ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাবির নবম সমাবর্তন

চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে অবদান রাখতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে অবদান রাখতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন, অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ, সর্বোপরি গভীর দেশপ্রেম জাগ্রত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকা- ও চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে অবদান রাখতে হবে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মাঠে নবম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, শিক্ষার সঙ্গে গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন জ্ঞানের, যা সমাজের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানান। সমাবর্তনে গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে চ্যান্সেলর বলেন, আজকের এই সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। মনে রাখবে, তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সমাজের মেহনতি মানুষের অবদান রয়েছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তিনি আরও বলেন, মনে রাখবে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও কাজের প্রতি ভালবাসার বিকল্প নেই। থাকতে হবে সততা ও নিষ্ঠা। তাহলেই তোমরা জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে। রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনে আরও বলেন, উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় সম্মিলিত প্রচেষ্টা, নিরন্তর শিক্ষা ও গবেষণাসহ জ্ঞানের আদান-প্রদানের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক জ্ঞান চর্চা ও বিকাশের শ্রেষ্ঠ পাদপীঠ এ প্রত্যাশা করেন রাবি চ্যান্সেলর। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন বক্তা হিসেবে দিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য অধ্যাপক তালাত আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুর মধ্যে শিক্ষার্থীরাই প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বড় বড় দালান-কোঠা নয়, শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষতার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচিত হয়। তাই তোমাদের যে পরিবেশ শিক্ষা দেয়া হয়েছে পেশাগত একাগ্রতা, দক্ষতা ও ব্যক্তিগত শক্তিমত্তার মাধ্যমেই তার সীমা অতিক্রম করতে হবে। তোমাদের মধ্যে যে সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে তা পুরোপুরি না হলেও অন্তত সর্বোচ্চ অনুকূল অবস্থা পর্যন্ত অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের, পিতামাতা, প্রতিষ্ঠান ও বৃহত্তর সমাজের প্রতি তোমাদের এ দায়বদ্ধতা রয়েছে। তালাত আহমেদ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য সংক্রান্ত ও এর বাইরের কর্মকা- একে অপরের পরিপূরক। বিশ্ববিদ্যালয় কোন গজদন্ত মিনার নয়। এমনকি নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে একাগ্র হওয়ার সময়ও তোমাদের বৃহত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তোমাদের জ্ঞান ও শিক্ষাকে এ পরিম-লের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। জ্ঞান এবং দক্ষতা সমাজের মঙ্গল ও বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, গৃহীত তথ্যের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা যান্ত্রিক ও অসমালোচনাত্মক হলে সমাজের কোন লাভ হবে না। তাদের সমালোচনাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন সম্পর্কে নিজস্ব দর্শন বিশ্বের বাস্তব ইস্যুগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। জ্ঞানের জগতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্বও দিতে হবে। এর আগে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠ থেকে সমাবর্তন র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অবস্থিত সমাবর্তন প্যান্ডেলে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হকের সঞ্চালনায় সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য দেন, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। এরপর তিনি বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ পিএইচডি, এমফিল এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রীপ্রাপ্তদের চ্যান্সেলরের কাছে উপস্থাপন করেন। চ্যান্সেলরের ডিগ্রী প্রদানের পর বক্তব্য দেন সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক তালাহ আহমেদ। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল উদ্বোধন ॥ এদিকে রবিবার রাবির নবম সমাবর্তনে যোগ দেয়ার আগে ছাত্রীদের জন্য আরও একটি আবাসিক হল উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি ও রাবির চ্যান্সেলর মোঃ আব্দুল হামিদ। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজার ছাত্রীদের জন্য ৫টি আবাসিক হল ছিল। এ কারণে অনেক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পেসের বাইরে থাকতে হতো। ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল নির্মাণ করেছে। নবনির্মিত এই আবাসিক ছাত্রী হলটি ছয়তলা বিশিষ্ট করা হবে।
×