ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেছো বাঘ শাবক রাখার দায়ে কাঁটাবনে এক ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

মেছো বাঘ শাবক রাখার দায়ে কাঁটাবনে এক ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী মেছো বাঘ শাবক রাখার অভিযোগে রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার এক ব্যবসায়ীকে ছয় মাসের কারাদ- প্রদান ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দ-প্রাপ্তের নাম সুবেল আলী (২৩)। শনিবার দুপুরে র‌্যাব-এর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিনটে মেছো বাঘের শাবক উদ্বারের পর এ সাজা দেন। সুবেল আলী দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের বণ্যপ্রাণীর ব্যবসা করে আসছেন। জানা যায়, শুক্রবার রাত থেকে এ অভিযান চালানো হয় ৮Ñ৪ কাঁটাবনের বেগমের বাড়িতে। এ বাড়ির দোতলার একটি কক্ষ হতে তিনটি মেছো বাঘের (ফিসিং ক্যাট) শাবক উদ্ধার করে র‌্যাব-২। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা। র‌্যাব জানায়, মেছো বাঘ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এগুলো দেখতে অনেকটা বিড়ালের মতো হলেও আকৃতিতে বড় ও হিংস্র। এগুলো মাছ শিকারে পারদর্শী বলে এদের ফিসিং ক্যাট বলা হয়। এক সময় দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে এগুলো পাওয়া গেলেও নানা কারণে এখন বিলুপ্ত প্রায়। অল্প পরিমাণে হলেও সিলেট অঞ্চলে এখনও এদের অস্তিত্ব টিকে আছে। দ-প্রাপ্ত সুবেল আলী মোবাইল কোর্টের কাছে স্বীকার করেন, বিক্রমপুরের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি এগুলো সংগ্রহ করে গোপনে এ বাড়িতে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় বিক্রির চেষ্টা করছেন। তার জন্মও কাঁটাবন এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি পশু-পাখি বেচাকেনার কাজ করছেন। কাঁটাবনের পশু-পাখি মার্কেটে ‘জেন এ্যান্ড জেরা’ নামে একটি দোকানে তিনি কাজ করেন। তবে ওই দোকান মালিক মেছো বাঘের বাচ্চার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানান। সুবেল আলী ওই কক্ষে একটি ব্রিফকেসের ভেতরে ভরে চটের বস্তায় মাঝে লুকিয়ে রাখেন। এগুলো আনুমানিক এক মাস বয়সের বাচ্চা। সুবেল আলী স্বীকার করেন, এখন তারা ব্যবসার ধরন পাল্টেছেন। অভিযানের ভয়ে দোকানে প্রকাশ্যে বন্য প্রাণী রাখেন না। আশপাশে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এগুলো লুকিয়ে রাখেন। বিশ্বাসযোগ্য কাস্টমার এলে গোপনে এগুলো বেচাকেনা করেন। তিনি এর আগেও ভাল্লুক, অজগরসহ বিভিন্ন প্রাণী একইভাবে গোপনে বিক্রি করেছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান, মিনি চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী রাখা অবৈধ হলেও অনেকে শখ করে এগুলো সংগ্রহ করেন। এ ধরনের বন্যপ্রাণী ছাড়াও টিয়া, ময়না, ঘুঘু, মুনিয়া, কালিম প্রভৃতি বন্যপাখি পোষাও দ-নীয় অপরাধ। বনে মুক্ত-স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো পাখি খাচায় বন্দী করার শখ পরিহার করা উচিত এবং এ শখ মানুষের মনের কোমলতাকে কলুষিত করে। তবে বাজারিগার, লাভবার্ড, ফিঞ্চ ইত্যাদি কেইজ বার্ড পোষা অপরাধ নয়। বন্যপ্রাণী না পোষার বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। র‌্যাবের মোবাইল কোর্ট ইতোমধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শাবকসহ পাঁচ শতাধিক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে ৬৫ জনকে দ- প্রদান করেছে। গাঁজা ব্যবসায়ীর ছয় মাসের জেল ॥ কাঁটাবনের ওই বাড়িতে অভিযানের সময় গাঁজাসহ আটক করা হয় বেগমের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০) কে। এজন্য তাকেও ছয় মাসের সাজা দেয়া হয়। র‌্যাব জানায়, বেগম ৭০ বছর বয়সে ৪ মাস আগে মারা যান। এরপর তার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০) গাঁজা ব্যবসা অব্যাহত রাখে। মোহাম্মদ আলী জানান, তার মা বেগম এখানে গত ৪০ বছর গাঁজা ব্যবসা করেছেন। কাঁটাবন মার্কেটের বিপরীতে ওই বাড়ির সরু গলিটি বেগমের গলি নামে সবাই চেনে। এখন তিনি একই ব্যবসা চালান। র‌্যাব-২ এর অভিযান পরিচালনা করেন লে. কমান্ডার সাজ্জাদ রায়হান এবং এএসপি ইয়াসির আরাফাত। বন বিভাগের প্রতিনিধি মোঃ সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধারকৃত মেছ বাঘ শাবকগুলোকে বনের উপযুক্ত স্বাভাবিক পরিবেশে উন্মুক্ত করার জন্য এগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দ-প্রাপ্তদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
×