ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি

উত্তরাধিকার সূত্রেই বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি অখ- পাকিস্তান হতে পেয়েছিল। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে একান্তভাবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট। হিটলার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বেশ পটু ছিলেন। জার্মানির রাজনীতিতে হিটলারের উত্থান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত সব কিছুই তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কার্যকর করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হলে সেই রাষ্ট্রের যে সকল অবাঙালী কর্ণধার বা নেতা ছিলেন তাঁরা ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই এসেছিলেন সমাজের এলিট শ্রেণী হতে। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোন যোগাযোগই ছিল না। তবে অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগ কিছু নেতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এদের মধ্যে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অন্যতম। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে দেশটির প্রথম সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ পাঞ্জাবী আমলা আর সেনাবাহিনীর প্ররোচনায় পাকিস্তানের গণপরিষদ অবৈধভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। তাঁকে ধারণা দেয়া হয়েছিল এ সংবিধান কার্যকর হলে আমলা আর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে পড়বে। এই সময় পাকিস্তানের রাজধানী ছিল করাচীতে আর পাকিস্তানের গণপরিষদের স্পীকার ছিলেন বাঙালী মৌলভী তমিজুদ্দিন খান। তিনি এই ষড়যন্ত্রমূলক গণপরিষদ বাতিলের বিরুদ্ধে সিন্ধু হাইকোর্টে মামলা করেন এবং জয়ী হন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করলে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিন্ধু হাইকোর্টের রায়কে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে খারিজ করার ব্যবস্থা হয়। সেই থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র হিসেবে অকার্যকর হওয়ার যাত্রা শুরু। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ববঙ্গে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৯টি আসনের মধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়। এটিই ছিল পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচন। সেই নির্বাচনে মুসলিম লীগ মাত্র দশটি আসনে জয়ী হয় এবং বস্তুতপক্ষে এই একটি নির্বাচনেই পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা মুসলিম লীগের মৃত্যু হয়। ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলায় সরকার গঠন করে। পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচনে মুসলিম লীগের এই শোচনীয় পরাজয় কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠী কখনও মেনে নিতে পারেনি। কিছুদিন না যেতেই তাদের প্ররোচনায় পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বাঙালী অবাঙালী দাঙ্গা সৃষ্টি করা হয় এবং তার সঙ্গে যোগ হয় উগ্র ভারতবিরোধী প্রচারণা। মন্ত্রিসভা গঠনের ৪৮ দিনের মাথায় গবর্নর গোলাম মোহাম্মদ ফজলুল হকের মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে পূূর্ববঙ্গে গবর্নরের শাসন জারি করেন। পাকিস্তান নামক দেশটির কফিনে শেষ পেরেকটুকু ঠুকে দেন জেনারেল ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো যখন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর তাঁরা এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ১৯৫৪ সাল থেকে যে পাকিস্তানে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলে আসছে তা সে দেশে এখনও চলে আসছে। সেই দেশটি এখন শুধু একটি অকার্যকর রাষ্ট্রই নয় পতিত রাষ্ট্রও বটে! বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জনক খন্দকার মোশতাক। মোশতাক বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেলের সঙ্গে কুমিল্লা হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জহুরুল কাইয়ূমের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। মোশতাক তখন প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সংবাদ দেন যে যদি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়া হয় তাহলে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি কনফেডারেশন হবে। এ কাজটি তিনি করেছিলেন সরকারে তাঁর অন্য সহকর্মীদের অগোচরে। এ তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই হোয়াইট হাউস ইয়ার্সে’ উল্লেখ করেছেন। