ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় ২০১৪

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

বিদায় ২০১৪

উত্তম চক্রবর্তী ॥ দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে আজ। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী হয়ে হাতখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। আজ মহাকালের গর্ভে মিলিয়ে যাবে বহুল আলোচিত ২০১৪। ‘যেতে নাহি দিব’Ñ এ চিরন্তন বিলাপধ্বনীর ভেতরে আবহমান সূর্য একটি পুরনো দিবসকে আজ কালস্রোতের উর্মিমালায় বিলীন করে পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পা-ুর সূর্য আজ বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। সময় যায়। সময় যাওয়ার সময় বদলে যায় অনেক কিছুই। এ হলো পরম সত্য। সময় যেন এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনের এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। সেই গতির ধারাবাহিকতায় মহাকালের প্রেক্ষাপটে একটি বছর মিলিয়ে গেল। আজ আলোড়িত আন্দোলিত বর্ষ বিদায়ের দিন। জীর্ণ ঝরা পল্লবের মতো সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ খসে পড়বে ‘২০১৪’। মধ্যরাতে নতুন বছর ২০১৫-কে স্বাগত জানানোর উৎসবের বাঁশি বেজে উঠবে সবার প্রাণে। শুরু হবে নতুন প্রত্যাশার বছর, কিন্তু যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে? মুছে যাবে সব? না, সবকিছু মুঝে যায় না। ঘটনাবহুল ২০১৪-এর ঘটনার রেশ টেনেই মানুষ এগিয়ে যাবে ২০১৫ সালের মধ্যরাত্রির পথে। বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের পরিক্রমায় বিদায় নিল আরও একটি বছর। মিথ্যার কুহলেকা ভেদ করে সত্য প্রতিষ্ঠিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভূতপূর্ব পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে চিরকালের জন্য আজ হারিয়ে যাচ্ছে ঘটনাবহুল ২০১৪ সাল। বাংলাদেশের ৪৩ বছরের অনেক ইতিহাস বদলে দিয়েছে বিদায়ী বছরটি। সূচনা করেছে জাতীয় জীবনে ও রাজনীতির ইতিহাসে এক অভিনব অধ্যায়ের। গণতন্ত্রকে হত্যা করে অসাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার যে সুগভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল বিদায় বছরের শুরুতে, শেষ পর্যন্ত সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আর ভয়াল নাশকতার পথ পেরিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে নবযাত্রার শুভ সূচনা আর জনমনে শান্তি-স্বস্তি দিয়েই বিদায় নিল ২০১৪ সাল। যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৪ সালের যে প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল, সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে। হয়নি। কিন্তু যা পাওয়া গেছে তাও কম নয়। পুরো দেশ ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার যে সুগভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল বিদায়ী বছরের শুরুতে, এক বছরের ব্যবধানে যেই পর্যায়ে নেই এখন বাংলাদেশ। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। কৃষি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণে বলা যায়, আশা-নিরাশার, আনন্দ-বেদনার দোলাচলে যথেষ্ট বাক্সময় ২০১৪। নতুন বছর ২০১৫ সালের অনেক প্রত্যাশার বীজও বনে গেছে বিদায়ী ২০১৪। দেখতে দেখতে চলে গেল আরেকটি বছর। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বিদায়ী বছরটি কেমন গেল, দেশের সব মানুষের এক জবাব- অসম্ভব এক ক্রান্তিকাল ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছে বিদায়ী বছর ২০১৪। ভয়াল সংঘাত দিয়ে বছরটি শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো বছরটিই কেটেছে শাস্তি, স্বস্তি ও অগ্রগতির মিছিলে। তবে বছরের শুরুর অনেক আগে থেকেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোট যে নারকীয় পৈশাচিক উন্মত্ততায় মেতে উঠেছিল, স্বাধীনতার ৪৩ বছরে রাজনীতির নামে এমন হিংসাত্মক নৃশংস ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেখেনি দেশবাসী। বছরের শুরুতেই পুরো দেশ রীতিমতো প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলেছে। ২০১৪ সালটি কেমন গেল তার সার্বিক পর্যালোচনায় এক কথায় বলা যায়, ভয়াল সহিংসতা ও শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে গণতন্ত্রে নবযাত্রার এক বছর পূর্ণ হলো। বিদায়ী বছরে নিশ্চিত অসাংবিধানিক শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল বাঙালী জাতি। মোটামুটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ রেখেই বিদায় নিল আলোচিত একটি বছর, ২০১৪ সাল। ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশজুড়ে যে ভয়াল নাশকতা, ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা, লাগাতার অবরোধ-হরতালের নামে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে পুরো দেশকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন আদৌ থাকবে কি-না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ় নেতৃত্ব আর শত উস্কানি, শাসানি ও জীবন-সম্পদহানীর হুমকি সবকিছু অগ্রাহ্য করে দেশের মানুষ দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিল। নির্বাচিত সরকার শক্ত হাতে ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংঘাত-সহিংসতা দমন করে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছিল। আক্রান্ত দিশেহারা, বিভ্রান্ত