ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হচ্ছেন মামুনুলরা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হচ্ছেন মামুনুলরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবার শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। ১৯৯৭ আর ১৯৯৯ সালে দুটি আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার পর স্থগিত ছিল এ টুর্নামেন্টটি। এবার আবারও ৬ দল নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসর মাঠে গড়াবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। এবার দুটি ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে এবারের আসরের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল নিবিড় অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে। ২৬ জনের প্রাথমিক দল নিয়ে গত ২ জানুয়ারি কোচ সাইফুল বারী টিটুর অধীনে অনুশীলন শুরু করে মামুনুল ইসলামরা। তখন থেকেই প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার লক্ষ্যে। ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের বাবা মারা যাওয়ার কারণে তাঁর আসা নিয়ে আছে সংশয়। সে কারণে তাঁকে ছাড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে প্রস্তুতি। আর এসব নিয়ে দলের অধিনায়ক মামুনুল আক্ষেপ কিংবা হতাশার সঙ্গেই জানালেন দেশের বাইরে উচ্চতর প্রশিক্ষণের কোন সুযোগ না থাকা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুব বেশি না হওয়ার কারণে এগোতে পারছে না বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক কোন ফুটবল আসর বাংলাদেশে হয়নি অনেকদিন। ১৫ বছর পর এবার হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসর। সেখানেও প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কোচ ক্রুইফকে ছাড়াই নামতে হয়েছে। আর মাত্র ১০ দিন পর শুরু হবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের তৃতীয় আসর। সাইফুল বারীর অধীনেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন ফুটবলাররা। ইতোমধ্যেই গত ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অনুশীলন ক্যাম্পের ১৬ দিন পার হয়ে গেছে। ২৬ ফুটবলার কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখা, শারীরিক সক্ষমতা আর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য। আসন্ন গোল্ডকাপ আসরে শ্রীলঙ্কা ছাড়া স্বাগতিক বাংলাদেশের চেয়ে বাকি ৪ দলই অনেক বেশি শক্তিশালী। ইতোমধ্যেই হওয়া গ্রুপিং করা হয়েছে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ১৫৪ র‌্যাঙ্কিংধারী মালয়েশিয়া এবং ১৭২ র‌্যাঙ্কিংধারী শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বর্তমান র‌্যাঙ্কিং ১৫৪। তবে এই র‌্যাঙ্কিংটাকে কমিয়ে আনা যায় বলে মনে করেন মামুনুল। সে জন্য ঘরোয়া ফুটবলের আসরে আগের মতোই দর্শক টেনে আনার ব্যবস্থা করা জরুরী। সেটা কিভাবে সম্ভব। মামুনুল বলেছেন, ‘মাঝখানে লীগ হতো না নিয়মিত, দক্ষ সংগঠকের অভাব ছিল। একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে লীগ নিয়মিতই হচ্ছে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি বেশ কিছু প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করেছে ফেডারেশন, এটা চলতে থাকলে দর্শক আসবেই। ১৬৫ থেকে ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৩০-১৪০-এ উঠিয়ে আনা সম্ভব যদি আমরা আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারি।’ মামুনুলের এ কথাটা হয়ত সত্যিই। গত ১৫ বছরে দক্ষ কোন সংগঠকের অভাবে দেশের ফুটবলে একটা ভাটার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন আবার ফিরিয়ে এনেছেন ফুটবলের জোয়ার। বেশ কয়েটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এমনকি সুপারস্টার লিওনেল মেসিকে বাংলাদেশে এনে নতুন প্রজন্মকে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ও উন্মাদনা সৃষ্টির মতো পদক্ষেপও নিয়েছেন সালাউদ্দিন। বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে আর্জেন্টিনা-নাইজিরিয়ার মতো দুটি দলের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। আর এসব কারণেই নতুন করে দর্শক টানতে শুরু করেছে দেশের ঘরোয়া ফুটবল আসর। নতুন করে গড়ে উঠেছে শেখ জামাল ধানম-ি ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের মতো দুটি শক্তিধর দল। আর এ দুটি দলের কথাও বলতে ভোলেননি মামুনুল। তিনি বলেন, ‘শেখ জামাল, শেখ রাসেলের মতো দল ঘরোয়া ফুটবলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এ দুটি দল দেশের বাইরেও ভাল করছে। দেশের কোচরা সাফল্য পাচ্ছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে ট্রেনিং করে আমরাও এখন সে ধরনের অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছি।’ তবে অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলে যাচ্ছেন দেশের ফুটবলের আকর্ষণ কমে যাওয়ার কারণ নতুন প্রজন্মের ফুটবলবিমুখিতা। এ জন্য মামুনুল মনে করেন সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। ক্রিকেটের প্রতি মানুষের অনেক আগ্রহ তৈরি হওয়ার কারণেই সেটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন ফুটবলের প্রতি সেই একই মনোযোগ ও আগ্রহ প্রয়োজন। এটা হলে আগামী চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ফুটবলেও অনেক পরিবর্তন আসবে। তবে এসবের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন। মামুনুল বললেন, ‘আমরা কখনও ইউরোপে অনুশীলনের সুযোগ পাইনি। ভারত অহরহ ইউরোপে যায়, এমনকি নেপালও। ইন্ডিয়ান সুপার লীগে খেলার সুযোগ না পেলেও এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার সঙ্গে থেকে অনেক শিখেছি। শারীরিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়েছি। আমাদেরও ভাল সুযোগ-সুবিধা দরকার। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া দরকার আরও বেশি।’ তবে এখন আরেকটি টুর্নামেন্ট এসে গেছে। কয়েক দিন পরেই বিদেশী দলগুলো আসতে শুরু করবে। সাইফুল বারী টিটুর অধীনে দল প্রস্তুতি নিয়ে কতদূর কি করতে পারে সেটা জানা যাবে টুর্নামেন্ট শুরুর পর। নিজেদের গ্রুপে সমশক্তির শ্রীলঙ্কা থাকলেও আছে অপেক্ষাকৃত শক্ত মালয়েশিয়া। আর ‘বি’ গ্রুপে ১১০ র‌্যাঙ্কিংধারী বাহরাইন সবচেয়ে শক্তিশালী দল এবারের আসরে। আছে ১৫৭ র‌্যাঙ্কিংধারী সিঙ্গাপুর, ১৪৪ র‌্যাঙ্কিংধারী থাইল্যান্ড। এ দলগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কঠোর অনুশীলন করে নিজেদের প্রস্তুত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুটবল দল।
×