ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল অবরোধ ঠেকাতে পারেনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী জনস্রোত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল অবরোধ ঠেকাতে পারেনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী জনস্রোত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল অবরোধও ঠেকাতে পারেনি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানমুখী জনস্রোত। শুধু ঢাকাই নয় ঢাকার আশপাশের প্রত্যেকটি জেলা থেকে দলে দলে মানুষ সমবেত হন। জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ সাম্প্রতিককালের সব থেকে বড় রাজনৈতিক শো ডাউনে পরিণত হয়। মানুষের পদচারণা বাদ্য ঝংকারে মুখরিত গোটা সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর আর গোটা উদ্যানজুড়ে মানুষের ঢল নেমেছিল। দুপুর দু’টায় নির্ধারিত সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। মিছিলে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। দলীয় প্রধানের দিকনির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার অঙ্গীকার করে ঘরে ফিরেছেন নেতাকর্মীরা। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার স্বাদ পায় বাঙালী। কিন্তু পূর্ণতা আসে পরের বছর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, সেখানে এই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ওইদিন জাতির পিতাকে বরণ করা হয়। অশ্রুসজল বঙ্গবন্ধু বুকে টেনে নেন প্রিয় বাংলাদেশ আর গোটা জাতিকে। সে দিক থেকে ১০ জানুয়ারি বাঙালীর কাছে ঐতিহাসিক উৎসবের দিন। কেননা পাকিস্তানী বন্দীদশামুক্ত বাংলাদেশীরা ফিরে পেয়েছিলেন তার প্রিয় নেতাকে। প্রতি বছর দিনটিতে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করলেও এবার বিশ্ব এজতেমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দু’দিন পিছিয়ে সোমবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তান উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করে দলটি। মহম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ, দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ, রমনা থানা আওয়ামী লীগ, পল্লবী রূপনগর থানা আওয়ামী লীগ, জাতীয় বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, পল্লবী থানা ছাত্রলীগ, নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগ, মুজিব সেনা ঐক্য লীগ, ১৮নং ওয়ার্ড, ৩১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, মুজিব সেনা ঐক্য লীগ, মহম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ, শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগ, ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগ, ৭নং ওয়ার্ড মতিঝিল থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৮নং ওয়ার্ড যুবলীগ এভাবে সকাল থেকেই মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে সমাবেশে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, হকার্স লীগসহ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা এবং মহানগরের সকল সংগঠন প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকেই আলাদা আলাদা মিছিলে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসেন। ঢাকার প্রত্যকটি উপজেলার সব অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসেন। তবে লক্ষ্যণীয় ছিল ঢাকার বাইরে থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি। হাজার হাজার বাস ট্রাকে চেপে নেতাকর্মীরা হরতাল অবরোধ উপেক্ষা করে সমাবেশে আসেন। ঢাকার বাইরে থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এবং মানিকগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। অন্য সমাবেশগুলোতে অনেকটা নীরবে নেতাকর্মী জড়ো হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উৎসবে ঢাকঢোল আর বাদক দল নিয়ে আসেন। প্রায় প্রত্যেকটা মিছিলের পিছনে একটি করে চার-পাঁচজনের বাদক দল ছিল। শুধু সমাবেশ স্থলেই নয় গোটা শহরজুড়েই সোমবার ঢোলের বাদ্য শোনা গেছে। বিশেষ করে রাস্তায় নামলে এক উৎসবের আমেজ ছুয়ে গেছে নগরবাসীকে। দল বেধে ঢাকার বাইরে থেকে ছুটে আসা গাড়ি বহরেও ছিল বাদক দল। বাদ্যের ঝংকার আর জয় বাংলা সেøাগান আবার সবাইকে ফিরিয়ে নেয় ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ এ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাজিপাড়ার রিক্সাচালক টেনশন ভাই থেকে শুরু করে মানিকগঞ্জের রবিউল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রউফ, নারায়ণগঞ্জের শৈলেন্দ্র নাথ, ঢাকার মুগদার রফিউল বারী থেকে সবাই মনে করেন ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপি নেত্রী নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছেন মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে এতিমদের টাকা মেরে খাওয়ার দুর্নীতি মামলা থেকে নিজে বাঁচা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় থেকে ছেলেকে রক্ষা করা আর যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে তার দোসরদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছেন। সমাবেশে আগত মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল তারা বিএনপির কোন নেতাকেই মাঠে দেখেন না। যা দেখেন তা জামায়াতের সীমিত সংখ্যক কর্মী। এরা আকস্মিক বের হয়ে বোমা মেরে, গাড়ি পুড়িয়ে আবার দ্রুত আত্মগোপনে চলে যায়। যাদের মাঠে কোন নেতাকর্মীই নেই তারা কেন আন্দোলন করতে হবে এমন প্রশ্নও তাঁদের। আগামী দিনে যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে পাশে থাকা আর বিএনপির হরতাল অবরোধকে রুখে দেয়ার জন্য ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী আহ্বান জানালে সকলে একযোগে হাত উচিয়ে তাতে জয় বাংলা বলে সায় দেন। এ সময় মায়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্ব মিথ্যাবাদী মিথ্যা কথা বলতে বলতে এবার জালে আটকিয়েছে। মিথ্যা কথা বলতে বলতে এবার ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াতি শুরু করছে। মার্কিনীদের সই জালিয়াতি করে পুরো জাতিকে লজ্জায় ডুবিয়ে দিয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি নাকি উনার খোঁজখবর নেন উনার খোঁজ নেবেন কিসের জন্য উনি তো জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসের প্রতিনিধি তার খবর কে নিতে যাবে। পুরো জাতিকে লজ্জায় ডুবানোর জন্য বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, লন্ডলে পালালেন ক্যান? লন্ডনে বসে লাদেন সাজছেন। বঙ্গবন্ধু এবং দেশের মীমাংসিত ইতিহাস নিয়ে মিথ্যা রটনার জন্য তারেক রহমানকে কুলাঙ্গার উল্লেখ করে নানক বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার বিচার আমরা দেখতে চাই। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহাম্মদ নাসিম বলেন, যখন সেনাপতির নিজেরই যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে হয় তখন বুঝতে হবে তার সমস্ত সৈনিক নিহত হয়েছে। খালেদার অসহায়ত্ব দেখে মায়া হয় উল্লেখ করে নাসিম বলেন, ২০১৯ এ নির্বাচন হবে। আর শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে নির্বাচন হবে। সেখানে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জোয়ার বিএনপিকে ভাসিয়ে দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেবে। দলের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১০ জানুয়ারির ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলেন, বেগম জিয়ার ছেলে এক উন্মাদ সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে কটূক্তি করে। বিট্রিশ সরকারকে আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, ওকে পাগলা গারদে ভর্তি করে চিকিৎসা করেন। আর না পারলে আমাদের কাছে পাঠান কি করে পাগল ঠিক করতে হয় আমরা তা ভাল করে জানি। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল এখন তা নেই। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। বেগম জিয়ার তা সহ্য হচ্ছে না। যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততাহীন আন্দোলনে টোকাই দিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে বেগম জিয়া অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে উন্নয়ন থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করছে। আফম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, বেগম জিয়া মুখে ইসলামের কথা বলেন। আর অবরোধ করে এজতেমায় বাধা হয়ে দাঁড়ান। দেশের মানুষ এবার দ্বিচারিণী হিসেবে তাকে চিনে ফেলেছে।
×