দেশের মানুষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। আর টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সরকারে আসার নতুন ইতিহাসও রচিত হয়েছে বিদায়ী বছরে। অনেক ঘটনা, অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎড়াই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এ বছরটি। আজ রাত পেরোলেই কাল পূর্বকাশে উঠবে যে নতুন সূর্য- সে সূর্য নতুন বছরের। নতুন আশায় বুক বেঁধে আরও একটি নতুন বছরের দিনলিপি পড়ে থাকবে পেছনে। উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়েই মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজী নতুন বছর ২০১৫ সালকে। ইংরেজী পঞ্জিকার সর্বজনীনতায় কাল বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী আনন্দ-উল্লাসে। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ ২০১৫। হ্যাপি নিউইয়ার উচ্চারিত হবে শত কোটি মানুষের কণ্ঠে। বিদায়ী বছরটি প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দোলাচলে নিয়েছে অনেক কিছু। চিরবিদায় নিয়েছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, জাতীয় স্মৃতিসৌধের নির্মাতা মইনুল হোসেন, জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমদসহ দেশের অনেক কৃতী সন্তান। দেশীয়-আন্তর্জাতিক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিদায়ী এই একটি বছরে ছয় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষিত হয়েছে। ছয় জনের বিরুদ্ধেই ঘোষিত হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের রায়। আর এই ছয় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হচ্ছে- আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী, জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার, মোবারক হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও এটিএম আজহারুল ইসলাম। কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্টে মৃত্যুর প্রহর গুনছে শীর্ষ রাজাকার শিরোমণি মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থেকেই মৃত্যুবরণ করেছে একাত্তরের ঘাতক শিরোমণি গোলাম আযম, ঘাতক আবদুল আলীম এবং বিচার চলাকালীন সময়ে মারা গেছেন রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ইউসুফ। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে বাধা থাকবে না একাত্তরের ঘাতক মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের। তাই বিদায়ী বছরটি বাঙালী জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার বছরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করেই বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল এ বছরটি। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে হরতালের নামে ২০১৩ সালের মতোই বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের হাতে নোয়াখালীতে নিহত হয়েছেন এক শিক্ষিকা আর পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে রাজধানীতে দগ্ধ করেছে একই পরিবারের তিনজনকে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে পুনরায় বিএনপি-জামায়াত জোটের এমন ভয়াল ও বীভৎস রূপ দেখে নতুন বছরেও কিছুই শঙ্কিত-উৎকণ্ঠিত দেশের মানুষ। গণতান্ত্রিক রাজনীতির বদলে সহিংসতা রাজনীতির অতীত রূপ আর দেখতে চান না দেশের মানুষ। বছরের শেষ দিন বুধবারও আত্মগোপনে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে। তবে বছরজুড়েই সরকার কঠোর ও হার্ডলাইনে থেকে দেশের মানুষকে শান্তি ও স্বস্তি দিতে সক্ষম হয়েছে। বানচাল করে দিতে পেরেছে অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র। বিদায়ী বছর ২০১৪-কে জাতীয় রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্টের বছর হিসেবেও দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে বিদায়ী বছরে। বিগত বছরগুলোতে ঘৃণিত স্বাধীনতাবিরোধী ও একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে পথ চললেও এখন বিএনপির অবস্থান দেশবাসীর সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ভ-ুল করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছিল বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও বিএনপির বছরজুড়েই সকল কর্মসূচীর অংশই ছিল যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার টার্গেট থেকে। জন্মলগ্ন থেকে মুক্তিযোদ্ধার দল দাবি করলেও বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক জিয়ার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসবিরোধী অসংযত বক্তব্য বিএনপি যে মূলত স্বাধীনতাবিরোধীদেরই দল, এ নিয়ে দেশের মানুষের মনে আর কোন দ্বিধা নেই। বিদায়ী বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব, নিজেদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ আর জনস্বার্থের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতির কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কোন ইস্যুতেই সরকারবিরোধী আন্দোলন তুলতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি শুধু অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বছরজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাস-হত্যাকা- সরকারের অনেক অর্জনকেই ম্লান করে দিয়েছে। তবে ঠিক এক বছর আগে যে চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে বিদায়ী ২০১৪ সালটি শুরু