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের সতর্কতার কারণে মোশতাকের সেই যাত্রার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। একাত্তরে মোশতাকের ষড়যন্ত্র সফল না হলেও তিনি থেমে থাকেননি। এবার তার ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে মোশতাক তো ছিলেনই সঙ্গে ছিলেন প্রবাসী সরকারে তাঁর সচিব মাহবুব আলম চাষী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মেজর রশিদ, মেজর ফারুক প্রমুখ। কলকাতা ষড়যন্ত্রে মোশতাকের সচিব হিসেবে মাহবুব আলম চাষীর ভূমিকা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু অবহিত ছিলেন যে কারণে তিনি দেশে ফেরার পর তাঁকে সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের সুপারিশে তাকে কুমিল্লায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বর্তমানে বার্ড) পরিচালক করা হয়। এটি ছিল একটি কৌশলগত ভুল কারণ চাষী কুমিল্লায় বসে কী ষড়যন্ত্র করছেন তখন তা ঢাকায় বসে বোঝা সহজ ছিল না। যেহেতু মোশতাকের বাড়ি কুমিল্লায় সে অজুহাতে তিনি নিয়মিত কুমিল্লা যাতায়াত করতেন এবং বার্ডে বসে অন্যদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনক্সা প্রস্তুত করতেন। এ ব্যাপারে মেজর রশিদ ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াকে অবহিত করলে তিনি শুধু বলেন, যেহেতু তিনি এক সিনিয়র অফিসার সেহেতু তিনি এই কর্মকা-ের সঙ্গে সরাসরি যোগ দিতে পারবেন না, তবে তারা তাদের পরিকল্পনামাফিক অগ্রসর হতে পারে। আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এ সময় বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থায় যাঁরাই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরা সকলে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এয়ার কমোডর আমিনুল ইসলাম। আরও ছিলেন লে. আল ফরিদ ও লে. মোদাব্বের। তাঁরা সকলে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলেন। এএমএস সফদার যিনি জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান ছিলেন তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সরকার পক্ষের একজন গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ অফিসার ছিলেন। আবদুর রহিম যিনি পাকিস্তান রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন তাঁকে পদায়ন করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে। দুর্ভাগ্যবশত এ সব পদায়নের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানী। বঙ্গবন্ধুর সমস্যা ছিল তিনি সকলকে সহজে বিশ্বাস করতেন এবং শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করতেন। পরিণতিতে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সাল। ১৯৭৭ সালে জিয়া চাষীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। চাষী জিয়ার মুখ্য সচিবও হয়েছিলেন। পরে তিনি সৌদি আরবে এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে নিজ গাড়ির ভেতর মারা যান। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। বেগম জিয়ার ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে সরকার ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি কলকাতায় তামিল টাইগারদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য একাধিক বৈঠকও করেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট আপ্রাণ চেষ্টা করে। তিনি অজুহাত তোলেন তাঁর দলকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনে পরাজিত করা হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানত দায়ী করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনাকে। তিনি তাঁর পদত্যাগ দাবি করে দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন অথচ আবু হেনা ছিলেন বাংলাদেশের সফল নির্বাচন কমিশনারদের অন্যতম। ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর জোটকে হারানোর জন্য একযোগে ষড়যন্ত্র করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান, নির্বাচন কমিশনার আবু সাঈদ আর তিনজন সাবেক আমলা। এই আমলারা নির্বাচনের দিন প্রায় ২৪ ঘণ্টা নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা এ সময় অনেক আসনেই নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। এর আগে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে এরশাদও মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে নির্বাচনের ফল সম্পূর্ণ বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০০৬ সালের নির্বাচনটি বেগম জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য তাঁর সরকার ষড়যন্ত্রটা শুরু করেছিলেন ২০০৫ সালে যখন বিচারপতিদের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দমতো একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার আয়োজন শেষ করে এনেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণে