ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধে এটিএম বুথে টাকা সরবরাহে বিঘ্ন

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধে এটিএম বুথে টাকা সরবরাহে বিঘ্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপির ডাকা টানা অবরোধে নিরাপত্তাজনিত কারণে এটিএম বুথে টাকা সরবরাহ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এর ফলে অধিকাংশ এটিএম বুথে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক। ব্যাহত হচ্ছে ব্যাংকের এটিএম সেবা। একই সঙ্গে রাজধানীর বেসরকারী ব্যাংকের কোন শাখায় বেশি আবার কোন শাখায় তীব্র টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা শাখাগুলোর গ্রাহকরা টাকা তুলতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে অবরোধে মফস্বল এলাকার ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোন কোন ব্যাংকের শাখা এক সপ্তাহ ধরে গ্রাহকের চেকের দাবি মেটাতে পারছে না। টাকা স্থানান্তরে পুলিশ চেয়েও পাচ্ছে না অনেক ব্যাংকের শাখা। অবরোধের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির ডাকা হরতালে ব্যাংকিং খাতে অর্থ সঙ্কট আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ৫০ লাখের বেশি গ্রাহক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় চার হাজার এটিএম বুথের মাধ্যমে এসব সেবা নেন গ্রাহক। বিশেষ করে সাপ্তাহিক বা অন্য ছুটির দিনগুলোতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার চাপ বেশি থাকে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি এটিএম বুথ রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। জানতে চাইলে বেসরকারী ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স এ্যান্ড সার্ভিস কোয়ালিটি জিসান কিংশুক হক জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক এটিএম বুথে টাকা না থাকার বিষয়টি তাদের অবহিত আছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রে টাকা সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো এটিএম বুথে টাকা রাখে। তবে বোমা হামলা আতঙ্কে এসব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কাজ ব্যাহত হওয়ায় গ্রাহক সাময়িক অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। অবরোধের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির ডাকা হরতালে অর্থ সঙ্কট আরও বাড়বে বলে এ কর্মকর্তা জানান। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে শামসী তাবরেজ জানান, তাদের আপাতত কোন সমস্যা নেই। প্রতিটি ব্যাংকের শাখার আশপাশে এটিএম বুথ রয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এটিএম বুথে টাকা সরবরাহ করছেন। কোন কোন বুথে সাময়িক সঙ্কট থাকতে পারে। তবে তারা জানার সঙ্গে সঙ্গে সে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কয়েকটি বুথে টাকা পাওয়া যায়নি। ফলে বুথের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের শ্যামলী শাখা থেকে টাকা তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। শ্যামলী শাখার এটিএম বুথে টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, অবরোধের মধ্যে তারা অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে টাকা স্থানান্তর করছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। রাজধানীর মিরপুর এলাকার পল্লবীর কোন এটিএম বুথে টাকা না থাকায় বুধবার অনেকেই ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকা থেকে টাকা তুলেন। বেঙ্গল গ্রুপের কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, গত রাতে টাকা তুলতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফার্মগেটে ব্যাংকের কয়েকটি বুথে যাই। কিন্তু বুথে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী তাকে জানান, বুথে টাকা নেই। টাকা তুলতে তাকে যেতে হয় পান্থপথ পর্যন্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এটিএম বুথে টাকা না পাওয়ার লিখিত কোন অভিযোগ তারা পাননি। তবে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে ডিএমপির কাছে আবার চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হবে। এদিকে টানা অবরোধের কারণে ব্যাংকগুলো টাকা স্থানান্তর করতে পারছে না। এমনকি ঢাকা শহরের মধ্যেও অনেক ব্যাংক ঝুঁকি নিয়ে টাকা স্থানান্তর করা থেকে বিরত থাকছে। ফলে টাকার সঙ্কটে থাকা শাখাগুলো গ্রাহকদের অন্য শাখা থেকে টাকা তুলতে পরামর্শ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, তারা গাজীপুর টাকশাল থেকে টাকা মতিঝিল অফিসে এবং মতিঝিল অফিস থেকে তাদের বিভিন্ন শাখায় স্থানান্তর করে। অবরোধের কারণে তারা গাজীপুর টাকশাল থেকে নতুন ছাপানো টাকা মতিঝিল অফিসে আনতে পারছেন না। চট্টগ্রাম থেকেও টাকা আনা-নেয়া করতে পারছেন না। টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদর দফতরের কাছে পুলিশ চেয়েও এখনও পাচ্ছেন না। তারা রাজনৈতিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় টাকার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের শাখাগুলোতে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এক শাখা থেকে অন্য শাখায় নগদ টাকা স্থানান্তর করতে পারছে না। ফলে তীব্র হচ্ছে নগদ টাকা সঙ্কট। উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ ব্যাংকই নগদ অর্থ সঙ্কটে পড়েছে।
×