হয়েছিল, নির্বাচনপরবর্তী গত এক বছর মোটামুটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণই ছিল দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। নির্বাচনে না এসে দু’কূল হারানো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পুরো একটি বছর কোন আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি। বছরজুড়েই সরকার পতনের হুঙ্কার দিলেও রাজপথে দেখা মেলেনি বিএনপি ও তাদের দোসর জামায়াতকে। বিদায়ী বছরের সবচেয়ে রাজনৈতিক চমক হচ্ছে-জাতীয় সংসদে এবার বিএনপি-জামায়াতের কোন প্রতিনিধি নেই। বিএনপির পরিবর্তে বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি, আর খালেদা জিয়ার পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেছেন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। রাজনৈতিক অঙ্গনে কেমন গেল এই একটি বছর। এ নিয়ে এখন হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দলই। লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাচ্ছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এক বছরের সালতামামিতে সবার হিসাবের খাতায় উঠে এসেছে একটি তারিখ, তা হলো বিদায়ী বছরের শুরুর ৫ জানুয়ারি। কোন কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব্যর্থ হলে ২৪ জানুয়ারির পর যে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতো তা অসাংবিধানিকভাবে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনাই থাকত বেশি। হয়তবা আবার পুনরুত্থান ঘটত এক/এগারোর। নির্বাচন বানচাল করে এমন অসাংবিধানিক সরকারই চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তথাকথিত কিছু সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা। কিন্তু দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যে সম্ভাবনাকে নস্যাত করে দিয়েছে। বিদায়ী বছরে সেটাই ছিল বড় সার্থকতা। বছর ধরেই বিএনপি-জামায়াত জোট দশম জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম দেখিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবিতে পুরো বছরই ধরনা দিয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কাছে। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। আর পুরো বিশ্বই যে বিদায়ী বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নিয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিদায়ী বছরে বিশ্বের শীর্ষ দুটি আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিও) নির্বাচনে বাংলাদেশের দুই প্রার্থী স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে ১৮৮টি দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। শুধু দেশেই নয়, দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা এবং দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে এখন সারাবিশ্বের নেতৃত্বের আসনে বসতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছেন তিনি। বিদায়ী বছরে উন্নয়নের এক অসীম উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর বিদায়ী বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এক নবযুগেও প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে সৃষ্ট ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীও জানেন। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবে রূপ দিতে দেয়নি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার। সকল রক্তচক্ষু ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মার বুকে নির্মিত হচ্ছে বহুল আলোচিত সুবিশাল পদ্মা সেতু। উপরে সড়ক আর নিচে রেল-অপূর্ব নকশায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বিদায়ী বছরে অনেক দূরেই এগিয়েছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে-২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত শুরু হবে, খুলে যাবে স্বপ্নের দুয়ার। বিদায়ী বছরে নতুন রূপে ও আঙ্গিকে শুরু চলছে দশম জাতীয় সংসদ। বদলে দিয়েছে ৪৩ বছরের অনেক ইতিহাসও। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এবার বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি। খালেদা জিয়ার বদলে বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ। সরকারের অংশ হয়ে জাতীয় পার্টির তিন নেতাও হয়েছেন মন্ত্রী। এমনকি দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও হয়েছেন। আর একটি বছরে সংসদীয় গণতন্ত্রেও এসেছে নানা পরিবর্তন। অতীতের মতো শুধু বিরোধিতার স্বার্থে সরকারের কাছে বিরোধিতা করছে না জাতীয় পার্টি। সংসদে নেই অতীতের মতো কুৎসা, কুরুচিপূর্ণ আপত্তির মন্তব্য, কাদা ছোড়াছুড়ি, ফাইল ছোড়াছঁড়ি বা অসংসদীয় আচরণ। সরকারের অনেক কাজের যেমন বিরোধী দল হিসেবে সমালোচনা হচ্ছে, তেমনি ভাল কাজগুলোকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এমনকি বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনতে সংবিধান সংশোধনী পাশের সময় পূর্ণ সমর্থন দিয়ে সরকারের পক্ষেই ভোট দিয়েছে বিরোধী দলও। বিরোধী দলের আসন হারিয়ে বছরজুড়েই বেকায়দায় ছিল বিএনপি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু আর সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে যুদ্ধাপরাধী দল জাতীয় পার্টি পড়েছে অস্তিত্বের সঙ্কটে। বিদায়ী বছরজুড়েই সরকার পতনের নানা হুমকি ধমকি দেয়া হলেও বিএনপির দেখা মেলেনি রাজপথে।
×