ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরে লঘুচাপ- ঢাকায় শীত উধাও ॥ উত্তরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, ঠাণ্ডা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

সাগরে লঘুচাপ- ঢাকায় শীত উধাও ॥ উত্তরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, ঠাণ্ডা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে শেষ পৌষেই রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় গরম অনুভূত হচ্ছে। অবশ্য উত্তরের অনেক জেলায় বৃষ্টির সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কলকাতাসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ঢুকেছে মেঘের আবরণ, হচ্ছে বৃষ্টি। কমে গেছে উত্তরে হাওয়ার দাপট। তবে শীত তা বলে ফুরিয়ে যায়নি। জানুয়ারিতে বয়ে যাবে দু’ থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ। তার মধ্যে থাকবে এক থেকে দু’টি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ওঠা-নামা করলেও হিমেল হাওয়ায় অনুভূত হবে মাঝারি থেকে তীব্র শীত। গত দু’দিন ধরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শনিবারও তা অব্যাহত থাকে। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সীতাকু-ে ৩২.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে রেকর্ড হয় ১৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৯.২ ও ২০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠছে ঘূর্ণাবর্ত। ঘূর্ণাবর্তটি মেঘমালার রাস্তা তৈরি করে। গুমট করে ফেলেছে শীতের প্রবাহ। অবশ্য নতুন করে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে তৈরি হয়েছে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মাঝারি ও তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি/ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা/মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। আর ফেব্রুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১টি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদ-নদীর অববাহিকা ও অন্যত্র সকালের দিকে হালকা/মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে, শনিবার রাজধানীতে অনুভূত হয় মাঝারি গরম। রোদও ছিল ঝাঁজালো। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৯.২ ও ২০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গরমে দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। মাথায় হাত দেয় গরম কাপড় বিক্রেতারা। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শনিবার দিনাজপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। গত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষজন ছিল কম। স্টাফ রির্পোটার নীলফামারী থেকে জানান, উত্তর জনপদের নীলফামারী ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় পৌষ মাসে নেমে এলো বৃষ্টি। কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টির কারণে বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। বেড়ে যায় মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ। নীলফামারীর ডিমলা আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। অপরদিকে, তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। গত দুই দিন থেকে এ অঞ্চলে চৈত্র মাসের রোদ ওঠে। সকলে ভেবেছিল পৌষের শীতে চৈত্রের আভাসে শীত বুঝি আগেই বিদায় নিয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের প্রকৃতি রাতারাতি বদলে গিয়ে শনিবার ভোর থেকে মেঘলা আকাশে বৃষ্টি দাপিয়ে দেবে তা ভাবতে পারেনি। এতে শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কৃষি বিভাগ বলছে, এই বৃষ্টি রবি ফসলে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিশেষ করে বোরো বীজতলা, মরিচ, ভুট্টাসহ শাকসবজির জমিতে উপকারে আসবে। নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়া অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধায় গত দুই দিন থেকে শৈত্যপ্রবাহ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং জেলার সর্বত্র হঠাৎ করেই কনকনে ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। শনিবার দিনভর সূর্যের আলো দেখা যায়নি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দিনের বেলাতেই আঁধার নেমে আসে। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায় লোকজনকে খড়কুটো জ্বালিয়ে গা গরম করতে দেখা যায়। এ অবস্থা অব্যাহত থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ঠা-াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কাহিল হয়ে পড়েছে প্রসূতি, শিশু, বৃদ্ধসহ গবাদিপশু-পাখি। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতের প্রকোপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত ছিন্নমূল, নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েছে। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, মাথাব্যথাসহ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গৃহপালিত পশু-পাখিরও বেহাল দশা। নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে অবিরাম বৃষ্টিতে শীত আরও বেশি জেঁকে বসেছে। শুক্রবার রাত থেকে ঠাকুরগাঁও ও তার আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি ও রোদের খেলা চলে। মাঝেমধ্যে নেমে আসে ভারি বৃষ্টি। শীতের কারণে শহরের পথঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। অতি প্রয়োজন না হলে বাসা-বাড়ির বাইরে বের হয়নি লোকজন। আর তীব্র শীতে বেড়ে যায় মানুষের দুর্ভোগ। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে সকাল থেকে টানা বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হিমেল বাতাস বাড়িয়েছে ঠা-ার মাত্রা। শ্রমজীবীরা কাজে বের হতে পারেনি। অসময়ের এই বৃষ্টির কারণে গম, সরিষা ও ভুট্টাসহ কয়েকটি ফসলের ফলন ভাল হলেও আলুরক্ষেতে পানি জমায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, এর ফলে আলু ক্ষেত্রে বাড়তে পারে ছত্রাকের আক্রমণও। সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদরের শিবরাম, সন্ন্যাসী, তালুককালোয়া, প্রসাদ কালোয়া ও রাজারহাট উপজেলার মীরেরবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার আলুর ক্ষেতে পানি জমেছে। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আবাদ নিয়ে চিন্তিত আলুচাষীরা। প্রসাদকালোয়া গ্রামের নুরুন্নবী, শিবরামের আমিনুল ইসলাম, সন্ন্যাসী আর বকরসহ কয়েকজন কৃষক জানান, দ্রুত বৃষ্টি থেমে রোদ উঠলে হয়তো ক্ষতি কম হতো। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, বিলম্বে রোপিত আলুক্ষেতে লাগানো আলু পচে নষ্ট হবে। আর বৃষ্টির সাথে হিমেল বাতাস থাকায় বাড়বে ছত্রাকের আক্রমণ। এ অবস্থায় ছত্রাকনাশক ওষুধের প্রয়োগ বেশি করতে হলে আলুর উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। আর ওষুধে কাজ না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে কৃষকদের পরিবারে। এমনিতেই এ বছর বিএডিসিসহ বিভিন্ন কোম্পানির আলু বীজে পচনের হার বেশি। একরের পর একর জমির আলু বীজ এরই মধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপরেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছিল। এই বৃষ্টির ফলে প্রায় সব রবি ফসলের উপকার হবে। তবে আলুক্ষেতে পানি জমলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
×