ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চায়ের কাপে ঝড়

‘তারেকের জন্যই দ্যাশের বারোটা বাজতাছে’

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

‘তারেকের জন্যই দ্যাশের বারোটা বাজতাছে’

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আ’লীগ সমর্থিত মহাজোট সরকারের গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব ও বিএনপি সমর্থিত ২০ দলীয় জোটের গণতন্ত্র হত্যা দিবস নিয়ে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন কর্মসূচী শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে, উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানেও। ৫ জানুয়ারির উভয় দলের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শীতের শীতলতায় উষ্ণতার চায়ের কাপেও জমে ওঠে আলোচনার ঝড়। গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকানগুলোতে জনসাধারণের মধ্যেও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্কের সঙ্গে চলে চুলচেড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষণ! মন্তব্য আবার পাল্টা মন্তব্য! কখনও আওয়ামী লীগের সমালোচনা! আবার কখনও বিএনপির সমালোচনা! সমালোচনায় মুখরিত চায়ের দোকানগুলো। শেষমেশ ওইসব আলোচনায় খোদ বিএনপির সমর্থকদের কাছ থেকেই উঠে এসেছে অতিসম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের দেয়া আপত্তিকর বক্তব্যটি। ৫ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা ও সংঘর্ষে নিহত এবং নৈরাজ্যের জন্য অনেকেই তারেক রহমানকে দায়ী করে বলেন, তারেকের জন্যই আজ দ্যাশের বারোটা বাজতাছে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, দ্যাশতো ভালই চলতেছিল। সাবেক বিরোধী দল বিএনপিতো দীর্ঘদিন থেকেই দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচী পালন করে আসছিল। এর মধ্যে কার পরামর্শে তারেক এমন আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে দ্যাশের মধ্যে অরাজাকতা সৃষ্টি করেছে। যে কারণে বিএনপির সব কর্মসূচী প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আ’লীগ। গত পাঁচ দিনে বরিশাল নগরীসহ জেলার বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে শোনা গেছে উল্লেখিত মন্তব্যগুলো। বাবুগঞ্জের আগরপুর বাজারের আবুল হোসেনের চায়ের দোকানে বসে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে যুবকেরা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় (টেলিভিশনে) খবর দেখছেন আর আ’লীগ-বিএনপির পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা করছেন। বিএনপির পক্ষে এক যুবক মন্তব্য করেন, আ’লীগ সরকার যদি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকে ভয় না পায় তাহলে তাদের সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে কেন? রেজাউল করীম নামের এক মধ্যবয়সী বৃদ্ধ ওই যুবকের উদ্দেশে পাল্টা মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি যখন আ’লীগ সরকারকে বৈধ সরকার হিসেবে মেনেই নেয়নি, তখন এ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনেই বা কেন অংশ নিল আর কেনইবা আন্দোলনের জন্য সরকারের অনুমতি নিতে গেল। গৌরনদীর বিল্বগ্রাম বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে শীতের সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ৫৫ বছরের শান্তি রঞ্জন সোম বলেন, বিএনপি কেবল ঘরে বসেই আন্দোলনের হাঁকডাক দিচ্ছে। আসলে রাজপথে নেমে আন্দোলন করার নেতা বিএনপিতে নেই। তার এ মন্তব্যের বিরুদ্ধে অপর এক যুবক বলেন, রাজপথ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উঠিয়ে নিলেই দেখা যাবে কাদের সমর্থন বেশি। আগৈলঝাড়ার নতুন বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে আলাপচারিতা করছিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে মানিক রায় নামের এক যুবক বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা যারা এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হতে চান, তাঁরা সবাই অনেক আগ থেকেই ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় বসবাস করছেন। মাঝেমধ্যে বসন্তের কোকিলের ন্যায় গ্রামে এসে ২/১ দিন থেকে আবার ঢাকায় চলে যান। ফলে এখানে দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির নেতৃত্ব সঙ্কট চলছে। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বরিশাল নগরীতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজনীতির ময়দান। মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করীম জানান, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সম্মুখ থেকে আনন্দ র‌্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।
×