ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মুন্সীগঞ্জে দাফন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল আর নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

আজ মুন্সীগঞ্জে দাফন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশে পদক পাওয়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম আর নেই (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোর পাঁচটা ৫১ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষীকে মুন্সীগঞ্জের সমষপুরে মা শায়েস্তা খানমের কবরে সমাহিত করা হবে। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। চাষী নজরুল ইসলাম শনিবার সকাল থেকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন। চিকিৎসক সৈয়দ আকরাম জানিয়েছেন, শনিবার সকাল দশটার দিকে তাঁর রক্তচাপ কমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছিল। এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবেই তাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন চাষী নজরুল। গত বুধবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সাধারণ কেবিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। গত বছরের মে মাস থেকে চিকিৎসক সৈয়দ আকরামের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। কয়েক মাস ধরে নানা ধরনের রোগেও ভুগছিলেন। এর মধ্যে কয়েকবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতিও হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি হলে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যান। চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোসলেহ উদ্দিন খান। মা শায়েস্তা খানম। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৫৫ সালে টাটানগরে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করেন প্রখ্যাত এই নির্মাতা। ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানীর সঙ্গে ‘আসিয়া’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ করেন ওবায়েদ উল হকসহ আরও অনেকের সঙ্গে। অভিনয়ও করেন কিছু ছবিতে। ১৯৭২ সালে পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি ‘ওরা ১১ জন’। ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়। চাষী নজরুল ইসলাম সব মিলিয়ে ৩৫টির ছবি নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ছয়টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রুবতারা’, ‘শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন’, ‘দেবদাস’, ‘শুভদা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘হাছন রাজা’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’ ইত্যাদি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষীকে মা শায়েস্তা খানমের কবরে সমাহিত করা হবে বলেই জানিয়েছেন তাঁর ছোট মেয়ে আন্নী ইসলাম। আজ সোমবার বিকেলে শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন এই গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চাষী নজরুল ইসলামের মরদেহ প্রথমে কমলাপুরের জসীমউদ্দীন রোডের বাসায় নেয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাদ জোহর গোপীবাগ জামে মসজিদে প্রথম ও কমলাপুর ইডেন জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে বারডেম হাসপাতালের শব হিমাগারে রাখা হয়। আজ সোমবার সকাল দশটায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখানে সহকর্মী, শিল্পী ও কলাকুশলীদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে বাদ জোহর নিয়ে যাওয়া হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। সেখানেও আরেকবার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বাসস জানায়, এফডিসির পর তাঁর মরদেহ সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে। সেখানে মা শায়েস্তা খানমের কবরে সমাহিত হবেন চাষী নজরুল।
×