খাদ্য পণ্যের দাম কমছে। তাই হ্রাস পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পাশাপাশি অন্য পণ্য বা সেবার খরচ বাড়ছে। সে কারণে এসব খাতে মূল্যস্ফীতি ঘটছে। এতে ভারসাম্য যে রক্ষা হচ্ছে না, তা পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি এ দেশীয় পণ্যের বাজারমূল্যকে নিয়ন্ত্রিত করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ভোক্তারা একদিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস বৃদ্ধির যাঁতাকলে অবস্থান করছে, অপরদিকে চড়া দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এটাই হচ্ছে বর্তমানের বাস্তবতা। তাতে দেখা যায়, শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রে এই মূল্যস্ফীতির বেশ ফারাক বা প্রভেদ রয়েছে। গত এক বছরে খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। যে কারণে এ খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতি ঘোষণা করে পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে পূর্ববর্র্তী সময়ের চেয়ে। তবে অন্য পণ্যে তা বেড়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রী প্রদত্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে জাতীয় মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ, যা নবেম্বরে ছিল ৬.২১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে দীর্ঘদিন পর। গত বছর জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পূর্ববর্তী ২০১৩ সালে এই গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর্থিক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচকটি গত ৭ মাস ধরেই নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, এ উঠা-নামার কারণে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যে পণ্য বা সেবা কিনতে খরচ হতো ১০০ টাকা, তা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেই খাতে খরচ হয়েছে ১০৬ টাকা ১১ পয়সা, পূর্ববর্তী নবেম্বর মাসে এ হার ৬ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল। আর পূর্ববর্তী সাত মাস আগে জুন মাসে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা কার্যকর করা গেছে এর মাধ্যমে। মূলত ডিসেম্বরে খাদ্য পণ্যের দাম আরও কমে আসায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা নবেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে অনেকটাই আশাবাদী হওয়া যায় কিন্তু পাশাপাশি যদি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেত, তবে তা হতো সোনায় সোহাগা; যা গত ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ আর নবেম্বর মাসে ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
নগর পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি আর গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে বেশ ফারাক রয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে শতকরা ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী নবেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে শতকরা ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা নবেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রীর হিসেবে গরমিল না থাকলেও নগর ও গ্রামপর্যায়ে যে গরমিল, তা থেকে উদ্ধারের আস্থাটুকু বের করা সঙ্গত হয়ে পড়েছে।