ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রফতানি আয় ধুঁকছে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

রফতানি আয় ধুঁকছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) রফতানি আয় ধুঁকে ধুঁকে বেড়েছে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৪৯১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ কোটি ডলার বেশি। এছাড়া একক মাস হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৪ কোটি ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ কোটি ডলার বেশি। বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। তবে, দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে এবার সেখাতের প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে শ্লথগতি। গত ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরের যা সর্বনিম্ন। তৈরি পোশাক রফতানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন। সামনের দিনগুলোতে তা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম জনকণ্ঠকে বলেন, এই অর্থবছরের শুরু থেকে তাঁরা অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসছেন। এরমধ্যে ছিল বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়া রাজধানীর কারখানাগুলোর স্থানান্তর ও রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যতম। তবে আগামী মার্চ মাসে এসে রফতানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ইবিএ) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ইতিহাসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধস আর তাজরীন ফ্যাশন ও স্টান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকা-ের পরও এটা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র। তৈরি পোশাক কারখানা স্থানান্তর আর সংস্কারের আগে এই খাতের রফতানিতে বড়ধরনের প্রবৃদ্ধি খুবই তাড়াতাড়ি আমরা আশা করতে পারি না। তবে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে এসে আমরা ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব যদি সরকার আমাদের নীতিসহায়তা, অবকাঠামোগত সহায়তা দেয়। যেসব কারখানা রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করা হচ্ছে সেগুলোতে এক্সচেঞ্জ ভিত্তিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া আর নতুন কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সেবা দেয়। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত এবং ব্যবসার অনুকূলে থাকা জরুরী। জানা যায়, গত নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রফতানি আদেশ তুলনামূলক হারে বেড়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৪৬৮ কোটি ডলার। ডিসেম্বর মাসে রফতানি বেশি হওয়ায় গত ছয় মাসের গড় রফতানি আয় বেড়েছে। এর আগের মাস (নবেম্বর মাস) পর্যন্ত পাঁচ মাসে আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ শতাংশ বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয় বৃদ্ধিতে যে সব খাতের ভূমিকা ছিল তার মধ্যে রয়েছে কৃষি পণ্য, প্রাথমিক ও প্রস্তুতকৃত প্রয়োজনীয় সামগ্রী, রাসায়নিক পণ্য, প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্য, চমড়া ও চামড়াজাত পণ্য, অন্যান্য জুতা সামগ্রী, হস্তশিল্প, উল ও উলের তৈরি পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, ম্যান মেইড ফিলামেন্টস ও স্টাপল ফাইবার, স্পেশাল ওভেন ফাইবার, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, জাহাজ শিল্প ও কম্পিউটার সেবা ইত্যাদি। এসব খাতে এই সময়ে আগের বছরের তুলনায় প্রকৌশল পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, জাহাজ শিল্পের রফতানি আয় বেড়েছে ৫৫৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, কম্পিউটার সেবার রফতানি আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ, কৃষি পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, উল ও উলের তৈরি পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ৯৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, রাসায়নিক পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ, হস্তশিল্পে রফতানি আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাথমিক প্রয়োজনীয় সামগ্রীর রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, প্রস্তুতকৃত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ, চমড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, ম্যান মেইড ফিলামেন্টস ও স্টাপল ফাইবারের রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, স্পেশাল ওভেন ফাইবারের রফতানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নিটওয়্যারের রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
×