ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পালে হাওয়া লাগিয়েছে নতুন প্রজন্মের কর্মীরা

উত্তরের জনপদেও জনসম্পৃক্ততা নেই আন্দোলন কর্মসূচীতে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

উত্তরের জনপদেও জনসম্পৃক্ততা নেই আন্দোলন কর্মসূচীতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ প্রলোভন, আর্থিক সহযোগিতা, ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়েও যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাজা প্রাপ্তদের রায়ের বিরুদ্ধে হরতালসহ আন্দোলন কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না জামায়াত বিএনপি। এমনকি পাঁচ জানুয়ারি বিরোধী দলের ভাষায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচীতে ঢাকঢোল পিটিয়েও সাধারণ কর্মীদের সম্পৃক্ত করা যায়নি। রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মসূচী দেশের মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। সাধারণ খেটে খাওয়া উত্তরাঞ্চলের মানুষ ব্যক্তি পর্যায়ে সাংসারিক জীবনে হিসেবে কষে দেখেছে যে কোন সময়ের চেয়ে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও তাঁর হাতের নাগালে রয়েছে। সরকার পতন ঘটিয়ে সে কতটা লাভের সম্মুখীন হবে। না কি আবারও উগ্রমৌলবাদীদের হাতে দেশ জিম্মি হবে। বর্তমানে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচীতে সে সম্পর্কে কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই সাধারণ মানুষ বিরোধী দলের আন্দোলনেও নেই। নতুন প্রজন্মের কর্মীরাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। তাদের আশঙ্কা যদি সরকার পতনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই নতুন প্রজন্মের কর্মীরা বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির মাঠ পর্যায়ে নতুন প্রজন্মের কর্মীরা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদে আগ্রহী বেশী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পালে হাওয়া লেগেছে। সেই হাওয়ার তোড়ে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে জামায়াত, বিএনপি ও উগ্র মৌলবাদীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলনে নতুন মুখের কোন সম্পৃক্ততার দেখা পাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষও বিরোধী দলের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচী হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ’৭১’র মতোই উত্তরাঞ্চলের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ঘুনে ধরা নেতৃত্ব বর্জন করে নতুন সৎ যোগ্য মানুষকে রাজনৈতিক মাঠে প্রধান্য দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে রংপুরবাসীর রয়েছে গৌরবগাঁথা ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতীরা সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধিতা করেছিল। তারা পরাজিত হয়। এবারেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত তাঁদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। গণতন্ত্র রক্ষার ধুয়া তুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে পরাজিত করতে আন্দোলনের নামে সকল ধরনের সহিংস্রতা চালায়। তাদের কোন ষড়যন্ত্র কাজে লাগেনি। ব্যর্থ হয়ে সহিংসতার পথ বেঁচে নেয়। নিরীহ মানুষ হত্যা করে। পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের হত্যা করে। সারাদেশে হরতাল-অবরোধ করে সাধারণ দেশবাসীকে জিম্মি করে। বাস, ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে। বিরোধী দলের তথাকথিত গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের তৃর্ণমূল পর্যায়ের সমর্থক ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। ’৭১’র পরাজিত শক্তি ’১৪ সালে এসে আন্দোলনের নামে হঠাৎ বিএনপির কাঁধে ভর করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাঁরা লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের গ্রামে-শহরে পাড়ায়-মহল্লায় আওয়ামী লীগের তৃর্ণমূল পর্যায়ের সর্মথক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর আক্রমান করে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের অতি সামান্য সমর্থক বিপদে পড়ে। এই সব সর্মথকের পাশে সেই সময় এসে দাঁড়াতে পারেনি কর্মীরা। দেশের মানুষ জামায়াত-বিএনপির এই এ অপকর্ম দেখে হতবাক হয়েছে। বর্তমানে হঠাৎ করে মাঠ পর্যায়ে সকল দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। চায়ের দোকান হাটে- বাজারে-গ্রামে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা গৌরবের ঘটনাগুলো নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে পুনরুত্থান ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের। জেলা সদরের মোগলহাট বাজারের ক্ষুদ্র চায়ের দোকানদার হানিফ চাচা (৬০) জানান, র্দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে হাটে বাজারের ঘুরে ঘুরে চায়ের দোকান করেছি। খুব কাছে হতে সাধারণ মানুষকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের উল্টোপথে হাঁটতে বাধ্য করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ এতদিন কোণঠাসা হয়ে ছিল। এখন কয়েক বছর ধরে সেই অবস্থা নেই। হাটে- ঘাটে-মাঠে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র বোঝে না। তাঁরা বোঝে শান্তিতে ঘরে থাকবে। শান্তিতে কাজ করবে। শান্তিতে সকল ধর্মের মানুষ বাস করবে। এমন গণতন্ত্র দরকার নেই, যে গণতন্ত্র যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করে। উগ্রমৌলবাদী সৃষ্টি করে। সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আফতাব হোসেন জানান, রাজনৈতিক বড় বড় নেতারা বিগত দিনে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেকায়দায় রেখে আত্মগোপন করেছিল। এমনকি তারা নিজ জেলার ভোটার পর্যন্ত হয়নি। লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, বর্তমান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মমিনুল হকসহ অনেক বিএনপির বড় বড় নেতা ঢাকাসহ অন্যত্র ভোটার হয়েছিল। সুযোগ বুঝে তারা পরে এলাকায় এসে স্থানীয়ভাবে ভোটার হয়েছে।
×