ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জননিরাপত্তার সন্ধানে

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

জননিরাপত্তার সন্ধানে

একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সমবেত কণ্ঠে প্রচারিত হতো গান- ‘সারা বাংলা জেলখানা।’ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে দখল করে কারাগারে পরিণত করেছিল। বাঙালী নিধনে মত্ত হয়ে তারা উল্লাসে মেতেছিল। তাদের সহযোগী হিসেবে গঠন করেছিল রাজাকার-আলবদর, আলশামসসহ শান্তি কমিটি। দেশজুড়ে সহিংসতা, নাশকতার বিষবাষ্প ঢেলে সারা বাংলাকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছিল। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে যেন বিএনপি ও জামায়াত জোট মিলে সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করার জন্য সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ রোপণ করছে। নিরীহ মানুষকে বোমা ও আগুনে পুড়িয়ে মারার মতো নৃশংস পথ তারা অবলম্বন করে। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরা মূলত নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন করছে। যারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে, সারাদেশকে অবরুদ্ধ করে সরকারের পতন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা দেশ ও জাতির শত্রু। এদের পরিচয় কেবল সন্ত্রাসী। কোন রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স পেতে পারে না। নির্বিচারে সাধারণ মানুষ, বাস, ট্রাক, সিএনজিচালক ও হেলপার, স্কুলশিক্ষার্থী হত্যা করার মতো শক্তিমত্তা প্রদর্শন করছে। অশুভশক্তির এই অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশবাসী জানে, অবরোধের নামে যারা মানুষ খুন করছে, তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা পাকিস্তানী সেনাদের মতোই চায় বাংলার মাটি, মানুষ নয়। তাই মানুষ হত্যা করে তারা জানান দিচ্ছে, ইচ্ছে করলে সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হত্যা করতেও তারা পিছপা হবে না। পাকিস্তানী স্টাইলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিকাশ ঘটানো হচ্ছে অনেকদিন ধরে। অবরোধ আহ্বানকারীরা তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ চালানোর সহায়ক শক্তি ছিল। সেই জঙ্গী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সেসব সংগঠনের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায় দেশকে। মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী শক্তি দমনের কাজটি রাষ্ট্র ও সরকারের। কিন্তু তারা ‘দেখিনা কী করে’র মতো অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করছে- এমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি সরকারের টনক নাড়াতে সহায়ক হয়েছে। জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকার যৌথবাহিনী গঠন করেছে। এর প্রয়োজন ছিল আরও আগেই। কারণ জঙ্গীরা তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে ইতোমধ্যে দুই ডজনের বেশি পুলিশকে হত্যা করেছে; তাই জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও রাষ্ট্রের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অঙ্গীকারও করেছেন আইজিপি। বিজিবিপ্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, নাশকতাকারীদের দেখলেই ব্যবস্থা নেবেন। র‌্যাবের ডিজিও ঘোষণা দিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। দেশবাসীও চায়, বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে, সম্পদ ধ্বংস করে গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার করে যাওয়ার সব অপকর্ম বন্ধ হোক। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা- রুখে দেয়া জরুরী। পাশাপাশি এই জঙ্গী ও সন্ত্রাসের নির্দেশদাতাদের আইনের হাতে সোপর্দ করে বিচারের সম্মুখীন করা জরুরী।
×