ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে ই-জগতে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে ই-জগতে

সমুদ্র হক ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটিকে বছর ছয়েক আগে ‘একটি শ্রেণী’ যেভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অপমান করছিল প্রকৃতি ও প্রযুক্তি যেন তাদেরই এই অপমান ফিরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ছাড়া জীবন চলার কোন উপায় নেই, তা তারা যে বয়সেরই হোক। শিশু থেকে বৃদ্ধ এমন কি গ্রামের কৃষক ও গাঁয়ের বধূরও প্রয়োজন প্রযুক্তি। ডিজিটাল এই বিশাল প্রযুক্তি ছোট্ট একটি অক্ষর বাংলায় হ্রস্ব-ই এবং ইংরেজীতে ‘ই’ দিয়েই বুঝে নেয়া যায়। বর্তমানের কোন প্রতিষ্ঠান ই ছাড়া অচল। সরকারী-বেসরকারী সকল অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ এমন কিছু নেই যা ইলেকট্রনিক বা ই’র আওতায় আসেনি। বাসা বাড়িতে ডেস্কটপের সঙ্গে ল্যাপটপের সমান্তরাল ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই ডেস্কটপ দ্রুত রিপ্লেস হচ্ছে ল্যাপটপে। যারা ই-জগতে প্রবেশ করেছে (তরুণ থেকে মধ্যবয়সী পর্যন্ত) তাদের হাতের নোট বুক নেট বুক ধীরে ধীরে রিপ্লেস হয়ে আসছে ট্যাব ও স্মার্ট ফোনে। বর্তমানে উন্নত স্মার্ট ফোনে কম্পিউটারের সমস্ত প্রোগ্রাম দেয়া আছে। বিশ্বের সকল ওয়েব সাইট, ইমেইল, গুগল, ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুক লিংকেড হাই ফাইভ ফ্রেন্ডসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা কিছু আছে এমন কি স্কাইপিতে বিশ্বের যে কোন স্থানে ভিডিও কলিংয়ে যোগাযোগ করা খুবই সহজ। মোবাইল অপারেটররা তো থার্ড জেনারেশন (থ্রিজি) প্রযুক্তি দিয়েছেই। এই বছর ফোর জি চালু হবে এমনটি জানিয়েছে তারা। তথ্য ও ছবি এখন ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে। সার্চ মেশিন সার্ভারে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে (স্যাটেলাইট) গিয়ে সুপারসনিকের চেয়েও কয়েক লাখ গুণ বেশি গতির প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নেয়া সহজ হয়েছে। দিনে দিনে তা আরও দ্রুততর হচ্ছে। বাংলাদেশও এই ইক্যুয়েল সুপার হাইওয়েতে পিছিয়ে নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েই যাচ্ছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র তো আছেই তা ছাপিয়ে অনেক গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে কম্পিউটার বসিয়ে ই-সেবা দেয়া হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় একটি বেসরকারী সংস্থা তাদের নারী কর্মীদের হাতে ল্যাপটপ ও সাইকেল দিয়ে গ্রামে পাঠাচ্ছে। গৃহস্থ ও কিষান বাড়ির উঠানে বসেই তারা স্কাইপির মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে সচিত্র যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। রেমিট্যান্সের বিষয়টিও মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। শহরে (অনেক গ্রামেও) শিশু-কিশোররা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে জানে। এরা কার্টুন ও ভিডিও গেমের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। ই-প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। কিছুদিন আগেও বলাবলি হতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর তরুণ-তরুণীরা ফেসবুক ব্যবহার করছে বেশি (!)। এরা লেখাপড়া ভাল করছে না। এই বিষয়টির প্রতি একমত হতে পারছে না কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সবে চাকরিতে প্রবেশ করা কয়েক তরুণ। তাদের কথা ফেসবুক ব্যবহারকারীর বড় একটি অংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। মাধ্যমিকে অধ্যয়নরতরা ফেসবুকে প্রোফাইল (এ্যাকাউন্ট) খুলে গড়ে মাস তিনেক ঘোরের মধ্যে থাকে। তারপর একটা পর্যায়ে ফেস বুক দেখে ১০ থেকে বিশ মিনিট। বড়জোর আধা ঘণ্টা। এরা বুঝতে পারে যাদের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করা হচ্ছে তারা অপরিচিত ও অনেক দূরের। ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রিয় খোলোয়াড় ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করার কোন মানেই হয় না। তাদের প্রতি আগ্রহ এমনিতেই হারিয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে, একবিংশ শতকের দেড় দশকের শুরুতে (২০১৫ সাল) দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ই-প্রযুক্তির মধ্যে (মোবাইল ফোনও ই-প্রযুক্তির অংশ) এসেছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের হিসাবে তাই বলে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি শহরে এবং বড় উপজেলাগুলোতে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীর হাতেই স্মার্ট ফোন। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার চরের ভিতরেও তরুণদের হাতে দেখা যায় ট্যাব ও স্মার্ট ফোন। গ্রামের ও শহরের প্রত্যেক মানুষের কাছে মোবাইল ফোন পার্ট অব ইউনিফর্ম (পোশাকের অংশ) হয়েছে। রাতের আকাশ থেকে যেমন হঠাৎ নক্ষত্র ছিটকে পড়ে তেমনই মোবাইল ফোন সঙ্গে না নিলে ঘরবাড়ি স্বজন বিশ্ব থেকে ছিটকে পড়তে হয়।
×