ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডনের বিশ্লেষণ

পেশোয়ার থেকে প্যারিস, ছড়িয়ে পড়েছে ধর্মান্ধতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

পেশোয়ার থেকে প্যারিস, ছড়িয়ে পড়েছে ধর্মান্ধতা

ধর্মীয় গোঁড়ামি আজ ছড়িয়ে পড়েছে পেশোয়ার থেকে প্যারিস পর্যন্ত। মুসলিম ও অবশিষ্ট অন্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করাই যদি জিহাদীদের এজেন্ডা হয়ে থাকে তা হলে তারা বেশ চমৎকারভাবেই কাজটি করে যাচ্ছে। বার্লিন ও কোলনে মুসলিমদের সমর্থনে কয়েক হাজার সাধারণ জার্মান নাগরিক মিছিল করার ঠিক একদিন পর ফ্রান্সের শার্লি হেবদো পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছে মুসলিম জঙ্গীরা এবং এতে নিহত হয়েছেন ১২ সাংবাদিক ও পুলিশ। ড্রেসডেনে -এর আগে মুসলিমবিরোধী এক সমাবেশের প্রতিবাদে হাজার হাজার জার্মান রাস্তায় নেমে আসে। ইউরোপে ২০০৯ থেকে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও তা মুসলমানদের জন্য বেশ সাদর অভ্যর্থনার অঞ্চল হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু আল-কায়েদা ও এর শাখাভুক্ত অন্যান্য গ্রুপ গ্রহণ করেছে ভিন্ন কর্মপন্থা। তারা চাইছে, ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করতে। শার্লি হেবদোতে প্রকাশিত ইসলামের গভীর শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের প্রতিশোধ গ্রহণে প্যারিসে হামলা চালানো হয়েছে বলে বন্দুকধারীরা বলেছে। নিহতদের মধ্যে পত্রিকার সম্পাদক স্তিফেন শার্বোনিয়ে ছিলেন। তাঁকে আগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। মুসলিম সমাজের বিভিন্ন অংশের অসহিষ্ণুতার প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে পেশোয়ার থেকে প্যারিস পর্যন্ত। তালেবান শিশুদের হত্যা করছে আল্লাহর নামে। এতে তারা অনুশোচনাগ্রস্ত নয় এতটুকু। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জনতা বিনাবিচারে মেরে ফেলেছে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার স্বামীকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ইসলামকে অবমাননা করেছেন। তাদের শিশুসন্তান এ হত্যার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। সারা জীবন এ তিক্ত স্মৃতি পিছু তাড়া করবে শিশুটিকে। পাকিস্তানে দারিদ্র্য যদি এ ব্যাপক ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণ হিসেবে খাড়া করা হয় তা হলে ইরান সম্পর্কে কী বলা যায়? সেখানে সোহেল আরবীকে তার ফেসবুক পোস্টে নবীকে উপহাস করার জন্য মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। কয়েক দশক আগে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতউল্লাহ খোমেনি একই ধরনের অভিযোগে সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- জারি করেছিলেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলা অত্যন্ত বেদনায়ক ফরাসিদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সমিতি জানিয়েছে, পাকিস্তান সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান। সেখানে ২০১৪-এ ১৪ সাংবাদিক নিহত হন কর্মরত অবস্থায়। ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র প্যারিসে উগ্র মুসলিমদের মাত্র এক হামলায় নিহত হলেন কয়েক সাংবাদিক। জার্মানিতে চরম ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সমর্থনে যারা মিছিল করেছিল ইসলামী চরমপন্থীদের হুমকি বিষয়ে তারাও যে সজাগ ছিলেন এমন নয়। পিউ রিসার্চ গ্লোবাল এ্যাটিচিউডস ২০১৩ সালে বসন্তের এক জরিপে বলেছে যে, ৯৫ শতাংশ জার্মান মনে করে, তাদের দেশের জন্য চরমপন্থী মুসলমানরা হুমকিস্বরূপ। কিন্তু এখনও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা মুসলিম ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে জার্মানরা মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মিছিল করে। একইভাবে, ৯৪ শতাংশ ফরাসি এবং ৮৮ শতাংশ ব্রিটিশ মনে করে মুসলিম চরমপন্থীরা তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ সত্ত্বেও ইউরোপীয় মুসলমানরা স্বাধীনভাবে বাস করছে এবং শিক্ষা, শিল্প ও সরকারে সফলতা দেখাচ্ছে। ইউরোপে জাতিগত পক্ষপাতিত্ব নেই তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ কি এ পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত? এসব দেশে তো জাতিগত, সম্প্রদায়গত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা খোলামেলাভাবে বৈষম্যের শিকার। -ডন অনলাইন।
×