ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক

প্রয়োজনে বোমাবাজদের গুলি করতে দ্বিধা করবে না বিজিবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

প্রয়োজনে বোমাবাজদের গুলি করতে দ্বিধা করবে না বিজিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে বোমাবাজদের প্রয়োজনে গুলি করতে দ্বিধা করা হবে না। এমনকি যতদিন প্রয়োজন ততদিন মাঠে থাকবে বিজিবি। বাহিনীটির এয়ার উইং হচ্ছে। এজন্য চারটি হেলিকপ্টার কেনা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন। এদিকে দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। যে কোন ধরনের নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দেশবাসীর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে ত্রৈমাসিক এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারকে সহায়তা করতে মাঠে রয়েছে বিজিবি। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এতে করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের কোন অবনতি হচ্ছে না। অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন থাকায় সীমান্ত পাহারায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। এমনকি সীমান্তে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়ছে না। তিনি বলেন, যদিও সীমান্ত রক্ষাই বিজিবির প্রধান কাজ। কিন্তু জনগণের জানামাল রক্ষা করা, দেশের সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেয়াও বিজিবির কাজের মধ্যে পড়ে। এটি বিজিবির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। সহায়তা করছে পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। বিজিবি সব সময়ই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচীতেও বিজিবি প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে। বিজিবি সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন বোমাবাজের ছোড়া বোমায় ৫ জনের মৃত্যু হতে পারে। এমন দৃশ্য কোন বিজিবির সদস্যের নজরে এলে ওই বোমাবহনকারীকে আহত করে ধরা বিজিবির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আহত করে বোমাবাজকে ধরতে বিজিবির গুলি করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। এছাড়া বোমাবাজরা বিজিবির ওপরও হামলা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজিবির গুলি চালানো সরকারী মালামাল ও নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ঝুঁকি বিবেচনায় দেশের একুশ জেলায় বিজিবি পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া অবরোধের মধ্যে রাতে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলেও বিজিবি সহায়তা করছে। যানবাহনের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত বিজিবি অন্তত কয়েক হাজার যানবাহন নিরাপত্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে সহায়তা করেছে। বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, যতদিন প্রয়োজন বিজিবি সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করবে। ঢাকার বাইরে ১৭টি জেলায় বিজিবি সদস্যরা সর্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। প্রতিদিনি ৮০ থেকে ৮৫ প্লাটুন বিজিবি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে। আরও ৩৫টি জেলার তরফ থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সেসব জেলার জন্য ৭০ থেকে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। সেসব জায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কয়েকটি স্থানে দায়িত্ব পালনের সময় বিজিবির গাড়ির পাশে বোমা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বুধবার রাতে বিজিবির পাহারায় ৩৫ হাজার গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেছে। তিনি আরও জানান, মিয়ানমার সীমান্তে কোন সমস্যা হলে তা তাৎক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। গত জুন ও ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। আগে মিয়ানমার কোন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ধরত না। আলোচনার পর তার একবার দুই লাখ, আরেকবার চার লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। চোরাকারবারিদের জামিনে বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। পরে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবির এয়ার উইং হচ্ছে। এজন্য চারটি হেলিকপ্টার কেনা হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পাওয়া গেছে। দ্রুত হেলিকপ্টার কেনার প্রক্রিয়ার শুরু হচ্ছে। এদিকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীতে নাশকতায় দগ্ধদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই চলমান নাশকতায় কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। এর আগে তিনজন মারা গেছেন। আজ একজন মারা গেলেন। দগ্ধদের অবস্থা ভয়াবহ। চিকিৎসকরা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীও দগ্ধদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে। এ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এসব কাজে নিয়োজিতদের খুঁজে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে। নাশকতাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে প্রয়োজনে যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কোন আপোস করা হবে না। আজ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন গ্রামে যাচ্ছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। গত মঙ্গলবার রাতে যাত্রীবাহী বাসে ছুড়ে মারা পেট্রোল বোমায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী পালন করলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা মাঠে থাকছেন না। গ্রেফতার এড়াতে নতুন এই কৌশল নিয়ে সারাদেশে নাশকতা চালানো হচ্ছে। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের রাতের আঁধারে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে মানুষজনকে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে। আর আতঙ্কের কারণেই সারাদেশে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচীতেও এমন কৌশল বহাল রাখছে ২০ দলীয় জোটের নেতারা।
×