ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়ছে

হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম। এসব কারণে ঋণের দায়সহ লোকসানের বোঝা বইতে অক্ষম এমন অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হওয়ার পথে। গত বছর ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করেন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া মানে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি। এমনিতেই বেকাররা কাজ পাচ্ছে না, তারপর ছাঁটাই হওয়ার অর্থ বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া। সেদিকেই যেন হাঁটছে আমাদের অর্থনীতি। কবে এই অবস্থার অবসান হবে কেউ বলতে পারছেন না। দেশের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পেও ছাঁটাইয়ের কথা আগেই শোনা গেছে। এই শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৩০০ টাকা নির্ধারণ করার আগে থেকেই ছাঁটাই শুরু হয়েছিল এখন তা আরও বেড়েছে। বিগত দিনের হরতাল-অবরোধ দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে বড় ধরনের ধস নামিয়ে দেয়। এতে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এদিকে দেশের জনশক্তি রফতানি কমেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ১০ হাজার কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন। ২০১২ সালে জনশক্তি রফতানি হয়েছিল ৬ লাখ ৭ হাজার। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা আরও কমে আসে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বেসরকারী পর্যায়ে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকাকে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৬০ শতাংশের বেশি হলেও দেশের মোট জনশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার। যাদের অধিকাংশই শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে লক্ষাধিক, যার বেশিরভাগের কর্মসংস্থান হয় না। ফলে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। গত এক দশকে বাংলাদেশে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ২ শতাংশের বেশি। আর এ হার বজায় থাকলে চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মোট বেকার হবে ৬ কোটি। ফলে বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবেই গণ্য হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষিত বেকার শ্রমবাজারে আসছে। যার মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ চাকরি পেলেও প্রায় ৫৫ শতাংশ বেকার থাকছে কিংবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। এমনিতেই বিশ্ব মন্দাসহ নানা কারণে সারাবিশ্বেই এখন কর্মসংস্থান সঙ্কুুচিত হচ্ছে। আমাদের দেশে কর্মসংস্থান যে হারে বাড়ছিল তা হ্রাস পেয়েছে রাজনীতির কারণে। তাই অনেকে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অবস্থার অবনতি রোধে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগ কোনটাই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিষয়টি এই সময়ে সবার জন্য উদ্বেগের কারণ। যে রাজনীতি উন্নতি ও উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে সেই রাজনীতি মানুষ চায় না। তা মানুষের স্বার্থবিরোধী, দেশের স্বার্থবিরোধী।
×