ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসির বাড়তি ফি ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

এসএসসির বাড়তি ফি ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে তা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে বলা হয়েছে, ওই অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, সচিব ও ১০ বোর্ডের চেয়ারম্যান এই মর্মে আদেশ জারি করবেন যে, সমগ্র বাংলাদেশে যে সব বিদ্যালয় সরকার নির্ধারিত এসএসসি পরীক্ষার ফি এবং আইনগতভাবে আদায়যোগ্য ফি বহির্ভূত কোন বাড়তি ফি আদায় করেছে, সেসব ফি আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফেরত দেবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। আদেশে আরও বলা হয়, ওইসব ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা পরবর্তী তিন বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি ও গবর্নিং কমিটির নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। গত ডিসেম্বরে হাইকোর্ট ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি প্রতিবেদন দেখার পর রাজধানীর অতিরিক্ত ফি গ্রহণকারী ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তলবের আদেশ দিয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ফি নিয়েছে বলে ঢাকা বোর্ডের তদন্তে ধরা পড়ে। পরে প্রকাশিত আদালতের লিখিত আদেশে দেখা যায়, ফি ফেরত দেয়া ছয়টি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সভাপতিকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ২০টি স্কুলের অধিকাংশ বিবাদীরা আদালতে হাজির ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত বিবাদীদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, উদয়ন স্কুলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, রাজউক স্কুল এ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত ফি ফেরত দেয়ায় উত্তরার দ্যা চাইল্ড ল্যাবরেটরি, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, মিরপুরের জান্নাত একাডেমি, উত্তরার আজমপুরের হাজী বিল্লাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং ওয়াই ডাব্লিউ সি এ’র প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিবৃন্দ আদালতে হাজির হননি। শুনানিতে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়কে উদ্দেশ করে আদালত বলে, সরকারের পক্ষ থেকে সবার জবাব দেননি কেন? জবাবে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, জবাবের সব অনুলিপি পাইনি। যেগুলো পেয়েছি সেগুলো দিয়েছি। কেউ কেউ সরাসরি আদালতে দাখিল করেছেন। মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে আদালত জানতে চায়, সরকারের আইন এভাবে কি লঙ্ঘন করা উচিত? এখন তো দেখছি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। মেননের পক্ষের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, নিয়মিত ক্লাসের বাইরে কোচিং ক্লাস নেয়া হয়। এই জন্য অতিরিক্ত অর্থ নিতে পারবে বলে বোর্ডের সার্কুলারে বলা আছে। সেভাবেই নেয়া হচ্ছে। আদালত বলে, কত নিতে পারবেন, সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। এর থেকে বেশি তো না। আমাদের সময় তো কোন কোচিং ছিল না। কেউ টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে শিক্ষকরা পাগলপ্রায় হয়ে যেতেন। বাড়িতে গিয়ে পড়াতেন। রেজাউল বলেন, ঠিক। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। যাই হোক, বোর্ড নোটিস দেয়ার পর অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়া হয়েছে। আদালত বলে, এখানে শুধু ২০টি স্কুলের প্রেক্ষাপট। আমরা অতিরিক্ত ফি নেয়ার ব্যাপারে সারা দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলাম। ঢাকা ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ড জবাব দিয়েছে। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ঢাকা শহরের এমনও স্কুল আছে যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছে। এটা পত্রিকায় আসেনি, অভিভাবকরা আমাদের জানিয়েছেন। এরপর শিক্ষা সচিবকে উদ্দেশ করে আদালত বলে, একটি আইনে সকল ক্ষমতা শিক্ষা বোর্ডকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা শিক্ষা বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একের পর এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এমন বহু নজির আছে। কেন এমন করেন। তখন সচিব বলেন, এভাবে বললে তো হয় না, আমি তো মাত্র তিন মাস এসেছি, সুনির্দিষ্ট করে বললে ভাল হয়। আদালত বলে, আপনারা যে সৃজনশীল পরীক্ষা চালু করেছেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে, আপনারা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার কে? কাজটা তো বোর্ডের। তখন সচিব বলেন, সৃজনশীল বিষয়টি একটি রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়। এটি সরকারী সিদ্ধান্ত। শুনানিতে আদালত বলে, আপনি তো শিক্ষা সচিব, আপনি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। আমরা যতটুকু জানি আপনি পদাধিকারবলে রাজউক ও রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সভাপতি। সচিব বলেন, আমি সভাপতি ঠিকই, কিন্তু তারা বেশি ফি নিয়েছে বলে আমি জানি না। আদালত বলে, গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ স্কুল বেশি ফি নিচ্ছে। সেখানকার অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। এভাবে ফি নিলে তাদের ওপর অসহনীয় হয়ে যাবে। সচিব বলেন, সব কিছু মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। আদালত বলে, আমরা আগে আদেশ দিয়েছি, কেউ যদি বর্ধিত ফি দিতে না পারে তাহলে তাকে পরীক্ষার ফরম পূরণে বাদ রাখতে পারবে না। শুনানিতে আদালত আরও বলে, স্কুলে কোচিং-এর নামে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। স্কুলে কোচিং করানো হলে বাইরে কোচিং সেন্টার কেন আছে। সচিব বলেন, ব্রিটেন ও আমেরিকায় কোচিং সেন্টার আছে। আদালত বলেন, আমাদের কমিউনিটি স্কুল ব্যবস্থা বিশ্বের কততম অবস্থানে রয়েছে। সচিব জবাবে বলেন, আমি জানি না। সারা পৃথিবীর ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। তখন আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ভিসি। তখন সচিব বলেন, চারজন ভিসিই হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে শিক্ষা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। আদালত বলে, ম্যানেজিং কমিটিতে থাকার ব্যাপারে এত আগ্রহ কিসের। সচিব বলেন, টাকা পয়সা আছে তো তাই। আদালত বলে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান আদালতের নির্দেশ মানে না। আপনারা কি করেন। সচিব বলেন, আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করেছি, তারপরও যদি না মানে না, তাহলে আর কি করার আছে। আদালত বলে, আদেশ না মানলে তার শাস্তি কি। সচিব বলেন, কোন শাস্তি নেই। আদালত বলে, এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আইন করা দরকার। এরপর আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ১৪ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আজ ৬ জানুয়ারি স্বশরীরে হাজির হয়ে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল।
×