ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ

এম শাহজাহান ॥ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্ধুপ্রতীম এই রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারসহ বাণিজ্য ঘাটতি দূর করারও পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী কলকতার দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে আয়োজিত ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এই মেলা শেষ না হতেই ভারতে আরেকটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া রাষ্ট্রপতিও তাঁর সফরকালে অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীসহ দেশটির উচ্চ পর্যায়ের সরকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্রগুলো বলছে, এই তিন জনের সফরেই এবার ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে বন্দর অবকাঠামো, রেল লিংক উন্নয়ন ও বিমান রুট চালু হতে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকার পরও ভারতের বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না এদেশের রফতানিকারকরা। শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও গত অর্থবছরে ভারত থেকে রফতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে অনেক। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সূত্রমতে, ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাণিজ্যিক বাধা দূরীকরণ, পণ্য রফতানিতে বিএসটিআই সার্টিফিকেট ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, পোশাক রফতানির বাধা দূরীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, পোর্ট সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ, লিলিপুট কিডসওয়্যারের পাওনা দ্রুত ফেরত, বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের উন্নয়ন, কার্গো হ্যান্ডেলিং পদ্ধতির উন্নয়ন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার, প্যাসেঞ্জার এ্যান্ড কার্গোভেহিক্যাল চুক্তি, জুট মার্কেট সম্প্রসারণসহ অন্তত ২০টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে ট্রানজিট সুবিধা চাইতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে নেয়া পদক্ষেপগুলোর অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে বর্তমানে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভুটান ও নেপালে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সরাসরি পরিবহন ব্যবস্থা নেই। কারণ নেপালে পণ্য রফতানি করতে হলে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে ভুটানের ক্ষেত্রেও। ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়ার উদ্যোগ নিতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে শুরু থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভারসাম্য বরাবরই ভারতের অনুকূলে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে যাতে ভারতেও আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পেতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এছাড়া তিস্তার পানিবণ্টন, স্থলসীমানা চুক্তি এবং মোটরভেহিক্যালস চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একই সঙ্গে আছে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং বিসিআইএম ইস্যু। জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে ১৬টি প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। প্রস্তাবগুলো কার্যকর ও বাস্তবায়নে ১শ’ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে সড়ক, রেল, নৌ এবং বিদ্যুতখাত উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোটরভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট করতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমান ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে। কিন্তু তাদের ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশ চাইলে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই বিদ্যুত এখনই আমদানি করতে পারে। এদিকে, ভারতের এই প্রস্তাব গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করছে সরকার। এছাড়া দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে মোটরভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কনটেইনার ট্রেন সার্ভিস চালুকরণ, উভয়দেশের মধ্যে কোস্টাল শিপিং দ্রুত চালুর লক্ষ্যে এগ্রিমেন্ট ও সংশ্লিষ্ট প্রটোকল চূড়ান্ত করার তাগিদ দেয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তে নতুন বর্ডার স্থাপন, বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামো ও সেবার মান উন্নয়ন, বিএসটিআই এবং বিআইস-এর মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি, বাংলাদেশের সেনসেটিভ তালিকা থেকে ভারতের অনুরোধ তালিকার ২২৫টি পণ্য বাদ দেয়া, বিএসটিআই ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটসমূহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রহণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার, ভারতের পোশাক আমদানিক প্রতিষ্ঠান লিলিপুট কিডস ওয়্যার ইস্যু, ভারতের বিভিন্ন স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী রফতানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা। রফতানি বাড়লে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে ॥ রফতানি বাড়ানো গেলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিতে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-শুল্ক ও অশুল্কজনিত সমস্যা, কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।
×