ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল-অবরোধে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ॥ এফবিসিসিআই

স্বস্তির অর্থনীতিতে কালোমেঘের ছায়া

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

স্বস্তির অর্থনীতিতে কালোমেঘের ছায়া

এম শাহজাহান ॥ স্বস্তির অর্থনীতিতে ফের কালোমেঘের ছায়া পড়েছে। গত এক বছরে দ্রব্যমূল্য কমাসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকায় খুশি ছিলেন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে আসার জন্য মুখিয়ে আছেন। ঠিক সেই সময় আবারও শুরু হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের হরতাল-অবরোধ। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলছে, অর্থনীতির স্বার্থে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচী বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী না দেয়ার জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছর স্বস্তির মধ্যদিয়ে পার করেছেন উদ্যোক্তারা। এখন নতুন বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। পাশাপাশি চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের মতে, গত এক বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অপশক্তি পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু এখন ফের তা নষ্ট করা হচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এক বছর দেশের অর্থনীতিতে শতভাগ স্বস্তি বিরাজ করায় সব সূচকে ভাল করেছে বাংলাদেশ। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিবেশ বিএনপি ও জামায়াত শিবির নষ্ট করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল না থাকলে কেউ বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে না। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করে দলটি ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দিচ্ছে। এই কর্মসূচীতে জনসমর্থন না থাকলেও ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পরিত্রাণ চায়। হরতাল-অবরোধ বন্ধে সরকারকে স্থায়ী সমাধানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। হরতাল-অবরোধ বন্ধে প্রয়োজন আইন করা হোক। জানা গেছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় অর্থ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত ইতোপূর্বে গৃহীত সব সিদ্ধান্ত, আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা এবং মূল্য সন্ত্রাস বন্ধে সরকার আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১০-১৫। এছাড়া ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে চলছে। এ অবস্থায় ফের শুরু হয়েছে হরতাল-অবরোধ। গত ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধের কারণে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের তা-বের মুখে দেশের অর্থনীতি। এদিকে, অবরোধ ও হরতালে ব্যবসা-বাণিজ্য যেসব ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সেখান থেকে উত্তরণেই হবে এই সরকারের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেন, হরতালের মাধ্যমে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, গত এক বছর অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি বেড়েছে, কমেছে মূল্যস্ফীতি। ওই সময়ে মাথাপিছু আয়, সঞ্চয়, রেমিটেন্স, সরকারী বিনিয়োগ, রফতানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্য, মজুরি ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। এ কারণে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহার করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে ২০-দলীয় জোটকে আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখা এবং বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। জানা গেছে, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের অবস্থান নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রণীত এ রোডম্যাপে সাতটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এতে ২০১৫ সালের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০২১ সালের মধ্যে ২ হাজার ডলারে উন্নীত করা, জাতীয় সঞ্চয় ২০২১ সালের মধ্যে মোট জিডিপির ৩৯ শতাংশ অর্জন করা, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ শতাংশ অর্জন এবং ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যতা কমিয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
×