তাঁর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় কিন্তু সৃষ্টি হয় এক-এগারো। বন্দী করা হয় শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়াকে। পরবর্তী দু’বছর দেশ শাসন করে সাংবিধানিকভাবে একটি অবৈধ সরকার। সেই অবৈধ সরকারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের মেয়াদ প্রলম্বিত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছিল ততই পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয়ী হলেও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। তাঁর এই মেয়াদে ষড়যন্ত্রকারীরা কিছুটা নিশ্চুপ থাকলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সেই ষড়যন্ত্রের চাকা আবারও সচল হয়। সারাদেশে বর্তমানে বিরোধী দলের অবরোধের নামে যে নৈরাজ্য চলছে সেটি এ ষড়যন্ত্রেরই অংশ বৈ অন্য কিছু নয়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেগম জিয়া এবং দেশের এক শ্রেণীর দেউলিয়া সুশীল সমাজ ও এতিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের দাবি করে আসছেন, তা বর্তমান সংবিধানের অধীনে সম্ভব নয়; কারণ দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করে দিয়েছেন। সুতরাং এ সংবিধান রেখে বাতিল হওয়া ব্যবস্থায় নির্বাচন সম্ভব নয়। করতে হলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে আর একটি সংবিধান তৈরি করতে হবে, তবে কিভাবে সম্ভব তা সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। গত ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে কম নাটক আর ষড়যন্ত্র হয়নি। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ঘোষণা করে এই দিন বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ঢাকায় সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছিল তারা দিনটিকে ‘গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। ঢাকার পুলিশ প্রশাসন একই সময়ে দুই জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে ঢাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিএনপি গোপনে সিদ্ধান্ত নেয় বেগম জিয়া আগের রাতে যে কোন একটা অজুহাতে তাঁর গুলশান কার্যালয় হতে বের হয়ে কৌশলে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান গ্রহণ করবেন। কিন্তু এই গোপন সংবাদটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সব ভেস্তে যায়। তবে এ তথ্য ফাঁস করার ব্যাপারে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার তেমন একটা কৃতিত্ব ছিল না, ছিল অন্যদের। রাত সাড়ে নয়টায় হঠাৎ খবর রটে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিজভী আহমদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর ড্যাবের এক ডাক্তার এসে তাঁকে স্যালাইন পুশ করেন। রিজভী যদি অসুস্থই হবেন তবে সেই ডাক্তারের উচিত ছিল তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা। বেগম জিয়া রাত সাড়ে এগারোটায় তাঁর গুলশানের কার্যালয় হতে বের হওয়ার চেষ্টা করেন রিজভী আহমদকে দেখতে যাবেন বলে। পরিকল্পনা ছিল তিনি সেখান হতে সোজা প্রেসক্লাবে চলে যাবেন এবং সেখানেই রাতযাপন করবেন। সেই মতে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়েছিল। লালগালিচাও বিছানো হয়েছিল বলে একাধিক সাংবাদিক বন্ধু জানিয়েছেন। লোটা কম্বলও এসেছিল। বহুদিন ধরে প্রেসক্লাব বিএনপির বিকল্প দফতর হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ষড়যন্ত্র সফল হলে এতদিন বেগম জিয়া তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান না করে (অথবা অবস্থান করতে বাধ্য না হলে) তিনি প্রেসক্লাবেই অবস্থান করে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করতেন। তারপর সেখান হতে ‘জনতার মঞ্চ’ স্টাইলে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলারও চেষ্টা চলত। এ যাত্রায় তাঁর এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে ষড়যন্ত্র থেমে গিয়েছে তেমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। পরবর্তী পরিকল্পনা হতে পারে কোন হাইপ্রোফাইল কিলিং এবং দেশে অবধারিতভাবে একটি চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এ জন্য ভারতের জঙ্গীগোষ্ঠী উলফা, জেএমবি, জামায়াত-শিবিরের মধ্যে বিপুল পরিমাণের অর্থের লেনদেন হয়েছে। এ কিলিংয়ের টার্গেট শুধু যে আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে তাও নয়। এসব ব্যাপারে সরকার কতটুকু সজাগ আছে তা জানা সম্ভব নয়, তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যে এক শ’ ভাগ সরকারের প্রতি অনুগত বা দায়িত্বশীল- তা মনে হয় না। বঙ্গবন্ধুর সময়ও ছিল না, তাঁর কন্যার সময়ও হয়ত নেই। ১০ জানুয়ারি, ২০১৫ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
×