ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পলায়তি...

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

পলায়তি...

সমাজে পলায়ন নিয়ে নানা কাহিনী চালু আছে। পলায়ন কত প্রকার ও কী কী তা জানার জন্য গুগল ঘাঁটার দরকার নেই; চোখ-কান খোলা রাখলেই বিচিত্র পলায়ন বিশারদদের ঘটনা নজরে পড়ে। বলাবাহুল্য সব পর্যায়ের পলায়নকারীরাই নিন্দার কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকেন। এক লোক আত্মহত্যা করলেন। অন্যেরা বলাবলি করল, বেটা পলায়নবাদী; জীবন থেকে পালিয়ে গেল। মৃত ব্যক্তির অবশ্য এই নিন্দামন্দে কিছু যায় আসে না। কিন্তু যিনি জীবিত, মানে যার হৃদযন্ত্র এখনও ধুকপুক করে প্রাণের জানান দিচ্ছে, তার পলায়নী তৎপরতা অবশ্যই তার জন্য সম্মানহানিকর। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যারা পালিয়ে যায় তাদের একটি বিশেষ অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়। সবাই জানে তা জানে, শব্দটি হলো ‘কাপুরুষ’। তবে বলে রাখা ভাল, পলায়ন আর আত্মগোপন সমার্থক নয়। সংস্কৃত ভাষায় একটি শ্লোক আছে। শ্লোকটি হলোÑ ‘য পলায়তি, স জিবতি’। যে পলায়ন করতে পারে সেই বেঁচে যায়। এই শ্লোকটিকে শিরোধার্য করেছেন বলেই একটি রাজনৈতিক দলের মহানেতা পলায়ন করেছেন হাসপাতালের শয্যা থেকে। না, হাসপাতাল তাঁর হাঁসফাঁসের কারণ ঘটায়নি। আয়েশেই ছিলেন তিনি। তবু ‘জোছনায় দেখিলেন তিনি কোন সে ভূত’। ঘুম ভেঙ্গে গেল তাঁর। চন্দ্রগ্রস্তের মতো মাঝনিশীথে দশ তলার কেবিন থেকে চুপিচুপি প্রস্থান করলেন। একই রাতে আরও দু’জনের পালানোর খবরও দেশবাসীর কাছে মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়েছে। বৃহস্পতিবারের জনকণ্ঠে ‘হাসপাতাল থেকে পালালেন রিজভী, গুলশান অফিস থেকে পাপিয়া ও রানু’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে ওই তিন ব্যক্তির পলায়ন বৃত্তান্ত জেনে গোমড়ামুখোও হেসে উঠবেন হো হো করে। রিজভী সাহেব আবার রসিক প্রাজ্ঞজন। রসিয়ে রসিয়ে এই পলায়নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এ আমার রাজনৈতিক কৌশল। আহা নিঃসঙ্গ দফতর আগলানো, টিভি ক্যামেরার সামনে আন্দোলনের গ্রান্ডমাস্টারটি যে কত্ত বড় আন্ডারগ্রাউন্ড মাস্টারÑ জাতি তা জানল না! তাঁর রসকথা অবশ্য অনেকের কানে প্রলাপের মতোই শোনাবে। বহু প্রলাপই তিনি বকেছেন। তাঁর মোক্ষম প্রলাপটি হলো, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার অপচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে পিপার স্প্রে করিয়েছিল।’ ওই স্প্রে যে প্রাণহরণকারীÑ এ জ্ঞানটি বিশ্ববাসী এই প্রথম পেলেন। হাসপাতালে কয়দিন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেও তার বিল না মিটিয়ে রাত গভীরে ভেগে যাওয়াটা ভালভাবে নেয়নি বেরসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা থানায় ডায়েরি করেছেন, সেই ডায়েরিতে পাওনা পরিশোধ না করে সটকে পড়ার তথ্যটিও টুকে দিতে ভোলেননি। এমন একটি সিরিয়াস বিষয় নিয়ে রঙ্গরসে মেতেছেন ছেলেবুড়ো সবাই। মিষ্টি পাখির নামে নাম অথচ বচনের জন্য কুখ্যাত ও মারদাঙ্গা তিনি, যিনি আবার সাবেক সংসদ সদস্য, দলনেত্রীকে একা ফেলে কিভাবে পালিয়ে যেতে পারলেন! তিনিও কি ‘রাজনৈতিক কৌশল’ খাটিয়েছেন! হায়রে কৌশল! সরকার উৎখাতের আন্দোলন করব, আর পুলিশের লাঠির বাড়ি, গ্রেফতার, জেল- এসবের মুখোমুখি হব না; স্নান করব কিন্তু চুল ভেজাব না, তা কী হয়? সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন দলের কর্মীরাও এ জাতীয় পলায়নবাজ নেতানেত্রীদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচবে!
×