ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ-বিদেশে ভীতি ছড়াতে শক্তিশালী অপরাধী চক্র

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

দেশ-বিদেশে ভীতি ছড়াতে শক্তিশালী অপরাধী চক্র

আজাদ সুলায়মান ॥ একটা গাড়িতে আগুন দিলেই টাকা দু’হাজার। ধরা পড়লে জামিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত। এ সব মামলায় তেমন কিছুই হয় না। রাজনৈতিক মামলা, আদালতে গেলেই জামিন। সাহস করে মারতে পারলেই হলো। তারপর দল ক্ষমতায় গেলে, সব ধরনের সুবিধা। এমন সব লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েই মনিরকে পাঠানো হয় শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায়। মনির অনেকটা ভয়ে ভয়েই হাতে নেয় এক বোতল পেট্রল। বিমানবন্দরের মনোলোভা কাবাবের সামনে থেকে নেয় একটা ট্র্যাক্সি ক্যাব। সেটা নিয়ে গোলচত্বরের সামনে গিয়ে গাড়িতেই পেট্রল ছিটানোর সময় চালক পারভেজ খোকন টের পেয়ে যায়। তখন তিনি চিৎকার দিতেই মনির গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টহল পুলিশ তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলে। তাৎক্ষণিক তাকে পাঠানো হয় বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। মুহূর্তেই নগদ বিচার। ছয় মাসের জেল। এটি বুধবার বিকেলের ঘটনা। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে গাড়ি পোড়ানোর সব চাঞ্চল্যকর তথ্য ও কাহিনী। বিমানবন্দর থানার পুলিশ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করতে গিয়ে নিশ্চিত হয়, দক্ষিণ খান আশকোনা উত্তরা ও মোল্লারটেক এলাকায় ঘাপটি মেরে রয়েছে হরতাল অবরোধের সময় গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মতো অপরাধ সংঘটনের জন্য একটি শক্তিশালী চক্র। তাদের মূল টার্গেট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করার মতো ঘটনা, গোটা রাজধানী অচলের চেয়েও বেশি চাঞ্চল্যকর। দেশ বিদেশে ভীতি ছড়িয়ে দেয়াই ওই চক্রের লক্ষ্য। এমন একটি এসাইনমেন্ট নিয়েই বুধবার বিকেলে মনিরকে পাঠানো হয় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায়। কিন্তু বিমানবন্দর থানার সহকারী কমিশনার আওরঙ্গজেব খান লেনিন এবং ওসি শাহ আলমের ত্বড়িত ব্যবস্থার মুখে ভেস্তে যায় ওদের পরিকল্পনা। এ বিষয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মনিরের দায়িত্ব ছিল বিমানবন্দরের ক্যানপি অথবা আশপাশের কোথাও যে কোন একটা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা। সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত পক্ষে গোলচত্বর এলাকায় যে কোন একটা গাড়িতে হলেও আগুন দিতে হবে। তারপর বুধবার বিকেলে বিমানবন্দর রেলস্টেশন সংলগ্ন মনোলোভা কাবাবের সামনে থেকে একটা ট্যাক্সি ক্যাব (ঢাকা মেট্রো-প-১৪-২৯৯৯) ভাড়া নেন মনির। চালক পারভেজ খোকনকে জানান, তিনি টঙ্গী যাবেন। বিমানবন্দর ক্যানপি এলাকা থেকে অপর এক বন্ধুকে গাড়িতে তুলে নিতে হবে। চালক পারভেজ খোকন সেভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পেছনে বসা মনির। গোলচত্বর পৌঁছতেই মনির দেখতে পান সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিপুলসংখ্যক টহল পুলিশ। পুলিশ দেখেই মনির কিছুটা ঘাবড়ে যান। কিন্তু যে করেই হোক বিমানবন্দর এলাকায় একটা গাড়িতে হলেও আগুন দিতেই হবে। নইলে টাকা মার। প্রত্যক্ষদর্শী একজন ট্রাফিক কনস্টেবল জানান, গোলচত্বরের পাশে এসেই গাড়িটি থামতে দেখা যায়। তখন হঠাৎ দেখা যায় ওই গাড়ির চালক হঠাৎ বের হয়ে আসে চিৎকার শুরু করে। ওই যাত্রীকে ধরার জন্য পুলিশের প্রতি চিৎকার করতে থাকে। ততক্ষণে গাড়ি থেকে বের হয়ে ওই যাত্রী ভোঁ দৌড়। তখন পাশেই টহলে থাকা ওসি শাহ আলম ও সহকারী কমিশনার আওরঙ্গজেব ফোর্স নিয়ে এগিয়ে যায়। তিন দিকে ধাওয়া করে তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলে। এ সময় চালক পারভেজ খোকন পুলিশকে বলেন, “গাড়িটি নিয়ে মনির টঙ্গীর কথা বলে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তুু গোলচত্বরের কাছাকাছি আসতেই আমার নাকে পেট্রোলের গন্ধ লাগে। পেছনে চেয়ে দেখি মনির একটা বোতল থেকে পেট্রোল ঢালছে সিটের ওপর। আমি দেখে তাকে কি করছে বলে জানতে চাই। সে তখন আমাকে চুপ থাকতে বলে। তখনই মনে হয়, সে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিবে। এটা নিশ্চিত হয়েই আমি পুলিশের সাহায্য চেয়ে চিৎকার করি। তারপর পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।” বিমানবন্দর থানার ওসি শাহ আলম জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময়, মনির স্বীকার করে মূলত বিমানবন্দর এলাকায় একটি গাড়িতে আগুন দেয়াই ছিল তার টার্গেট। গোলচত্বর এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশের টহল দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। তখন সে ওই গাড়িতেই পেট্রোল ছিটানোর সময় চালক চিৎকার করায় সে দৌড় দেয়। তাকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন তাকে ছয়মাসের কারাদ- প্রদান করেন। তিনি জানান, মনির তার দোষ স্বীকার করায় এ সাজা দেয়া হয়। তাকে পেট্রোল দেয় টঙ্গীর এক লোক। তার টার্গেট ছিল বিমানবন্দর এলাকায় আগুন দেয়া। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ জাতীয় নাশকতা রোধে বিমানবন্দর থানা পুলিশ ওই এলাকার কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে। উত্তরা এক সেক্টরের নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল (অব.) খালেক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সমাজসেবক ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম ও আলী আকবরের নেতৃত্বে গোটা বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশের কর্মকা- নজরদারি করা হচ্ছে।
×