ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অম্লান ১০ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

অম্লান ১০ জানুয়ারি

‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে তোমার স্বাধীন সোনার বাংলায়’Ñ বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি বেতার থেকে বেজে ওঠে ছিল এই গান। কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি তাঁর প্রিয় জন্মভূমিতে সেই ৪৩ বছর আগে। বাঙালী জাতির ইতিহাসে তাই ১০ জানুয়ারি একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাঁর আগমনের মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত দেশে বাঙালী জাতির শুরু হয়েছিল এক নতুন অভিযাত্রা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে বন্দী হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাঁকে থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে। এ সময় প্রতিমুহূর্তে তিনি প্রহর গুনেছেন মৃত্যুর। তবে বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি। তারা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। সেদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলের স্বপ্ন ছিল একসূত্রে গাথা। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন জাতির ঐক্যের প্রতীক। এই দিনে বঙ্গবন্ধুর আগমনে বদলে গিয়েছিল সবকিছু। মানুষ সব হতাশা ও দুর্ভোগ ভুলে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করেছিল। বস্তুত খুব অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের কল্যাণার্থে নানা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা, কৃষিসহ নানাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রকৃত ভিত্তি রচিত হয়েছিল সে সময়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আগমন বাঙালী জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁর আগমনের দিনটি এখনও অনেকের মনে গভীর আনন্দের স্মৃতি হিসেবে বিরাজ করছে। এ দিনটি আমাদের দেশ গড়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যোগায়। বর্তমান সময়ে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গী-ক্যাডাররা সারাদেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধ্বংসাত্মক তা-ব শুরু করেছে। এখনও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে জঙ্গী তৎপরতার প্রতি পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে। বলা চলে, বিএনপি এখন সরাসরি জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত অথচ তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বলে দাবি করে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আমাদের বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবেলায় আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত হতে হবে। এ দিন আমাদের অনেকেরই মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হয়ত আজ আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন। এই বোধটি জাতির অন্যতম বড় শক্তি। এই বোধই প্রেরণা দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার। দুর্নীতিমুক্ত-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজ আমাদের নতুনভাবে শপথ নিতে হবে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রুদের নির্মূল করা ছাড়া এদেশে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে না- এ সত্যটি বিস্মৃত হলে চলবে না। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা জরুরী। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সবার চেতনায় উজ্জীবিত, এটা সবসময়ই অম্লান। এই চেতনা সব সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রেরণা যোগাবে।
×