ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতা নৈরাজ্যের শঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতা নৈরাজ্যের শঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা

শংকর কুমার দে ॥ কি ঘটতে যাচ্ছে ৫ জানুয়ারি তা নিয়ে সকল মহলেই উদ্বেগের শেষ নেই। নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থার। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে ‘হার্ডলাইনে’। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে বালুর ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বেগম খালেদা জিয়ার তৎপরতা। মাঠেই নামতে দেবে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা ১৬ স্পটে সমাবেশ করার ঘোষণায় অটল। এই পরিস্থিতিতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানোসহ বিভিন্ন স্পটে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নাশকতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। অনুমতি না পেলেও ‘ঢাকা অচল’ করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে যে কোন মূল্যে রাজধানীতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বিএনপিকে কোথাও সমাবেশ করতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। পক্ষান্তরে রাজধানীর ১৬ স্পটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা। দু’পক্ষই মুখোমুখি। তারা নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে সংঘর্ষ, সংঘাত অনিবার্য। সূত্র জানায়, জলকামান, এপিসি, পিপার স্প্রে, টিয়ারগ্যাস, এ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে র‌্যাব, সোয়াত, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, দাঙ্গা পুলিশ সদস্যরা। যে কোন মূল্যে জনগণের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, উত্তপ্ত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইন বেছে নিয়েছে সরকার। বিশদলীয় জোটের শতাধিক নেতা-নেত্রীর ওপর করা হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শুরু হয়েছে পুলিশের ‘বিশেষ অভিযান’। বিশেষ অভিযান চলছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলায়। গ্রেফতার করা হচ্ছে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামিদের। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যে কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবে তাকেই গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারসহ মেট্রোপলিটন কমিশনারদের কাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য করণীয় দিকনির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর হোটেল, মেস, বস্তি এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’শতাধিক জনকে। যে কোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি ক্ষমতা লাভের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আনন্দ-উৎসবমুখর দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। রাজধানীর অন্তত ১৬ স্পটে সমাবেশ করে রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। অপরদিকে আগামী ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট। এ দিনটিকে সামনে রেখেই মূলত শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিয়ে চলেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। আদালতে দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শুনানির দিন হাজিরা দিতে গেলে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিতে গিয়ে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বকশীবাজার এলাকা। সরকারী দলের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা ও তার গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে শাহবাগ ও চকবাজার থানায় পৃথকভাবে দায়ের করা দুটি মামলায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। বকশীবাজারের ঘটনার পর গাজীপুরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে পিছু হটে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট। ছাত্রলীগ সমাবেশ করতে দেবে না বলে ঘোষণা দেয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ৫ জানুয়ারির দিনটিকে সামনে রেখে মাত্র তিন দিন আগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পুলিশী নিরাপত্তার অনুরোধ জানিয়ে থানায় জেনারেল ডায়েরি করার আবেদন করতে যান তার আইনজীবী। চকবাজার থানার পুলিশ ডায়েরি করার আবেদনটি নথিভুক্ত করেননি। সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটেই সামনে আসছে ৫ জানুয়ারি। সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার চার পাশের জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ-মাওয়া এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় চেকপোস্ট, তল্লাশি অভিযান, মোবাইল টিম, টহল জোরদার করা হয়েছে। নাশকতার আশঙ্কা থাকলে বিএনপিকে অনুমতি নয় ॥ ৫ জানুয়ারিতে নাশকতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কা করে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে রাজধানীতে কোন সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো ৫ জানুয়ারির সমাবেশের আড়ালে মাঠে নামার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের দল ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দলগুলোর পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছে। সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশ শনিবারও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে রাজধানীর কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদনের পর শনিবার সকালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকায় ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিফল হন বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতাদের জানানো হয়, ডিএমপি কমিশনার গাজীপুরে এজতেমার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে সময় দিতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন ॥ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার বলেছেন, ‘যে-ই আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করবে, সেখানেই আমরা সচেষ্ট হব, নাশকতা করার চেষ্টা হলে আমরা তা প্রতিহত করব। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কোন কর্মসূচীতে বাধা না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি জিনিস স্পষ্ট করে বলতে চাই সেটা হলো-রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচী দেবে।
×