদাপুর বাজার, নূরপুর ইত্যাদি ৪১টি পয়েন্ট বা স্থানে অবস্থান নিয়েছে। তবে ভারতের মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা এখন বাংলাদেশী নাগরিকে ভর্তি হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মী বলে জানা গেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র আরও জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের এসব অঞ্চলের সঙ্গে সীমান্তের চোরাকারবারিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। এদের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে একাধিক অস্ত্রের বড় বড় চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও ধরা পড়েছে শতাধিক সেফ সাইজের অস্ত্র। যা রিভলবার ও পিস্তল হিসেবে চিহ্নিত। পাশাপাশি এসেছে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির কাঁচামাল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবরোধ হরতালের মধ্যেও থেমে থাকেনি এসব পণ্যের চোরাচালান (অত্র ও বিস্ফোরক)। গত ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি বিজিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩৩ কেজি গান পাউডার উদ্ধার করে। এখানে উল্লেখ্য, হরতাল ও অবরোধ ঠেকাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিজিবি সহযোগিতা দিতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৭৪ কিমি সীমান্তে কিছুটা শিথিলতা দেখা দিয়েছে। টহল ব্যাহত হওয়ার কারণে চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এদের সহযোগিতা দিচ্ছে সন্ত্রাসী জঙ্গীরা। বিধায় চোলাচালান বেড়ে গেছে। আসছে মাদক দ্রব্য, অস্ত্র ও বিস্ফোরক। যদিও বিজিবি এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে সীমান্তে পূর্বের মতোই চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে বিজিবি। মহা সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জের সন্ত্রাস, কোন বর্ণনা দিয়ে এই মুহূর্তে বোঝানো যাবে না। এই সন্ত্রাসের শুরু ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকেই মহা সন্ত্রাসের শুরু। জামায়াত-শিবির বিএনপির মদদে ও সহযোগিতায় সেই সন্ত্রাস আজও অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাস কবলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ২১ মাসে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩২ জন। পঙ্গু হয়েছে অর্ধশতাধিক। বাড়িঘর সম্পত্তি হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। গত ৬ জানুয়ারি জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন শ্যামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দীন কালু। ব্যবসার কাজ সেরে সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে কানসাট ব্রিজের কাছে শিবিরের সন্ত্রাসীরা তাকে ধওে ফেলে। মুখোশ পরা সন্ত্রাসীরা পথরোধ করে চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ভর্তি করা হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এরপর থেকেই কালুর পরিবার নিজের গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। একই গ্রামের একাধিক পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া জামায়াত-শিবির বিএনপি সন্ত্রাসীদের ভয়ে। ৫ জানুয়ারি ২০১৫। চককীর্তি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী মেহেদি। অটোরিক্সাতে উমরপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। কানসাটের গোপালনগরে পৌঁছলে ২০/২৫ জন মুখোশধারীরা তাকে পাকড়াও করে। কোন কিছু বোঝার আগেই চোখ বেঁধে পাকিদের স্টাইলে মাটিতে বসিয়ে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। চিৎকার করেও কারও সাহায্য মিলেনি। ঘটনার তিন দিন পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে জ্ঞান ফিরে। মেডিক্যাল বেডে বসে তিনি জানান, গত দুই বছরে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা এই ধরনের কুপিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় আড়াইশ’ নেতাকর্মীরা পয়ের রগ কেটে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। প্রাণে বাঁচলেও তারা এখন পরিবারের কাছে বড় ধরনের বোঝা হয়ে রয়েছেন। এসব নৃশংসতা যারা ঘটাচ্ছে পুলিশ তাদের দুর্বৃত্ত বললেও এরা সকলেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মী। সহিংস ও সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হিসেবে স্পর্শকাতর জেলা চিহ্নিত হওয়ার পরও এখানে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। ১৫ জানুয়ারি একটি মিনি টাইপের অভিযানে ৫টি গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ জনকে গ্রেফতার ও রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় হরতাল ডাকার আগে শিবগঞ্জ উপজেলায় কানসাটে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান নিহত হলে থমকে যায় সব ধরনের অভিযান। নাশকতা ও সন্ত্রাস দমনে ‘সাতক্ষীরা মডেলে’ যৌথ অভিযান শুরুর সকল প্রস্তুতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে রাখা হয়েছে।
×