ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রংপুর বিভাগে দৈনিক ক্ষতি এক শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

রংপুর বিভাগে দৈনিক ক্ষতি এক শ’ কোটি টাকা

মানিক সরকার মানিক, রংপুর থেকে ॥ টানা অবরোধ আর হরতালে দেশের ‘শস্য ভা-ার’খ্যাত রংপুর বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকার লোকসান গুনছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি কৃষিজীবী এবং খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা আর আর্থিক অসচ্ছলতা। যানবাহনসহ অধিকাংশ শিল্প-কারখানা লাগাতার বন্ধ থাকায় অনেকেই না খেয়ে মরতে বসেছেন এখন। এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চায় সবাই। নবগঠিত রংপুর বিভাগের আটটি জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এখানকার চাল আলু এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় ধরনের যোগান। শুধু এই চাল এবং আলু থেকেই প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কিন্তু বর্তমান অবরোধে পরিবহন বন্ধ থাকায় সেসব পাঠাতে না পারায় অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষি খাতে অর্থ লগ্নিকারকরা। রংপুর অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল আলু চাষীরা জানান, গত কয়েকদিন আগে গ্লানুলা জাতের যে আলুর ৮৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা বস্তা সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র সোয়া দুই থেকে আড়াই শ’ টাকায়। তার পরও তবুও তা কেনার লোক নেই। ফুল কপি যা মাত্র ক’দিন আগে বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা কেজি দরে সে কপি এখন বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই টাকা কেজিতে। একদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য যেমন পরিবহনের অভাবে বাইরে যেতে না পারায় এসবের দাম একেবারেই পড়ে গেছে, অন্যদিকে একই কারণে কিছু পণ্য যেসব বাইরে থেকে আসে সে সব না আসার কারণে মূল্য বেড়েছে যথেষ্ট। শনিবার এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাইকারি নবাবগঞ্জ ও সিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাড়তি মূল্যের চিত্র। ব্যবসায়ীরা জানান, সয়াবিন, মসুরের ডালসহ কিছু পণ্য আসে চট্রগ্রাম থেকে। কিন্তু এসব না আসতে পারায় ক’দিন আগে যে সয়াবিন কেজি বিক্রি হয়েছ ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। মসুরের ডাল ক’দিন আগেও ১শ’ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। একই অবস্থা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রেও। এতে করে চরম বেকায়দায় পড়েছেন নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পরিবহন সেক্টরে। রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজু শনিবার জনকণ্ঠকে প্রতিদিন শুধু রংপুর থেকেই ৫শ’ বাস-মিনিবাস এবং প্রায় ১৫শ’ ট্রাক রংপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করে থাকে। এ যানবাহন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় হতো। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকার শুধু পরিবহন সেক্টর থেকেই আয় হতো। কিন্তু এই অবরোধের কারণে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। তিনি জানান, এ তো গেল পরিবহন মালিকদের ক্ষতির বিষয়। এই সেক্টরের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো আমাদের শ্রমিকরা। কিন্তু পরিবহন বন্ধ থাকায় এই দরিদ্র শ্রমিকদের অনেকেই আজ না খেয়ে মরতে বসেছে। রংপুর মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন জানান, প্রতিদিন তাদের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ব্যবসাবাণিজ্যে ক্ষতি সাধন হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মওকুফ করবে না। তাই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের কাছে তার দাবি হরতালের দিনগুলোতে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব টিটো জানান, এ অঞ্চল মূলত পুরোপুরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানকার পণ্য এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে এখানকার আগাম আলু যা মাত্র ক’দিন আগেও ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে সোয়া শ’ টাকায়। এই ক্ষতি কৃষক কী করে পুষিয়ে নেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। তিনি জানান, এই হরতাল-অবরোধে এখানকার কৃষি অর্থনীতি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে।
×