ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধের নামে নাশকতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধের নামে নাশকতা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে ৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে এ নির্বাচনটি নানাভাবে আলোচিত। এই নির্বাচনে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের জোটভুক্ত কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে ওই দলগুলো সহিংসতা, নাশকতা, মানুষ খুন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালানো, হাজার হাজার গাছ নিধন, যানবাহনে আগুন, রেলওয়ে লাইন উপড়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেÑ যা অতীতে কোন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এত ব্যাপকভাবে ঘটেনি। তবুও নির্বাচন হয়েছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বিঘেœই তার এক বছর পার করেছে। কিন্তু দেশে আবারও সেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতার চেষ্টা চলছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তির দিনটিকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত ও সংঘাতময় হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের কর্মসূচী, অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর নামে সরকার পতনের কর্মসূচী আহ্বান করে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে মিলাদুন্নবীর রাত থেকেই সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, যানবাহন ভাংচুর, হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়নি পুলিশ। সমাবেশ ও কর্মসূচী পালন করতে না দেয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচী পালনের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে গত তিন দিনে সারাদেশে ৫ জন নিহত হয়েছে। সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ পথচারীসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে শতাধিক যানবাহনে। নাশকতার পরিস্থিতি অনেকটা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ববর্তী অবস্থারই মতো। রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা আর কর্মসূচী কোনটাই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান দিতে পারে না। বরং জনদুর্ভোগই বাড়ায়। জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা কোন রাজনৈতিক দলেরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক সঙ্কটে রাজনৈতিক সমাধানই জরুরী। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এই সরকারকে ‘অবৈধ’ সরকার বলে আসছে অথচ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থানের পক্ষে জনমত আদায়ে সমর্থ হয়নি। অন্যদিকে সাংবিধানিকভাবে সরকার বৈধতা নিয়েই রয়েছে। এই বাস্তবতায় ২০ দল সরকার পতনের আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাধান খুঁজছে। কিন্তু দেশবাসী আগের অবস্থার পুনরাবৃত্তি চায় না। দেশের মানুষ এখন শান্তি, স্বস্তি ও জানমালের নিরাপত্তা চায়। আবারও যে রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টি করা হচ্ছে তার অবসান চায়। এদিকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাশকতার পথ পরিহার করার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন। নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। আজ দেশের মানুষ ভাল আছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে এটাই সবার বিশ্বাস। তবে এটাও ঠিক, রাজনৈতিক সংঘাত জিইয়ে রেখে কোন দেশ চলতে পারে না। সহিংসতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার প্রবণতা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বরং জনদুর্ভোগেরই শামিল। দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্যই রাজনৈতিক দলগুলো এই বিপজ্জনক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসবে এটা সবাই প্রত্যাশা করে। মানুষ শান্তি চায়, রাজনীতির সুস্থ পরিবেশ চায়।
×