ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমসটেককে গতিশীল করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

বিমসটেককে গতিশীল করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশীয় আঞ্চলিক জোট ‘বিমসটেক’ গতিশীল করতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছরের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়বে। মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও বিমসটেক : অগ্রযাত্রার পথ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান। এছাড়া সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিমসটেককে আরও গতিশীল করতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। দিনব্যাপী এই সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, বিমসটেকের মহাসচিব সুমিথ নাকানডালা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান এনডিসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিমসটেক ও সার্ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক আবদুল মোতালেব সরকার, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ছাড়াও কূটনীতিক, শিক্ষক এবং বাণিজ্য, জ্বালানি, যোগাযোগ ও কৃষি ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী চলতি বছরের মধ্যে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক এই জোটকে গতিশীল করতে অতীতে গৃহীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এ বছরই বাস্তবায়িত হবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি ঢাকায় জোটের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে সেখানেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে বলে জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, বিমসটেক, সার্ক ও বিসিআইএম-ইসির মতো জোটগুলোর মধ্যে থেকে বাংলাদেশ সব সময়ই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে বিমসটেককেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ এটি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে। দুই অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় বাংলাদেশ ভূ-কৌশলগতভাবে সুবিধা পেতে চায়। দুই অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে বিমসটেকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেই লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। জোটের সদস্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের কোন বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী মাসে ঢাকায় জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ক একটি টাস্কফোর্স সভা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সভায় বিমসটেকের মধ্যে জ্বালানি ও গ্রিড স্থাপনে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি এই স্মারক সই হলে জ্বালানি ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়বে। সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বিমসটেককে সামনের দিকে এগিয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিমসটেককে এগিয়ে নিতে সরকার থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। বিমসটেকের অগ্রযাত্রার মধ্যে দিয়ে এই অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। বাংলাদেশের এই লক্ষ্যের সঙ্গে বিমসটেকের মূল কর্মসূচীর সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। সে কারণে সরকার বিমসটেককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, গত বছর ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে এই সংস্থার নতুন অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। বিমসটেকের মাধ্যমে ব্যবসা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, জনশক্তি ইত্যাদি খাত বিকাশের অনেক সুযোগ রয়েছে। সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেককে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। জোটের মহাসচিব সুমিথ নাকানডালা আসিয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিমসটেককেও এগিয়ে নিতে কার্যকর নেতৃত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সদস্য দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। সুমিথ নাকানডালা আরও বলেন, ২০১৫ সাল বিমসটেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি চলতি বছরে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ক চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে পারব। বিমসটেক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও জানান নাকানডালা। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কৌশলগত অবস্থান, প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নিরিখে বিমসটেক অঞ্চলকে মানসম্পন্ন অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, বিমসটেক নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। গত দুই বছরে এই সংস্থার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। আবদুল মোতালেব সরকার বলেন, বিশ্বের ২২ শতাংশ জনগণ বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বসবাস করেন। সে হিসেবে এটি একটি অনেক বড় সংস্থা। বিমসটেক এগিয়ে নিতে হলে প্রতিটি দেশেরই রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, বিমসটেকের দেশগুলো বঙ্গপোসাগর অঞ্চলের পাড়ে অবস্থিত বলে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক ও দুর্যোগ পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি রয়েছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় বিমসটেক সদস্য দেশগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গত বছর অক্টোবরে ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় চালু হওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম সেমিনার। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিআইএসটি-ইসি) গড়ে তোলা হয়। সে বছরই মিয়ানমার সদস্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর এর নতুন নাম হয় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিআইএমএসটি-ইসি)। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপাল ও ভুটান সদস্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর চূড়ান্তভাবে এই জোটের নাম হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক)। তবে সদস্য বাড়লেও জোটের সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখনও তেমন সাফল্য পায়নি বিমসটেক। ২০০৪ সালে সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার ১৪টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করার পাশাপাশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের বিষয়ে একমত হলেও এখনও সেটা হয়নি।
×