ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শওকত ওসমানের কলম ছিল আমৃত্যু সংগ্রামের হাতিয়ার

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

শওকত ওসমানের কলম ছিল আমৃত্যু সংগ্রামের হাতিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধুই সাহিত্যের জন্য সাহিত্যচর্চা নয়, মানুষের জন্য সাহিত্য রচনা করেছিলেন শওকত ওসমান। স্বদেশের প্রতি দায়বোধ থেকেই কলম ধরেছিলেন সমাজমনস্ক এই সব্যসাচী লেখক। একদিকে যেমন ধর্মান্ধতাকে তুমুলভাবে আঘাত করেছেন অন্যদিকে শোষকের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর সোচ্চার উচ্চারণ। লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন শোষিতের কথা। কলমকে হাতিয়ার করে আমৃত্যুসংগ্রাম করেছেন দেশদ্রোহী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার ছিল বরেণ্য এই কথাশিল্পীর ৯৮তম জন্মদিন। আর জন্মজয়ন্তীতে স্মরণসভার মাধ্যমে তাঁকে নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে আসে তাঁর বর্ণাঢ্য সাহিত্যজীবন। পৌষের বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। শওকত ওসমানের সাহিত্য ও সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। পিতৃ-স্মৃতিচারণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু। সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, শওকত ওসমান শুধু একজন সাহিত্যিক ছিলেন না; তিনি বিচরণ করেছেন সাহিত্য, সমাজ ও রাজনীতির ত্রিবিধ ভুবনে। তিনি চেয়েছিলেন এই ভূখ-ে যেন মানবিক ও আলোকিত বোধসম্পন্ন নাগরিক গড়ে ওঠে। তাই সত্যিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়তে পারলে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। এর মাধ্যমে তাঁর ধারণকৃত আদর্শ ছড়িয়ে যাবে সমাজে। তিনি আরও বলেন, শওকত ওসমানের অনিঃশেষ প্রাণশক্তি ও আজীবন যোদ্ধার মনোভাব তাঁকে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে সাহায্য করেছে। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সত্যিকারের মানুষ গড়ে তোলার ভাবনায় আলোড়িত হয়েছিলেন শওকত ওসমান। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি তাঁর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিতেন। এ কারণে তাঁর ক্লাসের শিক্ষার্থীর বাইরেও অন্য ছাত্রছাত্রীরা এসে উপস্থিত হতো সে ক্লাসে। অন্যদিকে শওকত ওসমানের সততা ছিল আকাশচুম্বী। তেমনি সাহসী ছিল তাঁর লেখনী। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বিরুদ্ধ পরিবেশের ভেতরেও তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন। তাই আমাদের স্বার্থেই তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা দিকনির্দেশনা পাব। তাঁর বইগুলো পড়লে বোঝা যায় কিভাবে তিনি জ্ঞানের সেবা দিয়েছেন। জ্ঞানচর্চার গভীরতর স্তরে বিচরণের কারণে হয়ে আছেন অনুসরণীয়। পিতৃ-স্মৃতিচারণ করে ইয়াফেস ওসমান বলেন, সকাল বেলায় আমরা খেলতে যেতাম তখন দেখতাম তিনি যোগাসন করছেন। লেখালেখির পাশাপাশি শরীরচর্চাটাও ছিল তাঁর নিত্যদিনের অভ্যাস। আবার কোন সকালে হয়ত খুব সুন্দর করে এস্রাজ বাজাতেন। ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি নিজেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এ কারণেই তাঁর রচনা এমন তীর্যক হতে পেরেছে। কখনই ফরমায়েসি লেখা লিখে সময় নষ্ট করেননি। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। পারিবারিক জীবনেও কখন সততার বাইরে যাননি। তাই সৎ জীবন যাপন করাটাও তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি। সৌমিত্র শেখর বলেন, শওকত ওসমান ছিলেন আমাদের মানুষ। তিনি জানতেন কখন রুখে দাঁড়াতে হবে। শুধুই সাহিত্যের জন্য তিনি সাহিত্যচর্চা করেননি। মূলত মানুষের কথা বলার জন্যই সাহিত্যের আশ্রয় নিয়েছেন। একদিকে সাহিত্য ও অন্যদিকে ধারণ করেছিলেন রাজনীতিকে। লেখনীর মাধ্যমে বলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, আঘাত হেনেছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে, শোষককে আঘাত করে দাঁড়িয়েছেন শোষিতের পক্ষে। তাই তাঁর লেখাকে ধারণ করে সেই আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজে। তাঁর চিন্তাকে লালন করতে পারলেই কেবল তিনি প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেন, শুধু জন্মদিন উদ্্যাপনের মাধ্যমে আমরা শওকত ওসমানকে স্মরণ করতে চাই না। অভাবী মানুষের চিকিৎসার জন্য আমরা শওকত ওসমান কল্যাণ ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করব। এটা করতে পারলে কেউ আর পয়সার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করবে না। স্মরণসভায় শওকত ওসমানকে নিয়ে লেখা আবু জাফর শামসুদ্দিনের কবিতা পাঠ করেন আহমেদ পারভেজ শামসুদ্দীন।
×