ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাবমেরিন কেবলের রিপিটারে ত্রুটি ॥ গতি কমেছে ইন্টারনেটের

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

সাবমেরিন কেবলের রিপিটারে ত্রুটি ॥ গতি কমেছে ইন্টারনেটের

ফিরোজ মান্না ॥ সাবমেরিন কেবলের রিপিটারের সমস্যা দূর করতে কনসোর্টিয়ামের মেরামতকারী দল সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছে। ভারতের মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের মাঝামাঝি স্থানে সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-ফোর কেবলের রিপিটারটি এক্সপ্রেস কেবলের ওপর স্থাপিত। আর এই এক্সপ্রেস কেবল দিয়েই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো হয়। তবে অম্লিবাস কেবলটির রিপিটারে কোন সমস্যা নেই। এই একটি রিপিটারের কারণে ১৬টি দেশেই কম-বেশি ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। ২১ হাজার কিলোমিটারের সাবমেরিন কেবলটির এই রিপিটারে সমস্যা দেখা দেয় গত শনিবার রাতে। গত চারদিনে কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে সেখানে মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা বড় ধরনের বলে এ সময়ের মধ্যে রিপিটারটি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) জানিয়েছে, রিপিটারটি প্রতিস্থাপন করতে আরও ৭ দিন সময় লেগে যাবে। রিপিটারটি ঠিক হলে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হবে। সাবমেরিন কেবল কোম্পানির এমডি মোনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, সি-মি-উই-৪ কেবলের রিপিটার প্রতিস্থাপন কাজ চলছে। কাজ চলাকালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট যোগাযোগে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এক্সপ্রেস কেবলে। এই কেবলের মাধ্যমে যে ব্যান্ডউইথ দেশে আসে-সেটাই গ্রাহক পর্যায়ে চলে যায়। তবে অম্লিবাস কেবল যথারীতি স্বাভাবিক রয়েছে। ইন্টারনেটের গতি কম হলেও একেবারে দেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হবে না। কারণ দেশে এখন কয়েকটি বিকল্প কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আসছে। তাছাড়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে সি-মি-উই-৫ নামের আরেকটি বিকল্প কেবলের মাধ্যমে দেশ যুক্ত হচ্ছে। এই কেবলের মালিকও সি-মি-উই-৪ কেবলের মালিক দেশগুলোই। দ্বিতীয় কেবলের সঙ্গে যুক্ত হলে দেশে তখন ইন্টারনেটের কোন সমস্যা হবে না। সাবমেরিন কেবলের এমডি বলেন, শনিবার রাত থেকে ইন্টারনেট যোগাযোগে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে এটা কোন বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কারণ বিকল্প পথে দেশে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডউইথ আসছে। টাটা ও সিঙ্গাপুর থেকে এই ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়া ৬টি টেরিস্টরিয়াল কেবলের মাধ্যমেও ব্যান্ডউইথ দেশে আসছে। তবে সাময়িকভাবে ইন্টারনেটে গতি কম থাকবে। ২১ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সি-মি-উই-৪ কেবলের চেন্নাই ও মুম্বাইয়ের মাঝামাঝি স্থানে রিপিটারে ত্রুটি দেখা দেয় গত শনিবার রাতে। কনসোর্টিয়াম কেবলের কোন অংশে ত্রুটি রয়েছে তা খুঁজে বের করে রিপিটারটি প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেছে। ৭ দিনের মধ্যে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আইআইজির মাধ্যমে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) আগের মতোই ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। সি-মি-উই-৪ এর (সাউথ এশিয়া-মিডিলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) মালিক হচ্ছে ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর, ইতালী, তিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি জানিয়েছে, তারা ইন্টারনেট ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছে। টাটা গ্রুপের টেরিস্টরিয়াল কেবল এবং সিঙ্গাপুর থেকে বিকল্প পথে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহকরা সাময়িক সময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের গতি কিছুটা কম পাচ্ছেÑ এটা ঠিক। তবে একে বারে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বন্ধ হবে না। কারণ দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ৬টি টেরিস্টরিয়াল কেবল রয়েছে। এই কেবলগুলোর মাধ্যমে একশ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেশে আসছে। এখান থেকেও ব্যান্ডউইথ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। বিএসসিসিএল সূত্র জানিয়েছে, কনসোর্টিয়াম ২১ হাজার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের ‘আপগ্রেডেশন’ বা উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে গত বছরের নবেম্বর মাসে। কেবল আপগ্রেড হওয়ার পর বাংলাদেশ বাড়তি ৯৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। এর আগে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ৪৪ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেশে আসতো। বর্তমানে বাড়তি আরও ৯৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেশে আসছে। দেশে বর্তমানে ৩৭ দশমিক ০৭৫ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ব্যবহার হচ্ছে। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাড়তি ৯৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়তি ব্যান্ডউইথ যোগ হয়ে দেশে মোট ব্যান্ডউইথের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ দশমিক ৬ গিগাবাইট।
×