ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২০ বছর পর ছয় ইস্যুতে বৈঠকে বসছে পরিকল্পনা কমিশন

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

২০ বছর পর ছয় ইস্যুতে বৈঠকে বসছে পরিকল্পনা কমিশন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ ৬টি ইস্যুতে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। গত ২০ বছরের মধ্যে এটিই হবে চেয়ারম্যান হিসেবে কোন প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠক। আজ বুধবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ইস্যুগুলো হচ্ছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, পরিকল্পনা কমিশন শক্তিশালীকরণ, প্রকল্প সংক্রান্ত বিদ্যমান পরিপত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, জনবলের পুনর্বিন্যাস, আইএমইডির বিষয়াবলী এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিষয়াবলী। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মূলত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিষয়ে এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে অবহিত হবেন। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য বিষয়গুলোতে থাকবেই। সূত্র জানায়, আগামী ৫ বছরে জন্য (২০১৬-২০ সাল) তৈরি হতে যাওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় (সামগ্রিক বিনিয়োগ) ধরা হচ্ছে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ধরা হতে পারে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। বাকি ২৬ লাখ কোটি টাকা সরকারী ও বেসরকারী খাত থেকে ধরা হতে পারে। এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু না হলেও প্রাথমিকভাবে এমনটিই নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে। এ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে তখনকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে। ৫ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে ৬টি বিষয়। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি নিরাপত্তা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, আইসিটি খাতের ব্যাপক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন (টেকসই উন্নয়ন) এবং বৈষম্য (আয় ও আঞ্চলিক)। সূত্র জানায়, চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল মোট ১৩ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের ৯৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল ও বেসরকারী খাত থেকে ব্যয় করা লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। তাছাড়া মোট বিনিয়োগের ৭৭ শতাংশ আসার কথা ছিল ব্যক্তি খাত থেকে। আর সরকার অর্থায়ন তিন লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট বিনিয়োগের ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। যা মোট বিনিয়োগের ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। এছাড়া পরিকল্পনা মেয়াদ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার ৬১০ কোটি টাকা এবং গড় রিজার্ভ এক হাজার ৩২০ কোটি টাকার লক্ষ্য ছিল। ২০১১ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ২০১৫ সাল নাগাদ সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ জিডিপির ৩২ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ওই বছর বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৪ শতাংশ। কিন্তু মধ্যবর্তী মূল্যায়নে দেখা গেছে, চার বছর পর এখন সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাকি এক বছরে তা তিন শতাংশ বাড়িয়ে ৩২ শতাংশে উন্নীত করা যে সম্ভব হবে না। আগামী অর্থবছর সরকারী বিনিয়োগ সাড়ে সাত শতাংশে উন্নীত করার কথা। সেটি এখন আছে ছয় দশমিক নয় শতাংশে। আর বেসরকারী বিনিয়োগ ২৫ শতাংশে নেয়ার কথা আগামী এক বছরের মধ্যে। যেটি এখন অবস্থান করছে ২১ দশমিক চার শতাংশে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব খাতে লক্ষ্য পূরণ হয়নি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেসব খাতে গুরুত্ব দেয়া হবে। যেমন সদ্য মূল্যায়িত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতিবছর গড়ে সাত দশমিক তিন শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আট শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ১৮ শতাংশ। তাছাড়া অর্থবছর ১৩ তে পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল সাত দশমিক দুই শতাংশ, কিন্তু অর্জিত হয়েছে ছয় শতাংশ। চার অর্থবছরে গড়ে ছয় দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ অবস্থায় পরিকল্পনার শেষ বছরে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না।
×