ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিএসপি ফিরে পেতে আরও অগ্রগতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

জিএসপি ফিরে পেতে আরও অগ্রগতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতসহ আরও কিছু বিষয়ে অগ্রগতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)। ইউএসটিআর কার্যলয় থেকে গত শুক্রবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১ বছরে বাংলাদেশে পোশাক কারখানার নিরাপত্তার উন্নতি হয়েছে। তবে জিএসপি ফিরে পেতে আরও উন্নতি প্রয়োজন। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান বলেন, ২০১২ ও ১৩ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি পোশাক কারখানা দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে যত দ্রুত সম্ভব সব কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ দেশের পোশাক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উচিত সম্মিলিতভাবে আরও সচেষ্ট হওয়া। কারখানার নিরাপত্তার পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে তাদের হয়রানি রোধ এবং শ্রম অধিকার নিয়ে কর্মরতদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে প্রচেষ্টা জোরদারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশকে দেয়া এ্যাকশন প্ল্যান এবং ১৬টি শর্তের বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদন দিয়েছে ইউএসটিআর নেতৃত্বাধীন একটি সংস্থা। ওই প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, অগ্নিকা- ও ভবনের নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৩১টি কারখানা পুরোপুরি এবং ১৭টি কারখানা আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের কার্যালয় মনে করছে, শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে খুব শিগগির জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বাংলাদেশ। রানা প্লাজার প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, ওই দুর্ঘটনার পর পোশাকশিল্পের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত বছর শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়টি তদন্ত করতে দুই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছে আন্তর্জাতিক ক্রেতা সংগঠন ও দেশটির সরকারী কর্মকর্তারা। কয়েক শ’ কারখানার পরিদর্শনের কাজ এখনো চলছে। তবে জিএসপি পাওয়ার জন্য এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট না হলেও তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশ তার লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ মাইকেল ফরমান ওই বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি আরও সুসংহত এবং শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা ও হয়রানির খবর পাচ্ছি, তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আর এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশকে শিগগির জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ার পরও বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে তামাক ও খেলাধুলাসহ রপ্তানিযোগ্য অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত। জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে ইতোমধ্যে ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সুপারিশ মতো বাংলাদেশ তার শ্রমিক আইন-২০০৬ সংশোধন করেছে।
×