ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবরোধে সাড়া নেই বিএনপি নেতা কর্মীদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধে সাড়া নেই বিএনপি নেতা কর্মীদের

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জনস্বার্থে আন্দোলনের কথা বলা হলেও তিন দিনের টানা অবরোধে ৭ জনের প্রাণহানি, যানবাহন ভাংচুর ও জ্বালাও-পোড়াওসহ নাশকতামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা ছাড়া জাতি আর কিছুই পায়নি। হাঁকডাক দিয়ে কর্মসূচী দিয়ে সরকার পতনের কথা বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না নামায় এ আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি কিছুই অর্জন করতে পারেনি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার টার্গেট করে টানা অবরোধ কর্মসূচী দিলেও এ আন্দোলন ফের ব্যর্থ হওয়ায় উল্টো বিএনপিই রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়েছে। এদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচী কোন সাড়া জাগাতে না পারলেও দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন অবরোধ চলবে। বিএনপি হাইকমান্ড মনে করেছিল একদিকে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থান আর অন্যদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের সরকারবিরোধী গরম গরম বক্তব্য শুনে এবার হয়ত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী মরণ কামড় দিতে রাজপথের আন্দোলনে শরিক হবে। যে কোনভাবে এবারের কর্মসূচী সফল করতে পারলে পর পর আরও ক’টি কর্মসূচী পালন করে সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলবে। এর পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বিদেশী কূটনীতিকদের মাধ্যমে চারদিক থেকে সরকারকে চাপে ফেলে দ্রুত আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করবে। এতে একদিকে বর্তমান সরকারের অবস্থান দুর্বল করে দেয়া এবং অপরদিকে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা করার কৌশলও নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার বাইরের কিছু জেলা-উপজেলায় নাশকতা ছাড়া কোথাও বিএনপি-জামায়াত তেমন কিছু করতে পারেনি। যদিও অবরোধ কর্মসূচীর প্রথম দিন ৪ এবং দ্বিতীয় দিন ৩ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অবরোধকারীরা। এছাড়া সহস্রাধিক যানবাহন ভাংচুর ও শতাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। এমনকি রাজশাহীতে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের ওপর হামলাও চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তবে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে রেখে বিএনপি-জামায়াতের তা-ব থেকে দেশকে এবারও রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরাও হতাশামুক্ত হতে পারেনি। এদিকে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বিশ্ব এজতেমা সামনে রেখে অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার না করায় ইসলামের নামে রাজনীতি করা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে বিএনপির একটি অংশ শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এজতেমা সামনে রেখে বৃহস্পতিবারই অবরোধ কর্মসূচী স্থগিত করতে চাইলেও লন্ডন থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মাকে ফোন করে কোন অবস্থাতেই অবরোধ কর্মসূচী স্থগিত করা যাবে না বলে উল্লেখ করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্দেশনা পাঠান। তারেক রহমানের এ নির্দেশনার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বিবৃতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভিডিও বার্তায় অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা করেন। অবশ্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবার মরণ কামড় দিয়েই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ জন্য ৫ জানুয়ারি থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি দুদিন আগেই গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। টার্গেট ছিল শনিবার রাতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে গিয়ে তিনি সেখানেই থেকে যাবেন এবং আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় তার নিজ কক্ষেই অবস্থান করবেন। কিন্তু বিধি বাম। তার কৌশলটি টের পেয়ে যায় গোয়েন্দারা। তাই গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে বাধা দিয়ে আর রুহুল কবির রিজভীকে এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে দেয় পুলিশ। সেই সঙ্গে তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। এই অবস্থায় ওই রাত থেকে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়েই থেকে যান। বুধবার আদালতের এক নির্দেশে পলাতক আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর পর বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে আরও ভেঙ্গে পড়ে। অপরদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। আর অবরোধে ভোগান্তিতে পড়ে সর্বস্তরের মানুষও বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনায় মুখর হয়। এতে বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচী সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না নামায় জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এবারের অবরোধ কর্মসূচীতে মাঠে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোন কোন এলাকায় বিএনপি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে অবরোধের পক্ষে ঝটিকা মিছিল করলেও পরে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। আর দেশের মানুষ যে অবরোধ, হরতাল, ও সহিংসতা পছন্দ করছে না তা এবারের অবরোধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। সব আতঙ্ক উপেক্ষা করেই মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসায় অবরোধ পালন কালে রাজধানীসহ সারাদেশেই যানবাহন চলাচলসহ সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।
×