ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বাঁচানোর লক্ষ্যে

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ১ জানুয়ারি ২০১৫

 ঢাকা বাঁচানোর লক্ষ্যে

ভবনে ভারাক্রান্ত রাজধানী ঢাকার অপমৃত্যু কি আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব? জিজ্ঞাসাটি যে কোন বিবেকবান সচেতন ঢাকাবাসীরই। বসবাসের জন্য বিপজ্জনক ঢাকাকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এসব পরিকল্পনার ভেতর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নগর-মহানগর উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ও ড্যাপকে পাশ কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে যাতে নগর উন্নয়ন কর্মকা- না হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে তা নিশ্চিত করতে বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সকালে সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনে এসে তিনি এমন কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন যা ভূমিখেকো-দখলদারদের হৃদকম্প হওয়ারই মতো। পক্ষান্তরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আশায় বসতি গড়বেন দেশের কোটি দেশপ্রেমিক নাগরিক। অনেকের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যুদ্ধাপরাধীদের পরে ভূমিদস্যুদের বিচারের কথা একবার উল্লেখিত হয়েছিল। আসলে এরা তো কেবল ভূমিখেকোই নয়, রীতিমতো নদীখেকোও। রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনার কথা সংসদেই উচ্চারিত হয়েছে বার বার। এরা আইন-আদালতের তোয়াক্কা করে না। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জরিপ পর্যালোচনায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার বিষয়টি। ঢাকার ফুসফুসকে সুস্থ করে তুলতে হলে যে জলাধার স্থাপন এবং তা উদ্ধার জরুরী এটা অনুধাবনের জন্য নগরবিশারদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঢাকায় জলভাগের তুলনায় ১৯৬০ সালে নগরায়িত স্থলভাগের পরিমাণ ছিল পাঁচ গুণ বেশি। কিন্তু ৪০ বছর পর জলভাগের অনুপাত চার গুণ কমে যায়। এখন জলভাগের পরিমাণ আরও কম। গবেষকরা দেখিয়েছেন এক বছরে (২০১২ সালে) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাত হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ নষ্ট হয়েছে ঢাকার পানিদূষণের কারণে। নদীদূষণ রোধের সমান্তরালে সে কারণে নতুন জলাধার গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাই আমাদের আশান্বিত করে তোলে। তিনি স্পষ্টত বলেছেন, কোন আপোস নয়, কুড়িল ফ্লাইওভারের দু’পাশে লেক হবে। উল্লেখ করা দরকার, ঢাকার কুড়িল ফ্লাইওভারের পূর্বপ্রান্ত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু প্রকল্প রয়েছে। যা মূল পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রপার্টি ডেভেলপার তথা বহুতল ভবন ব্যবসায়ীরা আগে যেভাবে ঢাকায় জমি কিনে যত্রতত্র আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছে, প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশের পর আগামীতে সেটি আর সম্ভব হবে না। আমরা আশা করব এখন থেকে ঢাকায় পরিকল্পনাবিহীন আর একটিও ভবন নির্মাণ করা হবে না। ক্ষতির বহর কমানোই প্রাথমিক করণীয়। মহানগরীকে আরও ভারাক্রান্ত করা আগে বন্ধ হোক। এর পরের ধাপ হলো রাজধানীর খাল-বিল উদ্ধার। ঢাকা শহরে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে- এমন উদাহরণ প্রায় নেই বললেই চলে। রাজধানীর আবাসিক এলাকার যত্রতত্র হাসপাতাল নির্মাণের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনাটিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেনে চলবে এটা প্রত্যাশা করে মানুষ। দেশের রাজধানীকে আমাদের কোনভাবেই বিপদসঙ্কুল করে তোলা ঠিক নয়।
×