ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু

যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার এই প্রবণতাটা খারাপ

প্রকাশিত: ০৩:০২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার এই প্রবণতাটা খারাপ

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো আত্মঘাতী কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অবরোধ দিয়ে তা চালিয়ে নেয়ার মতো অবস্থায় তারা নেই, এমনকি দলগতভাবে সে সামর্থ্যও তাদের নেই। তাদের ২০ দলীয় জোটের ১৮টি দলের কোন কর্মকা- নেই অবরোধে। জামায়াত আর বিএনপি মূলত বিচ্ছিন্ন সহিংসতা করছে। যদিও জামায়াত নানা কারণে কৌশলী হয়ে কর্মসূচীতে থাকছে। সারাদিন রাজধানীতে জীবনযাত্রা ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক, রাতের অন্ধকারে অবরোধকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা করছে। কিন্তু তাতে ফল আসছে না। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রাজপথে নেই। তারা হাইড এ্যান্ড সেক খেলছে। বিএনপি হঠাৎ পরিস্থিতিতে পড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করার ঘোষণা দিলেও এখন তা প্রত্যাহারের নানা পথ খুঁজছে। বিএনপির এক নেতা দিন দুই আগে বললেন, সভা সমাবেশ করতে দিলে অবরোধ তুলে নিবেন। জনগণের কোন সমর্থন এই আন্দোলনে ছিল না বরং অযথা জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়েছে এই অবরোধ। কিন্তু বিএনপি যে দাবিতে অবরোধ দিচ্ছে সেই নির্বাচনের কোন পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। দেশে এমন কোন সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হয়নি যে এখন বিএনপির কথামতো মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচন দিতে হবে। অবরোধ স্থগিত করার সহজ একটি সুযোগ বিএনপি হাতছাড়া করেছে। বিশ্ব এজতেমার সময় তারা অবরোধ তুলে না নিয়ে ভুল করেছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে তারা কষ্ট দিয়েছে কিন্তু ইবাদত করা থেকে দমাতে পারেনি। বরং বিএনপি যে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তা আবারও নতুন করে প্রমাণিত হলো। বারবার বিভিন্ন মহল থেকে এজতেমার সময় অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ থাকলেও অনড় থেকেছেন বেগম জিয়া। এই অনড় থেকে বিএনপি বা খালেদা জিয়ার কি লাভ হলো? এজতেমাতে আসা লাখ লাখ মানুষের দুর্নাম কুড়াল বিএনপি। এই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমর্থন পেতে ভবিষ্যতে বিএনপিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এর আগেই অবরোধের সময় এবং হেফাজতের কর্মসূচীর সময় মসজিদে আগুন দিয়ে, হাজার হাজার কোরআন পুড়িয়ে বিএনপি নিজেরাই প্রমাণ করেছে তারা মুখে ইসলামের কথা বললেও আসলে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তারা ইসলাম নিয়ে কথা বলে আর আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে। প্রকৃত সত্য এই যে, বিএনপি ইসলাম ও ধর্মের বিকাশ বা উন্নয়নে নয় বরং ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা পেতে মুখে ধর্মের কথা বলে। বিশ্ব এজতেমায় অবরোধ চলমান থাকায় ধর্ম নিয়ে বিএনপির কপটতার বিষয়টি আবারও মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। এখানেই শেষ নয়- বেগম জিয়াকে ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন এই খবরটি স্বয়ং বিজেপি প্রধান অস্বীকার করেছেন। বর্তমান যুগ অনেক এগিয়েছে, টেকনোলজির কল্যাণে মুহূর্তেই পৃথিবীর একপ্রান্তের খবর আরেক প্রান্তে চলে আসে। মহাভারতে শকুনি মামা নানা মিথ্যাচার কুটিলতা করেও দুর্যোধনকে ক্ষমতায় বা সিংহাসনে বসাতে পারেননি। সাময়িকভাবে পা-বপুত্রদের বনবাসী করলেও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের বিজয় হয়। শকুনির সব চাল-ছলচাতুরী ব্যর্থ হয়। এই ঘটনা জানা যায় আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। সত্যের জয় হতে তখন যুদ্ধ পর্যন্ত হতো। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে সত্য প্রকাশ পায় আরও দ্রুত। সে কারণে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মতো বিষয় এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রণয় কাহিনী সহজে মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। তাই বিএনপি যতই ছলচাতুরী করুক তা প্রকাশ পেতে বাধ্য। ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি নিয়ে মিথ্যাচার করে বিএনপি আবারও পরাজিত হলো। মানুষের কাছে হাস্যকর হলো। দুর্নাম কুড়িয়ে নিজেদের ছোট করল। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ছোট হলো, বিএনপি আগেও এ ধরনের অনেক মিথ্যাচার করেছে। এর আগে খালেদা জিয়া আমেরিকার ওয়াশিংটন টাইমস এ নিজ নামে নিবন্ধ লিখে পরে সংসদে দাঁড়িয়ে নিজে তা অস্বীকার করেছেন। ১৯৯১ সালে আইএসআইয়ের কাছে থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার একজন সাবেক কর্মকর্তা বছরখানেক আগে তা পাকিস্তানের এক আদালতে প্রকাশ করে দেন। ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়েও ফলাও করে বিএনপির কূটনৈতিক ব্যক্তিগণ বলেছেন যে, খালেদা জিয়া মোদির শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছেন। তবে এটা সত্য মোদি নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে সবার আগে শুভেচ্ছা জানাতে যায় বিএনপি এমনকি অফিস খোলার আগেই বিএনপির প্রতিনিধিরা দূতাবাস অফিসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেই মিথ্যাচারও প্রমাণিত হয়েছে যে, খালেদা জিয়া দাওয়াত পাননি। এ রকম মিথ্যাচারের অনেক উদাহরণ বিএনপির রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে হয়ত তারা এসব কুটিলতার আশ্রয় নিয়েছেন কিন্তু তা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। সম্প্রতি বিজেপি প্রধানের ফোন ও কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি এ দুটি ঘটনাতেও ঠিক তাই হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত ১৩ জানুয়ারি সংবাদ মাধ্যমে এসেছে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতে হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। এ বিষয়টির অবতারণা হয়েছে মূলত বিএনপির কারণেই। কারণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সপ্তাহ খানেক আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন এবং সেখানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকারের সাহায্য চেয়েছেন তিনি। বেগম জিয়ার একজন সহকারীর বক্তব্যও সেখানে প্রকাশ পায়। যদিও নজরুল ইসলাম খান বা বেগম জিয়ার সহকারী শিমুল বিশ্বাস বিষয়টি পরে অস্বীকার করেননি তবে এড়িয়ে গেছেন। এভাবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোন দল অন্য দেশের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাইতে পারে কিনা তা অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। কারণ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে অন্য রাষ্ট্র চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যাই হোক, এতে এটা বলা যায় বিএনপির ভারত নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে যদিও অতীতে তারা নানা সময় ভারতের বিরোধিতা করেছেন এমন উদাহরণও অনেক রয়েছে। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন সংঘটিত হওয়ার পরও তাদের সহিংসতা অব্যাহত ছিল। গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি অনেক বিদেশমুখী, দল গোছানোর চাইতে তারা কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর দিয়েছে বেশি যদিও নিজেরাই তালগোল পাকিয়ে বদনাম কামিয়েছে এবং মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে ক্ষমতার জন্য তারা এসব করছে, দেশ বা জনগণ এখানে মুখ্য নয়। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও সেøাগান হলেও মানুষ হত্যা, বাস ট্রাক রেলে আগুন দিয়ে বিএনপি জানান দিচ্ছে আমাদের যে কোন মূল্যে ক্ষমতা চাই। বিএনপি জামায়াতের সহিংসতায় দেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং বিএনপিও জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তবে সরকার হার্ডলাইনে যাতে করে বিএনপি বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ঘটিয়ে নিজেরাই দ্বিধায় পড়েছে। বিএনপি নেত্রী কোন কর্মসূচী দিয়ে সরকারকে নামাতে পারবেন না এটা এখন ঠিকই বোঝা যাচ্ছে। এভাবে চললে নিকট ভবিষ্যতে বিএনপি নেত্রী ও তার দলের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত অন্য কোন পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। লেখক : গবেষক
×