ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাইকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল চায় সরকার, লন্ডনে সফরে প্রতিনিধি দল

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

নাইকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল চায় সরকার, লন্ডনে সফরে প্রতিনিধি দল

রশিদ মামুন ॥ নাইকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চায় সরকার। কানাডিয়ান আদালতে নাইকোর দুর্নীতির বিষয় স্বীকার করা, পাঁচ বছর কাজ না করে গ্যাসক্ষেত্র ফেলে রাখায় সম্প্রতি চুক্তি বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল লন্ডন সফর করছে। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক রবিবার এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, নাইকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে কোন বাঁধা নেই এটর্নি জেনারেল অফিস থেকে এ ধরনের একটি মাতমত জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়। আমরা বিষয়টি পেট্রোবাংলার কাছে পাঠাই। পেট্রোবাংলা এর ভিত্তিতে আমাদের কাছে চুক্তি বাতিলের অনুমোদন চাইলে আমরা তা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়ার জন্য পাঠিয়েছি। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলেই আমরা চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটে (ইকসিড) আমাদের নতুন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে। এখানকার নিম্ন আদালতে মামলা পরিচালনার জন্যও আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা চাই যে কোন মূল্যে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে। সচিব বলেন, পাঁচ বছর কাজ না করে কোন গ্যাসক্ষেত্র ফেলে রাখলে এমনিতেই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া নাইকো কানাডিয়ান আদালতে স্বীকার করেছে তাঁরা ওই সময়ের লোকদের ঘুষ দিয়ে তথ্যগোপনের মাধ্যমে কাজ নিয়েছিল। এভাবে তথ্যগোপন করে কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা অন্যায়। কাজেই আমাদের চুক্তি বাতিল করতে চাওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। জানা যায়, ২০০৩ সালে নাইকোর সঙ্গে জয়েন্টভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট (জেভিএ) সই করে বাংলাদেশ তেল গ্যাস অনুসন্ধান উৎপাদন কোম্পানি বাপেক্স। নাইকো বাপেক্সকে সঙ্গে নিয়ে ফেনী এবং ছাতক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের দায়িত্ব পায়। নাইকোর সঙ্গে জেভিএ করতে ওই দুই গ্যাসক্ষেত্রকে পরিত্যক্তও দেখানো হয়। দুই ক্ষেত্রের অপারেটর হিসেবে নাইকো গ্যাসের ৮০ শতাংশ এবং বাকি ২০ শতাংশের মালিকানা পায় বাপেক্স। ফেনীতে সফল গ্যাস উৎপাদন শুরু হলেও ছাতকে বিস্ফোরণ ঘটে। অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পুড়ে যাওয়া ছাড়াও পরিবেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে পর পর দুই দফা ব্লো-আউটের ঘটনায় ২০০৮ সালের ১৫ জুন মামলা দায়ের করে পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ সরকার। মামলায় গ্যাস এবং স্থানীয়দের সম্পদ ধ্বংস হওয়ায় নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৩ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ক্ষতিপূরণ দাবি করে পেট্রোবাংলা ঢাকার আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকেই নানা বাহানায় নাইকো শুনানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বার বার সময় চায় প্রতিষ্ঠানটি। এখন মামলাটি ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ-২ এর আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি ২০০৮ সালের ১৫ জুন দায়েরের পর প্রায় ৪ বছর পর ২০১২ এর ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটির এক তরফা শুনানির জন্য এ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে আদালত। কমিশনারের কাছে ১১ সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। এ্যাডভোকেট কমিশনার তাঁর প্রতিবেদন ২০১৩ এর ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে দাখিল করে। এর ঠিক ১০ দিন পর নাইকো আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতে (ইকসিড) তাদের এ সংক্রান্ত মামলার দোহাই দিয়ে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করে। যদিও সরকার ও পেট্রোবাংলা একই বছর ১৭ নবেম্বর এ বিষয়ে আপত্তি জানায়। জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাইয়ে ইকসিডে মোট দুটি মামলা করে। একটি গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় সংক্রান্ত (আরবি/১০/১৮) মামলা। অন্যটি টেংরাটিলা বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণের মামলা (আরবি/১০/১১)। নাইকোর প্রধান দাবি ছিল, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে গ্যাস বিল বাবদ। কিন্তু সেই বিল সরকার পরিশোধ করছে না। বিল পরিশোধের নির্দেশনা চাওয়া হয়। অথবা সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যটি হচ্ছে তাদের বাংলাদেশে অবস্থিত স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বিক্রির অনুমতি চায় তারা। শনিবার রাতে নাইকোর মামলায় নতুন আইনজীবী নিয়োগ এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্তরাজ্যে গেছেন। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানসহ তাঁর সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। সফরে প্রতিমন্ত্রী আইনজীবী ও নাইকো কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ সব বৈঠকের আয়োজন করবে। এর মধ্যে ১৯ জানুয়ারি আইনজীবী ও নাইকো কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুটি পৃথক বৈঠক করবেন প্রতিমন্ত্রী। ২০ জানুয়ারি স্কাইপির মাধ্যমে ফের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
×